৯৭.৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে যেন এক বিপত্তি কিনে নিয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব চেলসি। বিপত্তির নাম রোমেলু লুকাকু। ভক্ত-সমর্থকরা যেমন চটে আছেন তাঁর উপর। ঠিক তেমনি তাঁর নিজের ভাগ্যও খানিক গোসসা করে আছে লুকাকুর উপর। সেই সাথে পারফরমেন্সও যেন পালিয়েছে লুকাকুকে ছেড়ে।
২০২০-২১ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা চেলসির জন্যে নিজেদের ফিরে পাওয়ার টোটকা হিসেবে কাজ করেছে। সেই ২০১২-১৩ মৌসুমের পর আবার ইউরোপ সেরার শিরোপাটা ঘরে তুলেছিলো ইংলিশ ক্লাব চেলসি। কোচ টমাস টুখেল যেন ভরসা দিচ্ছিলেন সুদিন ফিরবে চেলসির। আবার ইউরোপ জুড়ে চলবে চেলসির দাপট। চেলসি জিতবে প্রিমিয়ার লিগ।
নতুন করে দলকে অপ্রতিরোধ্য করতে টুখেলে প্রয়োজন ছিলো একজন ধূর্ত এবং কার্যকরী স্ট্রাইকারের। সেই স্ট্রাইকার হিসেবে টুখেল তাঁর মেয়াদের দ্বিতীয় বছরেই প্রায় ৯৭.৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে ইতালির ক্লাব ইন্টার মিলান থেকে বেলজিয়াম স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকুকে। এ যেন ঘরের ছেলের ঘরে আবার প্রত্যাবর্তন। সেই ২০১৪ তে ছেড়েছিলেন ক্লাব। আবার বছর সাতেক বাদে চেলসির জার্সি গায়ে জড়াবেন লুকাকু।
সমর্থকদের প্রত্যাশা যেন ক্রমশই বেড়েছে সময়ের সাথে। ঘরের ছেলে ঘরে ফেরা ছাড়াও ইতালিতে দারুণ ছন্দে থাকা লুকাকু নিজেই যেন নিজের উপর প্রত্যাশার চাপটা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ইন্টারের হয়ে ৭২ ম্যাচে ৪৭ বার বল জালে জড়িয়েছেন। এমন একজন স্ট্রাইকারের উপর স্বভাবতই কোচ ভরসা রাখতে চাইবেন। তাই রাখলেন টুখেল।
কিন্তু সেই আস্থা কিংবা প্রত্যাশার কোনটাই পূরণ করতে পারছেন না লুকাকু। ছয় মাস হয়ে গেলো তিনি চেলসিতে এসেছেন। ইন্টারে থাকাকালীন তাঁর সেই পারফরমেন্সের ছিটেফোঁটার দেখা মেলেনি প্রিমিয়ার লিগে। এখন পর্যন্ত ১৭ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। গোল করেছেন মাত্র পাঁচবার। একজন নাম্বার নাইনের কাছ থেকে নিশ্চয়ই কোন দল এমন সাদামাটা পারফরমেন্স মেনে নিতে পারবে না।
সে যাই হোক পুরো চেলসি তাঁকে সময় দিতে যেন ছিলো প্রস্তুত। তবে ইতালির এক গণমাধ্যমে লুকাকুর দেওয়া এক সাক্ষাৎকার যেন ফুসিয়ে তোলে পুরো চেলসি সমর্থকদের। ব্যাস! যেটুকু সমর্থন তিনি পেয়ে আসছিলেন সেটুকুও খোয়ালেন। একদিকে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। আরেকদিকে সমর্থক থেকে শুরু করে নিন্দুকদের কটু কথা শুনতে হচ্ছে তাঁকে। দারুণ বিপাকে রয়েছেন লুকাকু।
লুকাকু যেন এক বিশাল সমস্যায় পরিণত হয়েছেন চেলসির জন্যে। প্রায় ২০০০ মিনিট তিনি খেলে ফেলেছেন নিজের নতুন ক্লাব সতীর্থদের সাথে। তারপর ঠিক দলের সাথে রসায়নটা জমেনি লুকাকুর। সেই সাথে মানসিক বিষাদের কারণ হচ্ছে নিজের বাজে পারফরমেন্স ও নিন্দা। টমাস টুখেল নিজের এই নতুন খেলোয়াড়কে দলের সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্যে নিজের ট্যাকটিসেও এনেছেন পরিবর্তন।
টুখেল স্বাভাবতই পছন্দ করেন পজিশন ধরে রেখে অ্যাটাক করা। ৪-৩-৩ ফরমেশনটা তাঁর বেশ পছন্দের। কিন্তু লুকাকুর সমস্যা সমাধানে নিজের পছন্দের কৌশল এবং ফরমেশন দু’টোতেই পরিবর্তন এনেছিলেন টুখেল। ৪-১-৪-১ ফরমেশনেও দলকে খেলিয়েছিলেন তিনি। যেখানে কাই হারভার্টসকে খেলিয়েছিলেন দ্বিতীয় স্ট্রাইকার হিসেবে।
এই ফরমেশনে ইন্টার মিলানে খেলেছিলেন লুকাকু। সেই ফরমেশনেও পরীক্ষামূলক পুরো দলকে খেলিয়েছেন টুখেল। তাতেও খুঁজে পাওয়া যায়নি রোমেলু লুকাকুকে। তিনি এক অভেদ্য পর্দায় নিজেকে যেন আবৃত করে রেখেছিলেন। মেলে ধরার বিন্দুবাত্র ইচ্ছাও যেন তাঁর মধ্যে দেখা যায়না, এ কথা বললে বোধহয় খুব একটা ভুল বলা হয়। তাঁর মাঠে সব কার্যকলাপই যেন সতীর্থদের জন্যে এক ধাঁধা।
এমন পরিস্থিতি আগেও অবশ্য দেখেছেন লুকাকু। তখন তিনি ছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ডেরায়। ঘটনাটা ২০১৮ সালের। তখন ইংল্যান্ড থেকে তিনি চলে গিয়েছিলেন ইতালিতে। সেখানে পারফরম করে আবার ফিরলেন ইংল্যান্ডে। কিন্তু সেই অদ্ভুত বেড়াজাল থেকে যেন বের হতেই পারছেন না তিনি। চেলসির সমর্থক থেকে কর্তাদের হয়ত এখন একটাই প্রশ্ন, লুকাকুর এই সমস্যার সমাধান আসলে কি?