যে কৌশলে সফল মরক্কো

শেষ ষোলর লড়াইয়ে যে খেল দেখাল সবকটা টিম, তার মধ্যে মরক্কো দুম করে অনেকটা ওপরেই চলে এসেছে বলা যায়, এইভাবে স্পেনকে রুখে দেওয়ার জন্য। এটা আনস্পেক্টেড হলেও, প্রথমত নন-ফিজিক্যাল মোরাতা ছাড়া স্পেনের ফিনিশার নেই এবং মোরাতা নিজেও একজন মারকাটারি ফিনিশার নয়। আর দ্বিতীয়ত, মরক্কো ডিফেন্সে আম্বুজা সিমেন্ট লাগিয়ে রাখবে কেউই তেমন আশা করেনি।

শেষ ষোলর লড়াইয়ে যে খেল দেখাল সবকটা টিম, তার মধ্যে মরক্কো দুম করে অনেকটা ওপরেই চলে এসেছে বলা যায়, এইভাবে স্পেনকে রুখে দেওয়ার জন্য। এটা আনস্পেক্টেড হলেও, প্রথমত নন-ফিজিক্যাল মোরাতা ছাড়া স্পেনের ফিনিশার নেই এবং মোরাতা নিজেও একজন মারকাটারি ফিনিশার নয়। আর দ্বিতীয়ত, মরক্কো ডিফেন্সে আম্বুজা সিমেন্ট লাগিয়ে রাখবে কেউই তেমন আশা করেনি।

তবু কানাডা ম্যাচটায় যদি ফিরে যাওয়া যায়, সেদিন ডানে পজিশন চেঞ্জার ডেভিসের অমন দৌড় আর স্কিল সত্বেও মাৎজারাউয়ির পায়ে রুখে গেছে। মরক্কো ডিফেন্স করছে ডিফেন্স করতে হবে বলে নয়, রীতিমতো ট্যাকটিক্যালি ডিফেন্ড করে ম্যাচ বার করছে। হাকিমি, মাৎজারাউয়ি দুটো উইংব্যাক আর মাঝে একটু উপরে সাইস।

সাইস ফাইনাল ট্যাকল করছে অ্যাটাকারকে একটু একটু করে খেলিয়ে বক্সের একটু আগে টেনে এনে, তার আগে নয়। যদি সাইস মিসফায়ার করে, গায়ে লেগে থাকছে অগার্ড। এই অগার্ডের ডিফেন্স কোয়ালিটির সাথে প্রথম পরিচয় রেঁনেতে, তারপর আফ্রিকান কাপ অফ নেশন্সে মরক্কোর প্রথম ম্যাচ ঘানার সাথে। আন্দ্রে আয়ুকে একার হাতে রুখেছিল গোটা ম্যাচে, আর মিড লাইন বরাবর একটা থ্রু পাস খেলে লো ব্লকে জায়গা ফাঁকা করছিল। অগার্ড নিজেকে ধরে রেখেছে, এই বছর ওয়েস্ট হ্যামেও এসেছে রেঁনের সফর শেষ করে।

প্লাস সাইস তো আছেই। বেলজিয়াম ম্যাচের প্রথম গোলটাই সাইসের। মরক্কো ডিফেন্স লাইনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শুরু ৩-৫-২ তে করে ঠিক নিজেদের ৪-৪-২ তে খুব তাড়াতাড়ি ট্র্যাকব্যাক করতে পারে। আরেকটু পেছনে ৫-৩-২। ফলে আপফ্রন্টে স্পেসই পাচ্ছে না অপোনেন্ট। যার ফল? ১০১৯টা পাস খেলেও স্পেনের কপালে ফক্কা!

