তাঁর বাবা ছিলেন আফ্রিকা মহাদেশের সেরা তারকাদের একজন। প্রথম এবং একমাত্র আফ্রিকান হিসেবে জিতেছেন ব্যালন ডি’অর। তবুও বিশ্বকাপ খেলার স্বাদ পূরণ হয়নি। অন্যদিকে ছেলে মাত্র ২২ বছর বয়সেই যেন ছাপিয়ে গেলেন বাবাকে। বিশ্বকাপ অভিষেক তো বটেই, প্রথম ম্যাচেই গোল পেয়ে গিয়েছেন কিংবদন্তি জর্জ উইয়াহর ছেলে টিমোথি উইয়াহ। বাবা লাইবেরিয়ার হয়ে খেললেও ছেলে টিমোথির গায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জার্সি।
কেবল ফুটবল ক্যারিয়ার নয়, রাজনীতিবিদ হিসেবেও দারুণ সফল জর্জ উইয়াহ। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে বর্তমানে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট তিনি। জীবনের এত প্রাপ্তির মাঝেও খানিকটা আক্ষেপ রয়ে গেছে তাঁর। বিশ্বকাপের মঞ্চে যে কখনো মাঠে নামা হয়নি তাঁর! তবে ছেলে টিমোথি উইয়াহ ফুটবল ক্যারিয়ারের সূচনা লগ্নেই পেয়ে গেছে বিশ্বকাপের স্বাদ। তবে সেটা বাবার দেশ লাইবেরিয়ার জার্সিতে নয়, বরং নিজের বেড়ে ওঠার দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে।
বর্তমানে ফরাসি ক্লাব লিলেতে খেলা উইয়াহর জন্ম নিউইয়র্কে। আমেরিকান ফুটবল দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও দ্রুতই ফুটবলের পাঠ নিতে পাড়ি জমান ইউরোপে। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই সুযোগ পেয়ে যান পিএসজির একাডেমিতে। উইয়াহ বলেন, ‘আমি আমার মায়ের সাথে পরামর্শ করে পিএসজিতে যাবার সিদ্ধান্ত নিই। কারণ আমার বাবা সেখানে খেলেছেন, আমাদের একটা বন্ধন আছে পিএসজির সাথে। সেখানে যাবার পর জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ, আনহেল ডি মারিয়াদের কাছে থেকে দেখতে পাই। তাঁরা ছিলেন আমার আইডল।’
একাডেমি এবং বয়সভিত্তিক দলে দারুণ খেলার সুবাদে মাত্র ১৮ বছর বয়সেই সুযোগ পেয়ে যান পিএসজির মূল দলে। অভিষেক ম্যাচেই কায়েনের বিপক্ষে পেয়ে যান পেশাদার ক্যারিয়ারের প্রথম গোলের দেখা। যদিও নেইমার, এমবাপ্পে, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া ঠাসা পিএসজির আক্রমণভাগে তাঁর জন্য কোনো জায়গা ছিল না। ফলে বেশি ম্যাচ খেলার আশায় সেই মৌসুম শেষে তিনি লোনে পাড়ি জমান স্কটিশ ক্লাব সেল্টিকে। সেখানে ভালো খেলে নজরে আরেক ফরাসি জায়ান্ট লিলের। ১০ মিলিয়ন ট্রান্সফার ফি’র বিনিময়ে তাঁকে দলে ভেড়ায় ফরাসি ক্লাবটি।
বাবা বেশির ভাগ সময় রাজনৈতিক জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় টিমোথির জীবনে মায়ের প্রভাবটাই বেশি। ফুটবল ক্যারিয়ার থেকে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত সবকিছুতেই মায়ের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমার মা-ই মাঠের পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলে থাকেন। বাবা বেশিরভাগ সময় নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। তবে যেকোনো বিষয়ে সাহায্য চাইলে টিপস দিয়ে থাকেন। ওটা এভাবে করো কিংবা আরেকটু আগে দৌঁড় শুরু করো এই ধরনের জরুরি কৌশলগুলো বাতলে দেন তিনি। ফুটবল ক্যারিয়ারে তিনি যা অর্জন করেছেন তা সত্যিই অসাধারণ। তাই তাঁর সব কথাই আমি মেনে চলতে চেষ্টা করি। তবে আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব আমার মায়ের।’
তবে বিশ্বকাপের বছর খানেক আগেও গড়পড়তা মানের এক ফুটবলার ছিলেন টিমোথি উইয়াহ। সবাই ভেবেছিল বাবার ছায়াতলে মাঝারি মানের ক্লাবেই কাটবে তাঁর জীবন। তবে এরপর ধীরে ধীরে উন্নতি আসতে থাকে তাঁর পারফরম্যান্সে, পরিণত হন ফরাসি লিগের অন্যতম সেরা তরুণ ফুটবলারে। উইয়াহ বিশ্বাস করেন জীবনে কিছু পরিবর্তন আনার পর থেকেই মাঠ এবং মাঠের বাইরে আরও অনেক বেশি পরিণত হয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি এখন আগের চাইতে অনেক বেশি পরিণত। আগে পিএসজির হয়ে শুরুর দিকে, জাতীয় দলে অভিষেকের দিনগুলোতে আমার মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। সবকিছু যেন দ্রুত ঘটছিল। এরপর মেডিটেশন শুরুর পর মানসিকভাবে স্থির হই। পারফরম্যান্সেও ধারাবাহিকতা আসতে শুরু করে।’
ওয়েলশের বিপক্ষে তাঁর গোলেই এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পরের ম্যাচেই তাঁদের প্রতিপক্ষ শিরোপা প্রত্যাশী ইংল্যান্ড। প্রতিপক্ষ নামেভারে অনেক বেশি এগিয়ে থাকলেও ম্যাচের আগেই হাল ছাড়তে নারাজ উইয়াহ। প্রতিপক্ষ নিয়ে চিন্তা না করে বরং নিজেদের ভুলত্রুটি শুধরে মাঠে নামতে চান তিনি।
উইয়াহর ভাষায়, ‘প্রতিপক্ষ দলে যখন হ্যারি কেন, বুকায়ো সাকা, রাহিম স্টার্লিংদের মত ফুটবলার থাকেন, তখন সেটা অবশ্যই চিন্তার। তবে আমরা কেবল নিজেদের নিয়েই ভাবতে চাই, নিজেদের খেলাটা খেলতে পারলে যেকোনো কিছুই সম্ভব।’