Social Media

Light
Dark

ট্রান্সফার মার্কেটের লিভারপুল শিল্পী

লিভারপুলের খেলোয়াড় কেনার ধরণ অনেক প্রশংসা কুড়ায়। তবে, এর বিপরীত চিত্রও আছে। খেলোয়াড় বিক্রি করার ক্ষেত্রেও অল রেডদের সদ্য সাবেক ক্রীড়া পরিচালক মাইকেল এডওয়ার্ডস তার কারিশমা দেখিয়েছেন।

ads

শুধুমাত্র ইয়ুর্গেন ক্লপের আমলেই লিভারপুল নিজস্ব খেলোয়াড় বিক্রি করে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি সংগ্রহ করেছে, সাদিও মানে, নিকো উইলিয়ামস এবং তাকুমি মিনামিনো যার সর্বশেষ উদাহরণ।

মোহাম্মদ সালাহ, ভার্জিল ভ্যান ডাইক, অ্যালিসন বেকার, এবং সাদিও মানের মতো ট্রান্সফার গুলো অল রেডদেরকে বছরের পর বছর শিরপার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারে এমন একটি দল গঠন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে নি:সন্দেহে। কিন্তু এই খেলোয়াড়দের দলে ভেড়াতে লিভারপুলের বর্তমান মালিক ফেনওয়ে স্পোর্টস গ্রুপকে গাটের পয়সা খরচ করতে দেখা যায়নি বরং বিক্রি করা খেলোয়াড়দের থেকে পাওয়া টাকা দিয়েই দলবদলের খরচ মিটিয়েছে অল রেডরা।

ads

লিভারপুল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খেলোয়াড় বিক্রির ক্ষেত্রেও দক্ষতা অর্জন করেছে। এটাকে তারা রীতিমত শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। মাইকেল এডওয়ার্ডস ক্রীড়া পরিচালক থাকা কালীন সময় শুধু স্কোয়াড খেলোয়াড় বিক্রি করেই অল রেডরা ঢের পয়সা কামিয়েছে। আর কৌতিনহোর মত তারকা খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ দলের থেকে সর্বোচ্চ মূল্য যাতে পাওয়া যায় সেই সমস্ত ধারা চুক্তিতে রেখেছে। লিভারপলের ইতিহাসের সেরা ৭ খেলোয়াড়, যাদের বিক্রি করে ক্লাব সবচেয়ে বেশী অর্থ পেয়েছে তাদের নিয়েই আজকের এই আলোচনা।

  • জাবি আলোনসো

রাফা বেনিতেজকে কেন লিভারপুল ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল, এই বিষয়ে যখন আলোচনা করা হয় তার সন্ধিক্ষণ হিসেবে আলোনসোর বিক্রিকে ধরা হয়। ২০০৭-২০০৮ মৌসুমে বেনিতেজ যখন অ্যাস্টন ভিলার গ্যারেথ ব্যারিকে জাবি আলোনসোর জায়গায় দলে ভেড়াতে চেয়েছিলেন এই স্প্যানিশ ফুটবলার তখনই দল ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলেন।

২০০৮-২০০৯ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পেছনে দ্বিতীয় স্থানে থেকে মৌসুম শেষ করে, এক্ষেত্রে মাঝমাঠের এই খেলোয়াড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। মৌসুম শেষে গ্রীষ্মকালীন দলবদলের বাজারে তাকে ৩০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

লিভারপুলের তৎকালীন মালিক টম হিকস এবং জর্জ জিলেটের অধীনে ক্লাব আর্থিক সমস্যায় ভুগছিল। মালিকানা নিয়ে চলতে থাকা সমস্যার কারনে ক্লাবকে নিজের খরচ নিজের আয় দিয়েই চালাতে হত। খরচের ধাক্কা সামাল দিতে অনেক খেলয়ারকেই বিক্রি করা হয়েছিল তখন যার অন্যতম জাবি আলোনসো। আলোনসোর বদলি হিসেবে দলে টানা অ্যালবার্তো অ্যাকুইলানি লিভারপুলে নিজেকে জায়গা পাকা করতে পারেননি কখনোই।

