যুবরাজের ছয় ছক্কাই বদলে দিয়েছিল ব্রডকে!

যুবরাজ সিংয়ের কাছে ৬ বলে ৬ ছক্কা হজম করেছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। কিন্তু সেদিনের ব্রডই বাইশ গজ থেকে বিদায় নিলেন ছয় শতাধিক টেস্ট উইকেটের কীর্তিতে। এমন ফিরে আসার পেছনে নাকি ছিল ঐ দু:সহ স্মৃতিই!

যুবরাজ সিংয়ের কাছে ৬ বলে ৬ ছক্কা হজম করেছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। কিন্তু সেদিনের ব্রডই বাইশ গজ থেকে বিদায় নিলেন ছয় শতাধিক টেস্ট উইকেটের কীর্তিতে। এমন ফিরে আসার পেছনে নাকি ছিল ঐ দু:সহ স্মৃতিই।

৬ ছক্কা থেকে ৬০০ টেস্ট উইকেটের মালিক। বিব্রতকর রেকর্ড থেকে কিংবদন্তির আসনে। ব্যবধানটা ১৬ টা বছরের। অথচ তাঁর ক্যারিয়ারের শেষটা সবাই দেখে ফেলেছিলেন ঐ ১৬ বছর আগেই।

না। সেদিনের ছয় বলে ছক্কা হজম করা বোলার স্টুয়ার্ট ব্রড থেমে যাননি। এগিয়েছেন সম্মুখ গতিতে। আর যখন বাইশ গজের সাথে পথচলার ইতি টানলেন, তখন তিনি ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি পেসার আর অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক।

ব্রড বন্দনা চলছেই। সাবেক অজি পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা তো ব্রডকে ‘চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার’ তকমা দিয়েই ফেলেছেন। মাইকেল ভনের চোখে, ‘ব্রড একজন রোল মডেল।’ আর যে যুবরাজ সিংয়ের কাছে তিনি ৬ ছক্কা হজম করেছিলেন সেই তিনিও, ব্রডের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে প্রস্থানের দিনে কুর্নিশ জানালেন, কিংবদন্তি বলে অভিহিতও করলেন।   

তবে, স্টুয়ার্ট ব্রডকে নাকি পাল্টে দিয়েছিল সেদিনের ঐ বিব্রতকর ঘটনাই। ক্রিকেট থেকে অবসরের পরে তা অকপটে জানিয়েছেনও।

পুরনো তিক্ততার স্মৃতি টেনে এনে তিনি বলেন, ‘খুবই বাজে একটি দিন ছিল। কতই বা বয়স ছিল আমার, ২১ কিংবা ২২? আমি অনেক কিছু শিখেছি ঐ অভিজ্ঞতা থেকে। নিজেকে মানসিকভাবে দৃঢ় করে তুলেছিলাম। ঘুরে দাঁড়ানোর একটা তীব্র ইচ্ছা ছিল।’

‘আমি ঐ ঘটনার পর থেকে ট্রেনিং নিয়ে খুব সিরিয়াস হয়ে যাই। তার আগে আমার কোনো প্রি-বল রুটিন ছিল না, এমনকি আমার ফোকাসও ছিল না। ঐ তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে যে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তখন আমি ভালো পারফর্মার ছিলাম না।’ যোগ করেন তিনি। 

কিন্তু ব্রড এরপরেই ঘুরে দাঁড়ান সমহিমায়। তিনি বলেন, ‘আমি সেই অভিজ্ঞতার পরেই নিজেকে যোদ্ধা হিসেবে তৈরি করতে শুরু করেছিলাম। যদি আমার ক্যারিয়ারে এই ঘটনা না ঘটতো, জানি না কী হতো। তবে এটা আমাকে প্রভাবিত করেছিল। সত্যিই সেটা আমাকে অনেক কিছুতে সাহায্য করেছিল। আমার মনে হয়, ঐ স্মৃতি আমাকে আরো ভালো ক্রিকেটার হতে অনুপ্রাণিত করেছে।’

ব্রড আরো যুক্ত করে বলেন, ‘জীবন এমনই। আপনি উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাবেন। এটাই পরীক্ষার মঞ্চ। আমাদের বেন স্টোকসও এমন সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছে। কিন্তু সে দারুণ ভাবে ফিরেও এসেছে। ইংল্যান্ডের জন্য দারুণ কিছু করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আসলে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা খারাপ দিনগুলোকে পিছনে রাখতে সাহায্য করে। গত ১৫ বা ১৬ বছরে একটি জিনিস শিখেছি ক্রিকেটে ভালো দিনের চেয়ে খারাপ দিনগুলো বেশি হতে। তবে ভালো দিনগুলো বাড়াতে সেই খারাপ দিনগুলোর সঙ্গেই মোকাবেলা করতে হবে। তবে ক্যারিয়ারের সেরা দিন আসবে।’

ব্রড অবশ্য তাঁর সেরা সময়েই ইংলিশ ক্রিকেট থেকে বিদায় নিলেন। বাজবলের সময়কালে ইংলিশদের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট তো তাঁর কাছ থেকেই এসেছে। সেদিনের বিব্রতকর মুহূর্তের জন্ম দেওয়া ব্রড বাইশ গজের ঘাসগালিচা ছাড়ছেন দারুণ এক তৃপ্ততায়। হয়তো ৬ ছক্কার ঐ স্মৃতি মুছে ফেলতে পারেননি। তবে অর্জনে, গর্জনে, কীর্তিতে একটা প্রলেপ অন্তত দিতে পেরেছেন তিনি।

ব্রড নামটা এখন আর কোনো ছয় ছক্কা হজম করার বিব্রতকর রেকর্ডে বাঁধা নয়, ব্রড এখন লাল বলের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা পেসার। আর অ্যাশেজের লড়াইয়ে তো ইংলিশদের মধ্যে সেরা। 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...