পেস বোলারদের স্বর্গরাজ্য বলা হয় পাকিস্তানকে। অতীতে ক্রিকেটকে বিধ্বংসী সব ফাস্ট বোলার উপহার দিয়েছে দেশটি। ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনূস, শোয়েব আখতার, মোহাম্মদ আমিরদের মত পেসাররা কাঁপন ধরিয়েছেন বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানদের বুকে।
তাঁদের পথ অনুসরণ করেই বর্তমানে বাইশ গজে আগুন ঝরাচ্ছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। ইনজুরি থেকে ফেরার পর বাঁ-হাতি এই পেসার অপেক্ষায় আছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজের সামর্থ্যের জানান দেবার।
পেস বোলারদের জন্য ইনজুরি নিত্য নৈমিত্তিক এক ব্যাপার। তবে সব পেসারের সামর্থ্য থাকে না ইনজুরি থেকে ফিরে আসার। কেউ হারিয়ে যান বিস্মৃতির অতল গহ্বরে। তবে যারা ফিরে আসতে জানেন, তাঁরাই স্মরণীয় হয়ে থাকেন ক্রিকেট রোমান্টিকদের মনে।
পাকিস্তান ক্রিকেটে শাহীন আফ্রিদির আগমণটা সাড়া জাগিয়ে। বাঁ-হাতি এই পেসার গতির পাশাপাশি দুই দিকেই সুইং করাতে জানেন। এছাড়া নিখুঁত ইয়র্কার দিতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বিশেষ করে নতুন বলে তিনি যেন অপ্রতিরোধ্য, তাঁর উপর ভর করেই গত বিশ্বকাপে ভারত ধাঁধার সমাধান পেয়েছে পাকিস্তান।
প্রথমবারের মত বৈশ্বিক আসরে ভারতকে হারাতে পেরেছিল বাবর আজমের দল।পূর্বসূরি কিংবদন্তি সব তারকারা যা করতে পারেননি, সেটাই করে দেখিয়েছেন শাহীনরা।
কিন্তু গত জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে ফিল্ডিং করার সময় হাঁটুর ইনজুরিতে পড়েন শাহীন। ফলে খেলতে পারেননি এশিয়া কাপের এবারের আসরে। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসরে তাঁর অভাব ভালোই ভুগিয়েছে পাকিস্তানকে, ফাইনালে উঠলেও হেরে গিয়েছে শ্রীলঙ্কার কাছে।
অবশেষে লন্ডনে অস্ত্রোপচার শেষে বিশ্বকাপের আগে পুনরায় পূর্ণদমে বোলিং শুরু করেছেন শাহীন। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচেও বল হাতে দেখা গিয়েছে পুরনো রূপ।
তবে ইনজুরি থেকে ফেরার প্রক্রিয়াটা সহজ ছিল না ২২ বছর বয়সী এই পেসারের জন্য। অসহ্য যন্ত্রণা সয়েই পুনরায় ফিরেছেন বাইশ গজে।
শাহীনের ভাষায়, ‘পুর্নবাসন প্রক্রিয়াটা আমার জন্য ভীষণ কঠিন ছিল। মাঠে খেলাটা প্রচণ্ড মিস করেছি। তবে খেলার বাইরে থাকলেও আমি নিয়মিতই আমার সতীর্থদের সাথে যোগাযোগ করেছি এবং তাঁদের সাথে কথা বলেছি। পুরোটা সময় জুড়ে সতীর্থটা আমাকে সমর্থন এবং সাহস জুগিয়ে গিয়েছেন।’
সময়টা কঠিন ছিল, শাহীন বলেন, ‘শুরুর দিকে আমি হাঁটতে পর্যন্ত পারতাম না। কিন্তু আমার লক্ষ ছিল যেকোনো মূল্যে বিশ্বকাপ খেলা। তাই আমি ডাক্তারের প্রতিটা উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। আমি আগে কখনও এত বড় ইনজুরিতে পড়িনি, স্ক্র্যাচ হাতে হাঁটার অভিজ্ঞতা আমার জন্য নতুন ছিল। এটা ছিল অবর্ণনীয় কষ্টের এক অভিজ্ঞতা। আমি ব্যথা পেয়ে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম, তবে ধীরে ধীরে সামনে এগিয়েছি।’
শাহীন জানান, ধৈর্য্য তাকে ধরতেই হত। তিনি বলেন, ‘শুরুতে আমি ৮০ ভাগ ফিটনেস অর্জন করেছি। এরপর ধীরে ধীরে ৯০, তারপর শতভাগ। আপনি যখন বড় কোনো ইনজুরি থেকে ফিরবেন তখন আপনার শরীর সাথে সাথে আগের মত ফিট হবে না, শুরুতে হতাশ লাগলেও আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমাকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। আমি আমার ভক্তদের ভালোবাসা এবং সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানাই।’
কোনো সন্দেহ ছাড়াই বলা যায় যে, শাহীন আফ্রিদি বর্তমানে বিশ্বের সেরা পেসারদের একজন। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু করবে পাকিস্তান। গত বিশ্বকাপে এই শাহীনের কাছেই উড়ে গিয়েছিল ভারতীয় টপ অর্ডার। এখন দেখার বিষয় ইনজুরি ফেরত শাহীন পুরনো পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি করতে পারেন কিনা এ আসরেও।