পারফরম্যান্স ক্রিকেটের মুখ্য এক বিষয়। চুন থেকে পান খসলেই যেখানে বাদ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রখর সেখানে পারফর্ম না করে একটা আন্তর্জাতিক দলে টিকে থাকা বড্ড কঠিন।
ক্রিকেট ইতিহাসের খুব অল্প সংখ্যক খেলোয়াড় নিজেদের পারফর্মেন্সের জোরে দলে নিজের জায়গাটা থিতু করতে পেরেছিলেন শক্তপোক্তভাবেই। সেই সাথে লম্বা করেছিলেন নিজেদের ক্রিকেট ক্যারিয়ার। পারর্ফম করেই সর্বাধিক সিরিজ খেলা খেলোয়াড়দের নিজেই আজকের আলোচনা। কাকতালীয় ভাবে তালিকার প্রথম ১০ জনের সবাই দক্ষিণ এশিয়ান।
- শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একশটি শতক হাঁকানোর অনন্য রেকর্ডের মালিক ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটার শচীন টেন্ডুলকার। তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনটা প্রায় দুই যুগের। এই দুই যুগ সময়ে দল থেকে বাদ পড়ার নজির নেই বললেই চলে।
এই সময়ে শচীন টেন্ডুলকার সর্বাধিক ১৮৩টি সিরিজ খেলেছেন। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাট মিলিয়ে তিনি ম্যাচ খেলেছেন ৬৬৪টি। এর মধ্যে থেকে ২০টি সিরিজ সেরার পুরষ্কার জিতেছেন শচীন টেন্ডুলকার।
- মাহেলা জয়াবর্ধনে (শ্রীলঙ্কা)
শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের অন্যতম কিংবদন্তি মাহেলা জয়াবর্ধনে। তিনি ছিলেন একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে লংকানদের ব্যাটির অর্ডারের দূর্গ। নিজে পারফর্মেন্স করেছেন সর্বদা দলের জন্যে।
তাইতো দল তাঁকে প্রতিদান দিয়েছে। জয়াবর্ধনে তাঁর ক্যারিয়ারে ১৮০টি সিরিজ খেলেছেন ক্রিকেটের সবগুলো ফরম্যাট মিলিয়ে। যেখানে ম্যাচের সংখ্যা ছিলো ৬৫২টি। এছাড়াও নিজের ভাল পারফর্মেন্সের বদৌলতে তিনি সাতবার হয়েছিলেন সিরিজ সেরা।
- সানাথ জয়াসুরিয়া (শ্রীলঙ্কা)
শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের এক স্বর্ণালী যুগের আরেক নেপথ্যের কারিগর সানাথ জয়াসুরিয়া। বা-হাতি স্পিন বোলিং সাথে ওপেনিং ব্যাটিং সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন কমপ্লিট প্যাকেজ। তিনিও শচীন টেন্ডুলকারের মতো প্রায় দুই যুগ কাটিয়েছেন ক্রিকেট মাঠে।
এ সময়ে ১৭৬টি সিরিজ খেলে তাঁর মধ্যে থেকে ১৩টি সিরিজ সেরার পুরষ্কার নিজের করে নিয়েছিলেন সানাথ জয়াসুরিয়া। অলরাউন্ডার সানাথ জয়াসুরিয়া তাঁর ক্যারিয়ারের সব ফরম্যাট মিলিয়ে ম্যাচ খেলেছেন ৫৮৬টি।
- কুমার সাঙ্গাকারা (শ্রীলঙ্কা)
সর্বাধিক সংখ্যক সিরিজ খেলা আরো একজন লংকান ক্রিকেটার হচ্ছেন কুমার সাঙ্গাকারা। এই উইকেট রক্ষক ব্যাটার তাঁর ক্যারিয়ারে ৫৯৪টি ম্যাচ খেলেছেন। সিরিজের হিসেবে সংখ্যাটা ১৬৭।
উইকেটের পেছনে সদা সচেষ্ট থাকা সাঙ্গাকারার ব্যাটটাও চলতো আপন গতিতে সেই সাথে ছিলো নিয়মিত। তাঁর পারফর্মেন্স তাঁকে ১০টি সিরিজ সেরার পুরষ্কার জিতিয়েছে পনেরো বছরের ক্যারিয়ারে।
- শহীদ আফ্রিদি (পাকিস্তান)
পাকিস্তানের সাবেক অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি ছিলেন দলের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশেষ করে সাদা বলের ক্রিকেটে। তাঁর ঝড়ো ক্যামিও গুলো ছাড়াও তাঁর লেগ স্পিন ছিলো বেশ কার্যকরী।
