চড়া মূল্য, কড়া দর

অপেক্ষার প্রহর পেরিয়ে অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ক্রিকেট সমর্থকদের এক বহু প্রত্যাশিত দিন ছিলো ১১ ফেব্রুয়ারি শনিবার। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল, ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট দুনিয়ায় সবচেয়ে সফলতম আয়োজন। প্রায় এক দশক বাদে অনুষ্ঠিত হলো মেগা অকশন। নিলামের আগে সর্বোচ্চ চারজন করে খেলোয়াড় ধরে রাখার সুযোগ ছিলো দলগুলোর। এতে নতুন করে দলগুলো সুযোগ পেলো নিজেদের স্কোয়াডটাকে ঢেলে সাজানোর।

নতুন দুই দলের সংযুক্তি মেগা নিলামের আগ্রহ যেন বহুগুণে বাড়িয়েছে। তাইতো নিজেদের ধরে রাখা খেলোয়াড়দের পাশাপাশি পূর্ণ ২৫ সদস্যের দল সাজাতে নতুন করে পরিকল্পনার ছক আঁকতে হয় দলগুলোকে। নিলামের মূল আকর্ষণ ছিলো কোন খেলোয়াড়ের দাম ওঠে সবচেয়ে বেশি।

হয়ত সেই আগ্রহ নিয়ে বসে ছিলেন আইপিএল ভক্ত-সমর্থকেরা। সেজন্য অবশ্য খুব বেশি একটা অপেক্ষা করতে হয়নি ভক্তদের। দিনের শুরুতেই হাড্ডাহাড্ডি অর্থের লড়াই উপহার দেয় আইপিএলের মেগা অকশন।

ভারতীয় সম্ভাবনাময়ী তরুণ শ্রেয়াস আইয়ারকে ঘিরে হয় দিনের প্রথম বড় অর্থ লড়াই। লড়াইয়ের সমাপ্তি ঘটে ১২.২৫ কোটি রুপিতে। একজন নতুন নাইট হিসেবেই কলকাতা নাইট রাইডার্সে যোগ দিলেন শ্রেয়াস আইয়ার। মাত্র দুই কোটি রুপি বেস প্রাইজ থেকে শ্রেয়াসের মূল্য বেড়ে যায় প্রায় ছয় গুণ। নিশ্চয়ই শ্রেয়াস মুখিয়ে থাকবেন নিজের সেরাটা দিয়ে দলের শিরোপা জয়ের সম্মুখ অংশীদার হতে। তাঁর কাছ থেকে হয়ত দল সেটাই প্রত্যাশা করে।

শ্রেয়াসের নিলাম শেষে খানিকটা স্থিমিত হয়ে যায় নিলাম ঘর। উত্তেজনা আবার বাড়ে হার্শাল প্যাটেলের নিলামে। তাঁকে আবার দলে ভেড়াতে বদ্ধপরিকর ছিলো রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। তাঁকে দলে নিতে নিজেদের অর্থের অধিকাংশই খরচ করতে প্রস্তুত ছিলো হয়ত ব্যাঙ্গালুরু।

তবে, সে পরিস্থিতি আসেনি। ১০.৭৫ কোটি রুপিতেই আগের আসরের সেরা পারফর্মারকে আবার ঘরে ফেরায় ব্যাঙ্গালুরু। তখন অবধি ভারতীয় খেলোয়াড়দেরই কেবল উঠেছিলো চড়া দাম।

কিন্তু এরপর শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে নিয়ে রীতিমত যুদ্ধ চলে ব্যাঙ্গালুরুর সেই নিলাম ঘরে। আরেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যায়। হাসারাঙ্গার নিলাম চলাকালীন সময়ে নিলাম পরিচালনাকারি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। থেমে যায় সব।

তাঁকে দ্রুত স্থানান্তরিত করা হয় হাসপাতালে। এরপর নিলাম পরিচালনার দায়িত্ব তুলে নেন চারু শর্মা। তাঁদের তত্ত্বাবধানে ১০ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে হাসারাঙ্গার আইপিএল ঠিকানা হয় রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। যথারীতি চলতে থাকে নিলাম।

প্রত্যাশিত এক ঘটনা ঘটে ঈশান কিষাণের নিলামে। সবাই হয়ত প্রত্যাশা করছিলেন বেশ চড়া দামে বিক্রি হবেন তরুণ এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। তাই ঘটলো। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স নাছোড়বান্দার মতো বিড করে যেতেই থাকেন কিষাণের জন্যে। শেষমেশ তাঁদের সফলতা আসে। ১৫ কোটি ২৫ লাখ রুপিতে ঘরের ছেলে ঘরে ফেরে। দিনের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় হিসেবেই ঘরে ফিরলেন ঈশান কিষাণ।

দিনের তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে চতুর্থ সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারকুটে ব্যাটার নিকোলাস পুরান। ১০.৭৫ কোটিতে তাঁকে দলে নেয় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। নিলামের শুরু থেকেই নিশ্চুপ থাকা হায়দ্রাবাদ মাঝামাঝি সময়ে লড়াইয়ে যোগ দিয়েই বাগিয়ে নেন নিকোলাস পুরানকে। ভারতীয় খেলোয়াড়দের চাহিদা ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর কাছে সবসময়ই খুব বেশি। তারই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দাম ১৪ কোটি রুপিতে বিক্রি হন দীপক চাহার।

গেলো মৌসুমে চেন্নাই সুপার কিংসের শিরোপা জয়ে অন্যতম সেনানী ছিলেন চাহার। নিজেদের অন্যতম সেরা সেনানীকে হাতছাড়া করতে নারাজ চেন্নাই। দীপক চাহার ফিরলেন আবারো হলুদ পতাকাতলে। তারপরের দুই নিলামেই পরপর দেখা মেলে দশ কোটির বিডের।

ভারতীয় পেস বোলার প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা ও নিউজিল্যান্ডের অলরাউন্ডার লকি ফার্গুসনকে সমান ১০ কোটি রুপিতে দলে নেন যথাক্রমে রাজস্থান রয়েলস ও নবাগত গুজরাট টাইটান্স।

শার্দুল ঠাকুরকে ঘিরে আবারো উত্তেজনা ছড়ায় নিলাম টেবিলে। একাধিক ফ্রাঞ্চাইজির ডাকের মাঝে দিল্লি ক্যাপিটালস নিজেদের বোলিং আক্রমণের ধার বাড়াতে ১০ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে দলে ভেড়ান শার্দুল ঠাকুরকে।

শার্দুলকে নিলামের প্রথম দিনের শেষ দামি খেলোয়াড় হিসেবেই দলে ভেড়ায় দিল্লী। চেন্নাই সুপার কিংসের এই তুরুপের তাস এখন নতুন জার্সি গায়ে জড়িয়ে মাঠে নামবেন।

দ্বিতীয় দিনে চড়া দামে খেলোয়াড় বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবুও চড়া দামে খেলোয়াড় বিক্রির সম্ভাবনা যে একেবারেই নেই তা কিন্তু নয়। তবে ১০কোটি রুপির মাইলফলক পেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সে বিবেচনায় আইপিএল এর ২০২২ মেগা অকশনে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকে বিক্রিত খেলোয়াড়দের তালিকাটা আরেকটু লম্বা হবে কি না তা জানা যাবে সময় হলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link