টসই আসল বস!

‘টস জিতলে ব্যাটিং নাও। মনে কোনো সন্দেহ থাকলে একটু ভাবো, তারপর ব্যাটিং নাও। সন্দেহ এরপরও না গেলে সতীর্থদের সাথে আলাপ করো, এরপর ব্যাটিং নাও।’ – ডব্লিউ জি গ্রেসের বহুল চর্চিত এই কথাটাকে যেন বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গেল সদ্য শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এখানে নিরাপদ কৌশল হল – ‘টস জিতে বোলিং নাও।’ আর এই কৌশলেই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে আসর জুড়ে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্ব যার পোশাকি নাম সুপার টুয়েলভ আয়োজিত হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতের তিনটি ভেন্যুুতে – আবু ধাবি, শারজাহ ও দুবাই। এসব মাঠে যারা টস জিতেছেন, তারাই আধিপত্ত বিস্তার করেছেন, সেটা ম্যাচ বা উইকেটের কন্ডিশন যাই হোক না কেন।

লম্বা দ্বৈরথ শেষে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। প্রথমবারের মত ক্রিকেটের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের সর্বোচ্চ আসরের শিরোপা জিতেছে। দলের অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ সাতবার টস করতে নেমে ছয়বার জিতেছেন টস। আর এটাই কি তাঁদের সাফল্যের সবচেয়ে বড় কারণ নয়?

সুপার টুয়েলভ থেকে শুরু করে সেমিফাইল কিংবা ফাইনাল – পুরো আসরে টস কিভাবে ভূমিকা রেখেছে – মাঠ ভেদে চলুন সেটাই একটু বোঝার চেষ্টা করি।

  • আবুধাবি শেখ জায়েদ স্টেডিয়াম

মোট ১১ টা ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে এই মাঠে। এর মধ্যে সাতটাতে টস জয়ী দলগুলোই জিতেছে ম্যাচ। দ্বিতীয় ইনিংসে বড় একটা ভূমিকা রেখেছে শিশির, যার কারণে বোলারদের জন্য কাজটা কঠিন হয়েছে। এখানে তাই জয়ের মূল মন্ত্র ছিল টস জিতে বোলিং নেওয়া। টস জিতে যারাই এখানে বোলিং নিয়েছে, তারাই শেষ অবধি পুরো পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছেড়েছে।

  • শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়াম

নব্বই নস্টালজিক এই মাঠ এবারের আসরে সুপার টুয়েলভের নয়টি ম্যাচ আয়োজন করেছে। টস এখানেও রেখেছে বড় ভূমিকা। নয় ম্যাচের মধ্যে পাঁচটায় টস জয়ী দলটাই জিতেছে। বোঝাই যাচ্ছে, টসের জাদু শারজাহকেও এক বিন্দু ছাড় দেয়নি।

  • দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম

দুবাইয়ের এই মাঠ টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ আয়োজন করেছে – মোট ১৩ টি। আর এখানেই টস সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। এখানে টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার জন্য কোনো অধিনায়কই দ্বিতীয়বার ভাবেনি।

কারণটা এখানে পানির মত পরিস্কার, দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। টস জয় মানেই এখানে অর্ধেক কাজ শেষ। এখানে হওয়া ১৩ টি ম্যাচের মধ্যে ১১ টি ম্যাচেই টজ জয়ী অধিনায়ক জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন।

  • টস নাকি শিশির

আসলে বড় ভুমিকাটা টসের আড়ালে শিশিরের। আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সুপার টুয়েলভে যে ২৩ টি খেলা হয়েছে, এর মধ্যে ১৮ টি দলই পরে ব্যাট করে রান তাড়া করে জিতেছে। এর মধ্যে ১৫ টা দলই টস জিতে আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

  • আছে ব্যতিক্রমও

তবে, সব ম্যাচকে এই ছকে ফেলা যাচ্ছে না। এর মধ্যে অন্যতম সুপার টুয়েলভের শেষ ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ১০ রানের হার, যেখানে শেষ ওভারে গিয়ে সব হিসাব নিকাশ ওলট পালট করে দেন ক্যাগিসো রাবাদা।

এর বাদে ইংল্যান্ড দল ২৬ রানে হারায় শ্রীলঙ্কাকে, শ্রীলঙ্কা আবার ‘ডেড রাবার’-এ হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। বাংলাদেশের দুর্দশার বিশ্বকাপে যেমন আবার টস-শিশিরের কোনো প্রভাব তেমন নেই, আবার আফগানিস্তান যে তিনটা ম্যাচে হেরেছে সেখানেও এই তত্ত্ব খাটে না।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link