  • ক্রিশ্চিয়ান বেন্টেকে

২০১৫ সালে অ্যাস্টন ভিলা থেকে দলে ভেড়ানোর পর অ্যানফিল্ডে শুধুমাত্র একটি মৌসুম কাটিয়েছিলেন আক্রমণভাগের এই খেলোয়াড়। সেই মৌসুমে বেন্টেকে ১০টি গোল করেছিলেন, যার মধ্যে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে একটি বাই সাইকেল কিকে করা অসাধারণ গোল রয়েছে। কিন্তু মৌসুমের মাঝপথে ব্রেন্ডন রজার্সকে হটিয়ে ক্লপকে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেয় লিভারপুল, এতেই কপাল পুড়ে বেলজিয়ান এই ফুটবলারের।

ক্লপের খেলার পদ্ধতির জন্য উপযুক্ত খেলোয়াড় নয় এই কারণে ৩২ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে তাকে ক্রিস্টাল প্যালেসের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে ঈগলদের হয়ে ১৫০’র বেশী ম্যাচ খেলে ফেলেছেন তিনি।

  • সাদিও মানে

ক্লপ আমলে লিভারপুলের দলে ভেড়ানো অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ছিলেন সাদিও মানে। নতুন চ্যালেঞ্জের সন্ধানে দল ছাড়তে চান মানে তাই এই গ্রীষ্মকালীন দলবদলের বাজারে বায়ার্নের কাছে ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ডে তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেনেগালিজ এই তারকা লিভারপুলের জার্সিতে ২৬৯ ম্যাচ খেলে করেছেন ১২০টি গোল। ক্লাবে কাটানো ছয় বছরে জেতার মত সব শিরোপাই জিতেছেন তিনি।

২০১৬ সালে মানেকে সাউথহ্যাম্পটন থেকে লিভারপুলে আনতে অল রেডরা যা খরচ করেছিল তার চেয়ে বেশী টাকা তারা বায়ার্নের কাছ থেকে পেয়েছে, কিন্তু আসল পয়সা উশুল হয়েছে ক্লাবে কাটানো এই ছয় বছরে তিনি যা সার্ভিস দিয়েছেন তা দিয়ে। সাদিও মানের কথা লিভারপুল সমর্থকরা আজীবন মনে রাখবে।

  • রাহিম স্টার্লিং

রাহিম স্টার্লিংয়ের লিভারপুল থেকে প্রস্থান সমর্থকদের জন্য ছিল এক তিক্ত অভিজ্ঞতা। তিনি যে পরিস্থিতি তৈরি করে ক্লাব ছেড়ে ছিলেন তার জন্য অনেক অল রেড সমর্থক তাকে আজও ক্ষমা করেনি। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে অ্যানফিল্ডের চেয়ে ইতিহাদ তার উন্নয়নের জন্য ভাল জায়গা হবে। এর পরে একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং অগোছালো দলবদলের প্রক্রিয়া শুরু হয় যেখানে খেলোয়াড় এবং ক্লাবের জনসংযোগ বিভাগ একে অপরের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে থাকে, হতে থাকে কাদা ছোড়াছুড়ি।

শেষ পর্যন্ত স্টার্লিংকে ৪৯ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে ম্যানচেস্টার সিটির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এই গ্রীষ্মের দলবদলের বাজারে চেলসিতে যোগ দেওয়ার আগে তিনি চারটি প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা সহ সিটিতে ১১টি বড় ট্রফি জিতেছিলেন, যদিও চ্যাম্পিয়ন্স লীগ না জেতার আফসোস তার থাকবে।

  • ফার্নান্দো তোরেস

ফার্নান্দো তোরেসের দলবদলের সংবাদ লিভারপুল সমর্থকদের সবচেয়ে বেশি আঘাত দিয়েছিল। আক্রমণভাগের এই খেলোয়াড় তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে মার্সিসাইডের ক্লাবটি ছাড়তে চান। ২০১০-১১ মৌসুমের শীতকালীন দলবদলের বাজারের একদম শেষ দিনে তোরেসকে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে চেলসির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

ইতিহাস বলছে লিভারপুল এই স্প্যানিশ ফুটবলারকে বিক্রি করে ভালই করেছে। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে এসে তোরেস শিরোপা জিতেছিলেন ঠিকই। কিন্তু অ্যানফিল্ডে নিজেকে তিনি যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, এখানে তার ছায়ার কাছাকাছিও পৌছাতে পারেননি। লিভারপুল তাঁর বদলে লুইস সুয়ারেজকে দলে টানে যার জাদুতে অল রেড সমর্থক বিমোহিত হয়।পরবর্তীতে তাকেও চড়া দামে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