ইনভার্টেড উইঙ্গার হিসেবে আগের সিজন ভাল যায়নি জিয়াচের। জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েও ফিরে এসে কিন্তু কাপে জান দিয়ে খেলছে। আর এর গোটা ক্রেডিটটা ওয়ালিদ রেদরাগুইয়ের। দু’মাস আগে মরক্কোর দায়িত্ব নিয়ে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছেন। ৪-৩-৩ এ শুরু করে অ্যাটাকে ৩-৪-৩ হচ্ছে যাচ্ছেন।

দুই, বৌফল সাউদাম্পটনে খেলে গেছে। যে খেলাটা সাউদাম্পটনে শুরুর দিকে খেলতে পারেনি পেছনে ওয়েনিয়ামা, স্নাইডারল্যান আর ওয়ার্ড প্রস থাকাতেও, সেটা খেলতে পারছে কারণ ওনাহি বলে একটা নতুন ৮ নাম্বার পেয়েছে মরক্কো। যার লেফট চ্যানেল থেকে ভার্টিক্যাল পাসে ওয়াল খেলাটা বেশ সুন্দর। এখন কথা হচ্ছে, এই মরক্কো কি পর্তুগালের সাথে পারবে শেষ আটে?

মন বলছে, পারবে। মগজ বলছে, পারবে না। আগে মনের কথাই বলি। ডিফেন্সে আন্দ্রে সিলভা একটা অপশন বটে কিন্তু যেহেতু পেপের ফিজিক্যালিটি এখনও বিজয়া দশমীর মণ্ডপে প্রদীপের মতো জ্বলছে, প্লাস এই বুড়ো হাড়ে থুড়ি বুড়ো হেডে গোল করেছে, কাজেই বসবে না। বয়স ফ্যাক্টর কিন্তু স্যান্টোস আগের উইনিং কম্বিনেশন ভাঙবে না। লেফটব্যাকে জোয়াও ক্যানসেলো একজন অ্যাটাকার, উইংব্যাক।

ওপরে উঠবেই। শুরু থেকে রুবেন নেভেস খেললে আলাদা কিন্তু উইলিয়াম কার্ভালহো ডিফেন্সিভ স্ক্রিনে খেলা মানে জিয়াচের সামনে ছোট্ট করে একটু স্পেস খুলে যাওয়া।যেখান থেকে ইনসাইড-আউটসাইড ডজে দৌড়বে জিয়াচ। পাশে পাবে ওনাহিকে, যে আপাতত ওয়ালটা একটা দুটো টাচে ভালই রেসপন্স দিচ্ছে। পেপে কি সেখানে খুবই এফেক্টিভ? এক্সপিরিয়েন্সের কাছে বয়স ফ্যাক্টর নয়। সত্যিই? যদিও রুবেন ডিয়াস আছে সঙ্গে।

দুই, বৌফল। যার ফার্স্ট টাচ বাচ্চে কি জান লে লেগা। ঘানা ম্যাচটায় লাস্ট মোমেন্টে বাজিমাত করে বেরিয়ে গেছিল। শেষ অব্দি আর টানতে পারেনি, কিন্তু এবারে আবার অধিক এনার্জি আর ইচ্ছে সহযোগে ফিরে এসেছে। ট্র্যাকব্যাকটা অত ভাল না হলেও পায়ে বল পড়লে পাস ঠিক খুঁজে নিচ্ছে আপে।

তিন, মগজের ব্যাপারে কার্পন্য করিতে নাহি কভু। পর্তুগাল টিম হিসেবে এই মূহূর্তে ইউরোপে অন্যতম সেরা। শুধু স্কোয়াড ডেপথ আছে বলেই নয় (খেয়াল রাখতে হবে কাপ টিমে দিয়েগো জোটা নেই), স্কোয়াডের ম্যাক্সিমাম প্লেয়ার রীতিমতো ফর্মে। শুধু একজন ছাড়া। তাকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই, বরং বাকিদের নিয়ে কথা বলা যাক।

জোয়াও ফেলিক্স এই টিমে সেকেন্ড স্ট্রাইকার। খেলছে একটু নিচ থেকে, নিচে নেমে আট নম্বরের কাছ থেকে বল নিচ্ছে, হোল্ড করে ডানদিকে সাইডব্যাককে উঠতে অ্যালাও করছে। ফলস্বরূপ কাল ডালোটের একটা মাইনাস থেকে গোল করে গেল গঞ্জালো রামোস। স্যান্টোস প্রথম ম্যাচগুলোতে রোনাল্ডোকেও সিঙ্গল স্ট্রাইকারে শুরু করাননি।

