ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম সংস্করণ টি-টোয়েন্টি। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে চার-ছক্কার মার বেশি দেখা যায়। এখানে বাজে বলকে যেমন সীমানা ছাড়া করতে চায়; তেমনি ভালো বলকেও কোনো ব্যাটসম্যান ছাড় দিতে চায় না। বিশ ওভারের ম্যাচে আলোটা থাকে মূলত ব্যাটসম্যানের উপর।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রতিটি বলই গুরুত্বপূর্ণ। বোলারদেরও তাই হতে হয় সাবধানী। আচ্ছা, সবচেয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে একজন বোলারের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ কী হতে পারে? নিশ্চয়ই মেইডেন ওভার করা!
সম্ভবত বলাটা ভুল হল না। একজন বোলার চাইবে, রান আটকাতে; তাঁর প্রতিটি বল ডট দিতে। এটা তো আর সবসময় সম্ভব না। মাঝেমধ্যে এরকম অসম্ভবকে সম্ভবও করেছেন অনেকেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমরা অনেক বোলারকে দেখেছি মেইডেন ওভার করতে। তাঁদের নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।
- জাসপ্রিত বুমরাহ (ভারত)
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকরতম বোলার। তাঁর ওভারে ১০ এর উপরে রান করা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ গুলার একটা! ৫০ টা টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। ১৭৯ ওভার বোলিং করেছেন। রান দিয়েছেন ১১৯৫ রান। ওভার প্রতি রান দিয়েছেন মাত্র ৬.৬৬!
তাঁর ঝুলিতে আছে ৫৯ টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি উইকেট। আশ্চর্য জনক হলেও সত্যি, এখনো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চার উইকেট কিংবা পাঁচ উইকেটের দেখা পাননি বুমরাহ। ইনিংসে তাঁর সেরা বোলিং ১১ রানে তিন উইকেট। তবে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর চেয়ে বেশি মেডেন ওভার নেই কারও। সর্বোচ্চ সাতটি মেইডেন ওভার আছে তাঁর।
- নুয়ান কুলাসেকারা (শ্রীলঙ্কা)
শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বোলারের একজন ছিলেন। দলের বিপদে ব্রেক থ্রু এনে দিতে যার ছিল জুড়ি মেলা ভার। বছর দশেকের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৫৮ টা ম্যাচ খেলেছেন। ২০৫ ওভার হাত ঘুরিয়েছেন। রান দিয়েছেন ১৫৩০। ইকোনোমি ৭.৪৫! মিতব্যয়ী বোলিং করতেন। ৬৬ টা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি উইকেটের মালিক এই লঙ্কান। চার উইকেট পেয়েছেন দুই বার। মেডেন ওভার করে দেখিয়েছেন ছয় বার।
- হরভজন সিং (ভারত)
তাঁর সময়ের সেরা স্পিনারদের একজন ছিলেন। খুব বেশি টি-টোয়েন্টি তিনি খেলেননি। যে ক’টি ম্যাচ খেলেছেন, তাতে যা করে দেখিয়েছেন। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তা অনেকে পারেননি। মাত্র ২৮ টা ম্যাচ খেলেছেন। ১০২ ওভার বল করেছেন। এর মধ্যে পাঁচটা মেইডেন ওভার করেছেন। রান দেওয়াতেও ছিলেন কিপটে। ৬.২০ ইকোনোমিতে দিয়েছেন মাত্র ৬৩৩ রান। উইকেটও তেমন বেশি পান নাই। মাত্র ২৫ উইকেট। চার উইকেট নিয়েছেন একবার।
- ট্রেন্ট জনসন (আয়ারল্যান্ড)
এই আইরিশ ক্রিকেটার ছিলেন ব্যাট ও বলে খুবই কার্য্যকর। বছর পাঁচেকের ক্যারিয়ারে ৩০ টার মতো আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। বল করেছেন ৯৯ ওভার। মেডেন নিয়েছেন পাঁচটা। উইকেট নিয়েছেন ৩২ টা; ৬৩৬ রান খরচ করে।
- মোহাম্মদ নবী (আফগানিস্তান)
বর্তমান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার। ব্যাটে-বলে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আছে তাঁর। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ওভার বোলিং করা বোলারের একজন। ম্যাচ খেলেছেন ৭৮ টা।এই অলরাউন্ডার ২৬০ ওভার বল করেছেন। মেডেন ওভার করেছেন পাঁচটা। ৬৯টা উইকেট নিতে খরচ করেছেন প্রায় ১৮৭১ রান। ইনিংসে চার উইকেট পেয়েছেন তিন বার।
- মোহাম্মদ আমির (পাকিস্তান)
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মোহাম্মদ আমির যেকোনো দলে জায়গা পেতে সক্ষম। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সবচেয়ে কার্যকরী একজন ক্রিকেটার তিনি। ৫০ ম্যাচে প্রায় ১৮০ ওভারের মতো বল করেছেন। মেডেন ওভার করেছেন পাঁচটা। উইকেট নিয়েছেন ৫৯ টা। ইকোনোমি মাত্র ৭.০২!
