৪১ বছর পর

২০১০ কমনওয়েলথ গেমসের ফাইনাল তারা অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৮-০ গোলে হেরে রৌপ্য পদক পায়, যা ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পরাজয়। অনেকদিন ধরেই ভারত তাদের গৌরবান্বিত অতীতের কাছে ফিরে যেতে চাইছে। হয়ত এই অলিম্পিক ব্রোঞ্জ ভারতের হকির জন্যে ধীরে ধীরে আগের সোনালী সময় ফিরিয়ে আনবে।

৪১ বছর পর ভারত অলিম্পিক হকিতে কোনো পদক জিতেছে। হ্যাঁ, ভারত এবারের অলিম্পিক হকিতে জার্মানিকে ৫-৪ গোলে হারিয়ে ব্রোঞ্জ পদক নিশ্চিত করল। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত অনেক খেলাতেই বেশ ভাল করছে। কিন্তু শুধু হকিতে ব্রোঞ্জ জিতার ঘটনাই কেন বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে বড় খবর হয়ে উঠল?

এই ভারত যে হকির অলিম্পিক ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দল তা আমরা অনেকেই জানি না। ৮টি স্বর্ণপদক, ১টি রৌপ্য, ও ৩টি ব্রোঞ্জ নিয়ে ভারতের সবচেয়ে বেশি অর্জন এই হকি থেকেই। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হলো ভারত তাদের প্রথম ৬টি স্বর্ণই টানা অর্জন করেছে।

১৯২৮ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত ভারতের হকি দলের জন্যে স্বর্ণালী সময় ছিল। প্রথম ৩টি স্বর্ণপদক তারা জিতে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া নামে। অর্থাৎ তখনো অখণ্ড ভারত ছিল। জয় পাল সিং মুন্ডা, কিংবদন্তি ধ্যান চাঁদ, রাম সিং দের নিয়ে তৈরী ব্রিটিশ ব্রিটিশ ভারত ১৯২৮, ৩২, ও ৩৬ অলিম্পিকে টানা ৩টি স্বর্ণপদক জিতে। এবং সবচেয়ে আশ্চর্য্যজনক বিষয় হলো এই ৩টি অলিম্পিকে তারা মাত্র তিনটি গোল হজম করেছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪০ ও ৪৪ সালের অলিম্পিক স্থগিত হয়। এরপর ১৯৪৮ সালে স্বাধীন ভারত ৪র্থবারের মত স্বর্ণ জিতে। এবং সেই ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ কারা ছিল? গ্রেট ব্রিটেন! এক বছর আগেই যাদের থেকে ভারত পাকিস্তান স্বাধীন হয়। সেই ম্যাচে ভারত ৪-০ গোলে জয়লাভ করে। এবং এখনো অনেক ভারতীয় বিশ্লেষক সেই ম্যাচকে ভারতের ক্রীড়াক্ষেত্রে সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।

১৯৫২ এর ফাইনালে নেদারল্যান্ডকে ৬-১ গোলে হারানোর ম্যাচে বালবির সিং এর ৫ গোল করার রেকর্ডটি এখনো অলিম্পিক ফাইনালে কোনো খেলোয়াড়ের সবচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ড হয়ে আছে। বর্তমানে যে যুক্তরাষ্ট্র হকি র‍্যাংকিং এ শীর্ষে, সেই যুক্তরাষ্ট্রকে ৫৬ অলিম্পিকের গ্রুপ পর্বে ১৬-০ গোলে হারায়! এবং ফাইনালে তারা প্রথমবারের মত সে সময়ের অন্যতম শক্তিশালী দল পাকিস্তানকে প্রথমবারের মত পায় শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলে জিতে নেয়।

১৯৫৮ এশিয়া কাপ হকিতে আবার ভারত পাকিস্তান মুখোমুখি হয়। সেই ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হলেও গড় হিসাবে পরবর্তীতে পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন হয়। এবং প্রথমবারের মত ভারত কোনো প্রতিযোগিতায় রানার্স আপ হয়। ১৯৬০ সালে প্রথমবারের মত ভারত অলিম্পিকে কোনো ম্যাচে হারে। ফাইনালে পাকিস্তানে ১-০ গোলে হেরে ভারতের টানা ছয়টি স্বর্ণ জয় এবং ৩০টি ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড থামে। তবে ১৯৬৪ অলিম্পিকে আবার তারা পাকিস্তানকে হারিয়ে সপ্তম স্বর্ণ অর্জন করে নেয়। এরপর ৬৮ ও ৭২ অলিম্পিকে তারা ব্রোঞ্জ জিতে।

ভারতের হকি ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে ১৯৭৬ সালে। ৭৬ অলিম্পিকে প্রথমবারের মত এস্ট্রোটার্ফ এর প্রবর্তন হয়। এবং প্রথমবারের মত ভারত অলিম্পিক থেকে খালি হাতে ফেরে। তবে ১৯৮০ অলিম্পিকে এখন পর্যন্ত তাঁদের শেষ স্বর্ণপদক জিতে।

এরপর যেন ভারতের ভাগ্য হতে যেন হকি বিশ্বকাপ ও অলিম্পিক হারিয়েই গেল। ৮০ ও ৯০ এর দশকে ভারত এশিয়ার শীর্ষ দলের মধ্যে থাকলেও বিশ্বকাপ, অলিম্পিক, এমনকি এশিয়া কাপেও চ্যাম্পিয়নশিপ ঘরে আনতে পারছিল না। এই সময় তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য ছিল ১৯৮৫ সুলতান আজলান শাহ কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া।

২০০৩ সালে ভারত তাদের প্রথম এশিয়া কাপ শিরোপা ঘরে তোলে। ২০১০ কমনওয়েলথ গেমসের ফাইনাল তারা অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৮-০ গোলে হেরে রৌপ্য পদক পায়, যা ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পরাজয়। অনেকদিন ধরেই ভারত তাদের গৌরবান্বিত অতীতের কাছে ফিরে যেতে চাইছে। হয়ত এই অলিম্পিক ব্রোঞ্জ ভারতের হকির জন্যে ধীরে ধীরে আগের সোনালী সময় ফিরিয়ে আনবে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...