পাশে ফেলিক্সকে রেখেছেন, আর তাই গেম স্টার্টিংয়ের পর চিরাচরিত ৪-২-৩-১ এ বেরিয়ে যাচ্ছে ফেলিক্স। বাঁয়ে ঠেলছে ব্রুনো আর ডানে একটু নিচে পিভটে বার্নাড সিলভা। নিচের ডাবল পিভট রুবেন নেভেসের সাথে আট নম্বর ওটাভিও। যার বক্স টু বক্স মিডে লিঙ্ক আপটা কার্যকর হচ্ছে বানার্ড মাঝের হাফস্পেসে ঢুকে পড়ছে বলে। বাঁয়ে স্পেস পেয়ে যাচ্ছে ব্রুনো, আর বল যাচ্ছে ফেলিক্সের কাছে।

সুইটজারল্যান্ড চেয়েছিল অ্যাটাক, তাই আপে বারবার উঠে যাচ্ছিল শাকিরি। কিন্তু কাউন্টারে ট্র্যাকব্যাকিং টাইমিং ঠিক না হওয়ায় দুটো উইংয়ে ওয়ান ইস্টু ওয়ান পজিশনে ফর্মে থাকা পর্তুগিজদের কেউ আটকাতে পারবে না।

গনসালো রামোসকে আস্তিনের তলা থেকে নামিয়ে কামাল করলেও, এই টিমের আসল ট্রাম্প রাফা লিয়াও এখনও পরিবর্ত। প্রথম টিমে আসেনি। মরক্কোর বিরুদ্ধে আসতে পারে। হাকিমি এই মূহূর্তে সেরা রাইটব্যাক হলেও, রাফা লিয়াওয়ের মাঝারি স্পিড চকিতে ড্রিবলিং বিপদ ডেকে আনতে পারে। প্লাস, স্পেসটা দুর্দান্ত চেনে লিয়াও। সাসুলোর বিরুদ্ধে যে গোলটা আগের সিজনে করেছিল সেটা ঐ মোমেন্টাম অফ দ্য গেমে তৈরি হওয়া স্পেস থেকেই।

ইভেন সুইজারল্যান্ডের এগেন্সটে গোলটাও লেফট চ্যানেল থেকে একটা আউটসাইড ডজে স্পেস পেয়ে লব প্লেস। কাজেই রাফা লিয়াও একটা বড় তাস স্যান্টোসের। স্যান্টোস এখনও ঠিকঠাক ব্যবহার করেনি সেটা। করবেই, মানে করতে হবে। গঞ্জালো রামোস অপোনেন্টের ব্যাকলাইন থেকে কাউন্টারে ট্র্যাকব্যাকটা দুর্দান্ত করে।

মিড লাইন থেকে বল নিয়ে কাউন্টারে যেতেও মোটামুটি ওস্তাদ। তাই ফেলিক্সের কাজটা আরেকটু সহজ হয়েছে আরও। দুটো সেন্টার ব্যাকের একজনকে টেনে নামলেই আপফ্রন্টে দরজা খুলবে। সেখানে কেউ না কেউ ঠিক ঢুকে পড়বে। যেমতি পজিশন বদল করে বারবার ব্রুনো ঢুকছিল ঐ স্পেসটায়। বেনফিকায় এই সিজনটা আপাতত দারুণ কাটছে। এর মধ্যেই ১১ ম্যাচে ৯ গোল। এ ছেলে পর্তুগালকে টানবে।

বাকি থাকল একজন। ফারাক গড়বে কি না জানা নেই। গড়লে আর এসব সিস্টেম-ফিস্টেম জাস্ট ভাগল বা। তখন শুধু, রো-ও-ও-না-ল-ল-ডো-ও-ও!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...