- অজন্তা মেন্ডিস (শ্রীলঙ্কা)
অনেক সম্ভাবনা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখছিলেন। বেশিদিন ঠিকে থাকতে পারেননি। তবে, তাঁর কিছু কিছু পারফরমেন্স এখনো চোখে লেগে আছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। মাত্র ৩৯ টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। ১৪৭ ওভার বল করেছেন। এর মধ্যে পাঁচটা মেইডেন ওভার। ৬৬ টা উইকেটও আছে তাঁর। পাঁচ উইকেট পেয়েছেন দু’বার; চার উইকেট তিন বার।
- মোহাম্মদ নাভিদ (সংযুক্ত আরব আমিরাত)
সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই ক্রিকেটারের টি-টোয়েন্টিতে পাঁচটা মেইডেন ওভার করার রেকর্ড আছে। ৩১ ম্যাচে প্রায় ১১৫ ওভার বল করতে দেখা গেছে তাঁকে। উইকেট নিয়েছেন ৩৭ টা।
- সুলতান আহমেদ (সংযুক্ত আরব আমিরাত)
শুধু নাভিদ নয়, আমিরাতের আরেক ক্রিকেটার সুলতানও মেডেন ওভার করেছেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে। নাভিদের সমান পাঁচটা মেইডেন ওভার আছে তাঁর। ২২ ম্যাচে মাত্র ৭২ ওভার হাত ঘুরিয়ে। চার উইকেটও পেয়েছেন একবার।
- শহীদ আফ্রিদি (পাকিস্তান)
টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন অনেক আগে। বয়স ৪১ ছুঁইছুঁই। কিন্তু, বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এখনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ গুলা নিয়মিত খেলে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিতে ভালোই সফল ছিলেন এই পাকিস্তানি অলরাউন্ডার।
৯৯ ম্যাচে ৩৬১ ওভার হাত ঘুরিয়েছেন। তাঁর চেয়ে বেশি ওভার সম্ভবত কেউ করতে পারেননি। সে তুলনায় তাঁর মেডেন ওভারের সংখ্যা কমই বলা যায়। মাত্র চারটা। সবসময় মিতব্যয়ী বোলিং করতেন। ৬.৬৩ ইকোনোমিতে নিয়েছেন ৯৮ উইকেট। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সেরা তিন উইকেট শিকারীর একজন তিনি।
- আব্দুর রাজ্জাক (বাংলাদেশ)
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা স্পিনার তিনি। তিনি ৩৪ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পেয়েছেন ৪৪ টি উইকেট। মেইডেন নিয়েছেন চারটি। টি-টোয়েন্টিতে পারফরম্যান্সের সুবাদে তিনি এক আসরের জন্য আইপিএলে খেলেছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু দলের হয়ে।
টি-টোয়েন্টিতে আরো বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার আছেন যারা আন্তর্জাতিক ময়দানে চারটি করে মেইডেন নিয়েছেন। এই তালিকায় আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্যামুয়েল বদ্রি, ভারতের রবীন্দ্র জাদেজা, ইংল্যান্ডের গ্রায়েম সোয়ান, শ্রীলঙ্কার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, জিম্বাবুয়ের রেমন্ড প্রাইসরা।