  • লুইস সুয়ারেজ

লুইস সুয়ারেজ অ্যানফিল্ডে খেলা অন্যতম প্রতিভাধর খেলোয়াড়দের একজন। সুয়ারেজ এমন সময়ে লিভারপুলের হয়ে খেলেছিলেন যখন ক্লাবটি রিয়াল মাদ্রিদ বা বার্সেলোনার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অক্ষম ছিল, তাই বার্সা তাকে দলে পেতে চাইলে ৬৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে তাকে কাতালুনিয়ার ক্লাবটির কাছে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয় অল রেডরা।

লিভারপুলের হয়ে ১৩৩টি ম্যাচে ৮২ গোল করেছিলেন উরুগুয়ের এই ফুটবলার। ২০১৩-১৪ মৌসুমে ৭ ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পর দুর্দান্ত খেলেন তিনি। সেই মৌসুমে তিনি প্রিমিয়ার লীগের গোল্ডেন বুট জিতেছিলেন এবং একই সাথে দ্য ফুটবল রাইটারস অ্যাসোসিয়েশন’ ও দ্য প্রফেশনাল ফুটবলারস অ্যাসোসিয়েশনের ভোটে বছরের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।

২০১৪ বিশ্বকাপে ইতালির রক্ষণভাগের খেলোয়াড় জর্জিও কিয়েলিনিকে কামড়ানোর জন্য ফুটবল থেকে ৪ মাসের নিষেধাজ্ঞা পান,এই ঘটনার কিছুদিন পর লিভারপুল ছেড়ে চলে যান তিনি। আক্রমণভাগের এই খেলোয়াড় বার্সেলোনার জার্সিতে একজন কিংবদন্তি হয়ে উঠেন। কাতালুনিয়ার ক্লাবটির হয়ে ছয় মৌসুমে ১৯৮ গোল করেছেন এবং ১৩টি ম্যাজর শিরোপা জিতেছেন তিনি।

  • ফিলিপ কৌতিনহো

উভয় ক্লাবের ইতিহাসে এই দলবদলের গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম। ২০১৭-২০১৮ মৌসুমের শীতকালীন দলবদলের বাজারে কৌতিনহোকে লিভারপুল ১৪২ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে বার্সেলোনার কাছে বিক্রি করে দেয়, এই চুক্তিটি দলবদলের বাজারে লিভারপুলের স্মার্টনেস এবং বার্সেলোনার বেপরোয়া মনোভাবকে স্পষ্ট ফুটিয়ে তুলে যা ক্লাব দুটির ভবিষ্যতের দিশা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।

আগের মৌসুমের গ্রীষ্মকালীন দলবদলের বাজারে ব্রাজিলিয়ান এই ফুটবলার ক্যাম্প ন্যুতে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু লিভারপুল তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে। কয়েক মাস পরে অল রেডরা কৌতিনহোকে বিক্রি করতে ইচ্ছুক হয় এমন এক মূল্যে যা তাকে ইতিহাসের তৃতীয় ব্যয়বহুল খেলোয়াড়ে পরিণত করেছিল। বার্সেলোনায় তিনি তার প্রতিভার ছিটে ফোটাও দেখাতে পারেননি। বার্সার হয়ে মাত্র ২৬ গোল করা এই ফুটবলার ২০১৯-২০২০ মৌসুমটা কাটান বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে ধারে খেলে।

তিনি এই বছরের শুরুতে ইংল্যান্ডে ফিরে এসেছেন। সাবেক লিভারপুল সতীর্থ স্টিভেন জেরার্ড অ্যাস্টন ভিলায় ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেওয়ার পর এই ব্রাজিলিয়ানকে নিজের দলে ভেড়ান। কৌতিনহোর দলবদলের ফলে লিভারপুল তাদের দলের মূল স্তম্ভ ভ্যান ডাইক, অ্যালিসন এবং ফ্যাবিনহোকে দলে ভেড়াতে সক্ষম হয় এবং দল হিসেবে অল রেডরা তর তর করে উপরের দিকে উঠতে থাকে। অন্যদিকে এইধরনের আরো বেপরোয়া কিছু চুক্তির কারণে বার্সা আজ আর্থিক ভাবে ধুক্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link