১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ। পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার ম্যাচ। প্রথমে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকা ২১২ রানের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছিল। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে পাকিস্তানের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ৩৬ ওভারে ১৯৪ রান।
৩১ তম ওভারে ক্রিজে তখন অধিনায়ক ইমরান খানের সাথে তরুণ ইনজামাম উল হক। পাকিস্তানের সব আশা তখন ইনজামামের উপর। ব্রায়ান ম্যাকমিলানের বলটা ইনজামামের ব্যাটে মিস হিট হয়ে চলে গেল পয়েন্টের দিকে। পড়িমরি করে রান নিতে শুরু করলেন ইনজামাম। ক্রিজের অপরপ্রান্তে তখন ইমরান রান না নিয়ে ফেরত যেতে ইশারা করলেন ইনজি-কে।
সেই নির্দেশ পেয়ে ইনজামাম তখন ফের ছুটতে লাগলেন স্ট্রাইকিং এন্ডের উদ্দেশ্যে। অপর দিকে পয়েন্ট থেকে ছেলেটি বল নিয়ে এসে সোজা উইকেটে থ্রো না করে দৌড়ে এসে লাফ দিয়ে উড়ন্ত অবস্থাতেই ভেঙে দিলেন তিনটি স্ট্যাম্প। ততক্ষণে ক্যারিবিয়ান আম্পায়ার স্টিভ বাকনর আঙুল তুলে আউটের নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন।
হতচকিত হয়ে গেল ক্রিকেট বিশ্ব। ক্রিকেট দুনিয়ায় এক নতুন বিপ্লবের সূচনা হল এই ছেলেটির হাত ধরে। ফিল্ডিং বিপ্লবের নবজাগরণের সূচনা করেছিলেন এই ছেলেটি, উহু নামটাই বলা হয়নি। যদিও নামটা সকলেরই জানা – জন্টি রোডস। অন্য যেকোনো ফিল্ডারই হয়তো হরহামেশাই ফিল্ডিং মিস করতেন, কিন্তু সেটা জন্টি রোডসের ক্ষেত্রে কখনোই খাটেনি।
কোনো ক্রিকেটার কে দলে জায়গা পেতে গেলে ব্যাটিং কিংবা বোলিং অথবা উইকেট কিপিং এ দক্ষতা থাকতে হয়। শুধু ফিল্ডিং এর জোরে যে দলে টিকে থাকা যায় তার দেখিয়েছিলেন তিনি। প্রথম ২৫ টি ওয়ানডে ম্যাচে তার ব্যাটিং অ্যাভারেজ ছিল ২৫-এরও কম। কিন্তু এই ব্যাটিং এর সীমাবদ্ধতা ঢেকে দিতেন তার অসামান্য ফিল্ডিং দিয়ে।
দেখতে যথেষ্ট সুপুরুষ ছিলেন। চেষ্টা করলে হয়তো হলিউডের সিনেমায় সুযোগ ও পেয়ে যেতেন। কিন্তু তিনি বেছে নিয়েছিলেন ক্রিকেট কে। জন্ম দিয়েছিলেন এক নতুন দিগন্তের। যে নতুন দিগন্তে তাকে স্রষ্টা হিসেবে ধরা হয়।
কালের নিয়মে আমাদের পছন্দের পরিবর্তন হয়। আশির দশকে যেমন ব্যাটসম্যানদের আইডল ছিলেন সুনীল গাভাস্কার। ৯০ কিংবা ২০০০ এর দশকে যেমন ব্যাটসম্যানদের বেঞ্চমার্ক ঠিক হতো শচীন টেন্ডুলকারকে দেখে। আবার ২১ শতকে বিরাট কোহলি সেই জায়গায় নিজেকে উন্নীত করেছেন। কিন্তু, সেই ৯০ এর দশক থেকেই আজ পর্যন্ত ফিল্ডিং ডিপার্টমেন্ট এর প্রিন্সিপাল হিসাবে জন্টি রোডস ছাড়া অন্য কারও নাম ক্রিকেট বিশ্ব মনে করতে পারে না। ফিল্ডিংয়ের অবিসংবাদিত সেরা তিনিই!