সেই সুবাদে আফ্রিদি সুযোগ পেয়েছিলেন পাকিস্তানের হয়ে ১৬৪ সিরিজ খেলার। যার মধ্যে থেকে সাতবার তিনি হয়েছেন সিরিজ সেরা খেলোয়াড়। ক্যারিয়ারে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে আফ্রিদি অবসর অবধি ম্যাচ খেলেছেন মোট ৫২৪টি।
- মুত্তিয়া মুরালিধরন (শ্রীলঙ্কা)
মুত্তিয়া মুরালিধরন আরো একজন লঙ্কান কিংবদন্তি যিনি কিনা তাঁর জীবনের একটা লম্বা সময় ধরে খেলেছেন ক্রিকেট। সেই ১৯৯২ থেকে ২০১১ অবধি তিনি ছিলেন ক্রিকেট অঙ্গনের নিয়মিত মুখ। এ দীর্ঘ সময়ে তিনি ১৫৫টি সিরিজ খেলেছেন। যেখানে ম্যাচের সংখ্যা ছিলো ৪৯৫টি।
ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা টেস্ট বোলারদের একজন মুরালিধরন বল হাতে কতবার যে প্রতিপক্ষের স্বপ্ন ভেঙেছেন তাঁর হিসেব হতে পারে সিরিজ সেরার পুরষ্কার। ১১ বার সিরিজ সেরা হয়েছেন যার সবগুলোই হয়েছেন টেস্ট সিরিজে।
- শোয়েব মালিক (পাকিস্তান)
সেই ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিলো শোয়েব মালিকের। সেই থেকে শুরু করে এখন অবধি ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন মালিক। এই দীর্ঘ সময়ে সাত বার হয়েছিলেন সিরিজ সেরা। ১৫২টি সিরিজ খেলা শোয়েব মালিক পাকিস্তান ক্রিকেটের একজন আস্থার প্রতীক।
৪৪৬টি ম্যাচ এখন অবধি খেলেছেন মালিক সবগুলো ফরম্যাট মিলিয়ে। এখনও টি-টোয়েন্টি খেলে যাওয়া শোয়েব মালিকের নিশ্চয়ই এই পরিসংখ্যানে নতুন ট্যালি যুক্ত করার সুযোগ রয়েছে।
- মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত)
শোয়েব মালিকের সমান সংখ্যক সিরিজ খেলেছেন ভারত তথা বিশ্বক্রিকেটের অন্যতম সফল অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। নিজের পারফর্মেন্স ছাড়াও ক্রিকেটের অগাধ জ্ঞানে দলকে বহুবার জিতিয়েছেন ম্যাচ কিংবা সিরিজ।
পারফর্মেন্সের স্বীকৃতি হিসেবে সাতবার তিনি হয়েছিলেন সিরিজ সেরা। তাছাড়া ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ভারতের হয়ে ৫৩৮ ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।
- মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের ভরসার আরেক নাম মুশফিকুর রহিম। তিনি তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিং দিয়ে বহুবার বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছেন জয়ের বন্দরে। পুরো সিরিজ জুড়েই তিনি বহুবার পারফর্ম করেছেন। ফলশ্রুতিতে নিজের ক্যারিয়ারে পাঁচবার হয়েছিলেন সিরিজ সেরা।
একটা দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ দলে থাকা মুশফিক ১৫২টি সিরিজ খেলার পাশাপাশি বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা খচিত জার্সি গায়ে ক্রিকেট ময়দানে নেমেছিলেন ৪০৪টি ম্যাচ খেলতে। এখনই তিন ফরম্যাট খেলে যাওয়া মুশফিকুর রহিমের কাছে নিশ্চয়ই সমর্থকেরা প্রত্যাশা করেন তিনি নিজের পরিসংখ্যানের উন্নতি ঘটাবেন।
- তিলকারত্নে দিলশান (শ্রীলঙ্কা)
লঙ্কান ক্রিকেটের স্বর্ণালী যুগের ক্রিকেটার তিলকারত্নে দিলশান। সে সময় লংকানদের বিশ্ব ক্রিকেট বেশ সমীহ করতো। করবেই বা না কেন দিলশান, জয়াসুরিয়া, সাঙ্গাকারা, মুরালিধরনদের বিপক্ষে খেলাটাও তো চাট্টিখানি কথা নয়।
এত এত তারকাদের ভীরে দিলশানও ছিলেন জাতীয় দলে অনড়। তিনি সর্বোমোট ১৪৮টি সিরিজ খেলেছেন। এর মধ্যে থেকে দশবার তিনি হয়েছিলেন সিরিজ সেরা। তাছাড়া এই সব সিরিজে খেলা তাঁর ম্যাচ সংখ্যা ৪৯৭টি।