রানের পর রান, সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি। এরপর হঠাতই ছন্দপতন। রান ফোয়ারায় ভাসতে থাকা বাবর আজম যেন প্রত্যাশার চাপে নিজেই ডুবে গেলেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অনেক দিন হলো ব্যাটে রান পাচ্ছেন না৷ অথচ এই ফরম্যাটেই সেরা ব্যাটারের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট নিয়ে পার করেছেন সহস্র দিনেরও বেশি৷ টানা ব্যর্থতার জেরে এই কদিন আগে নিজেরই ওপেনিং পার্টনার মোহাম্মদ রিজওয়ানের কাছে হারিয়েছেন শীর্ষস্থান।
মোটাদাগে ব্যর্থ হওয়া যাকে বলে, এবারের এশিয়া কাপে সেই চিত্রই উঠে এসেছে বাবর আজমের ব্যাটিংয়ে। পুরো টুর্নামেন্টে ৬ ম্যাচে করেছেন ৬৮ রান। গড় মাত্র ১১.৩৩। পুরো টুর্নামেন্টে যেটি ছিল ব্যাটারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন গড়। একই সাথে ধীর গতির ব্যাটিংয়ের কারণে স্ট্রাইক রেটের অবস্থা ছিল আরো খারাপ, মাত্র ১০৭.৯৩।
টানা অফফর্মের কারণে প্রভাব পড়েছে তাঁর ২০২২ সালের বছরভিত্তিক পরিসংখ্যানেও। ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যেখানে বাবর ৩৭.৫৬ গড়ে রান করেছিলেন সেখানে এখন পর্যন্ত এ বছরে এই ফরম্যাটের তাঁর ব্যাটিং গড় ১৯.১৪। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এক লাফে তাঁর ব্যাটিং গড় নেমে গিয়েছে প্রায় অর্ধেকে।
অথচ বাকি দুই ফরম্যাটে কী দুর্দান্ত বছরই না পার করছেন তিনি। এ বছরে এখন পর্যন্ত খেলা ৫ টেস্টে ৭৩.৪৪ গড়ে করেছেন ৬৬১ রান৷ যার মধ্যে দুটি শতকও আছে। আর ওয়ানডের পরিসংখ্যান তো আরো উজ্জ্বল। এ বছরে ৯ টি ওয়ানডে খেলেছেন। ৯ ম্যাচের ৮ টিতেই খেলেছেন পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস। সব মিলিয়ে ৮৪.৮৭ গড়ে রান করেছেন ৬৭৮।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাবর-রিজওয়ান জুটিকে বেশ সফল সফল জুটিই বলা যায়। ৩৪ ইনিংসে ৪৯.৭২ গড়ে ১৬৭১ রান, এর সাথে ৬ বার শতরানের জুটি। সফল এ জুটিকে নিয়ে পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে তাই খুব একটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেও দেখা যায় না৷ কিন্তু মিডল অর্ডার লাইন আপে পাকিস্তান দলটা বেশ ভঙ্গুর। ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করতে পারছেন কোনো ব্যাটার।
ঠিক এ কারণেই পাকিস্তানের সাবেক কোচ মিকি আর্থার মনে করেন, বাবর-রিজওয়ানের একই সাথে ওপেন করা উচিত না। ওপেনিংয়ের এই জায়গাটায় লেফট হ্যান্ড, রাইট হ্যান্ড কম্বিনেশন হওয়া উচিত। এমন মত অবশ্য পাকিস্তানের সাবেক পেসার শোয়েব আখতার দিয়েছিলেন।
ইসএসপিএন ক্রিকইনফো’র টাইম আউট অনুষ্ঠানে মিকি আর্থার আরো বলেন, ‘দলের স্বার্থেই বাবর আজমকে পরে ব্যাট করা উচিত। সেটা ৩ অথবা ৪ যেকোনো পজিশনেই হতে পারে। যেহেতু দলে ফখর জামান নেই, ওপেনিংয়ে তাই শান মাসুদ ভাল একটা অপশন হতে পারে। আর বাবর আজম ওপেনিং থেকে সরে আসলে ও আবার ছন্দ পেতে শুরু করবে বলে আমার মনে হয়।’
অবশ্য ব্যাটিং পজিশন নিয়ে বাবর আজমের টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যান আবার মিশ্র কথা বলে। ক্যারিয়ারে খেলা ৭৬ ম্যাচের মধ্যে ৫৫ টি ম্যাচেই খেলেছেন ওপেনিংয়ে। সেখানেই সবচেয়ে বেশি রান করেছেন(২০১১)। আর সেখানেই সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছেন(১৩১.৮৭)। কিন্তু তিনে নেমে আবার প্রায় ৫০ গড়ে ব্যাটিং করেছেন। যেখানে ওপেনিংয়ে নেমে তাঁর ব্যাটিং গড় ৪০.২২।
একে তো নিজের নামের সুবিচার করতে পারছেন না বাবর আজম। তার উপর স্ট্রাইকরেট নিয়ে প্রশ্নবাণে জর্জরিত হচ্ছেন নিয়মিতই। তাই বিশ্বকাপ শুরুর আগে বেশ চাপেই আছেন পাকিস্তানের এ অধিনায়ক। তবে চাপ কাটিয়ে স্বরূপে ফেরার সুযোগ তিনি পাচ্ছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে খেলবেন ৭ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এর আগে ১৪৩ স্ট্রাইক রেটে ৭ ম্যাচে ২৬০ রান করেছেন বাবর আজম। তাই অতীত পরিসংখ্যানের অনুপ্রেরণায় নিজেকে প্রমাণ করার মঞ্চ বিশ্বকাপের আগেই পাচ্ছেন তিনি৷ এখন সে মঞ্চ কতটা রাঙাতে পারেন সেটিই দেখার পালা। তবে বাবর ফর্মে ফিরলে সেটা তাঁর নিজের জন্য যতটা না স্বস্তির তাঁর চেয়ে বেশি স্বস্তিদায়ক ব্যাপার হবে পাকিস্তানের জন্য। কারণ বিশ্বকাপের আগে তাদের অধিনায়কের ফর্মে ফেরাটা যে বড্ড প্রয়োজন।