এইতো সেদিন তাঁর অভিষেক। মোটে ছয় মাসের তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। কিন্তু ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়েই প্রসংশা কুড়াচ্ছেন তাওহিদ হৃদয়। স্বল্প সময়েই হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ভরসার প্রতীক।
তবে একটা জায়গায় তাঁকে নিয়ে সংশয় ছিল। নতুন চ্যালেঞ্জে ঠিক কতটুকু দৃঢ়তা দেখাতেন পারেন হৃদয়। সংশয়কে স্রেফ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। শ্রীলঙ্কাতে লঙ্কাকাণ্ড ঘটাননি তাওহীদ। কিন্তু হৃদয় ঠিকই জিতেছেন তরুণ এই ব্যাটার।
শোয়েব মালিকের বদলি খেলোয়াড় হিসেবে তাকে দলে নিয়েছিল জাফনা কিংস। কিন্তু সেই বদলি থেকে মূল খেলোয়াড় বনে যেতে সময় লাগেনি হৃদয়ের। নিজের স্বভাবজাত ব্যাটিং করেই মন জয় করেছেন হৃদয়। তবে প্রশংসায় ভেসেছেন কার্য্যকর সব ইনিংস খেলে। তাইতো শেষ অবধি তাঁকে দলে চেয়েছিল জাফনা। অথচ তার খেলার কথা ছিল মোটে ৩-৪ ম্যাচ।
শেষ অবধি হৃদয় চাইলেই খেলে ফেলতে পারতেন এবারের লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ (এলপিএল)। তবে তিনি জাতীয় দলের ক্যাম্পকে বেছে নিয়েছেন। তাছাড়া সম্মান দেখিয়েছেন নিজ বোর্ডকে। তাকে দেওয়া ছাড়পত্রের নিয়ম মেনেই তিনি দেশে ফিরেছেন। দলের সাথে অনুশীলন করেছেন তাওহিদ হৃদয়।
৬ ম্যাচে ১৫৫ রান করেছেন হৃদয়। সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক তাঁর স্ট্রাইক রেট। প্রায় ১৩৬ স্ট্রাইকরেটে তিনি সেখানটায় ব্যাটিং করেছিলেন। বাংলাদেশী ব্যাটাররা বিদেশের মাটিতে হওয়া কোন ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে শেষ কবে এত আক্রমণাত্মক ও সাবলীলভাবে খেলেছে, তা স্মৃতি হাতরে খুঁজে পাওয়া দায়।
সেই হৃদয়ের ব্যাটের সাথে বলের সংযোগটা নেটেও ঠিকঠাক। সোজা ব্যাটে যখন আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে, তখন রিভার্স সুইপও তার ব্যাটের সুইট স্পট খুঁজে নিচ্ছে। নেটে সবার বিপক্ষেই বেশ সাবলীল তাওহীদ হৃদয়। হোক সেটা ভারত থেকে উড়িয়ে নিয়ে আসা রিস্ট স্পিনার কিংবা জাতীয় দলের সতীর্থ।
আত্মবিশ্বাস আর চলতে থাকা দারুণ সময়ের মিশ্রণে তাওহিদ যেন প্রায় অপ্রতিরোধ্য। দুর্বার গতিতে ছুটে চলাই যেন এখন তার মূল লক্ষ্য। অথচ এই বছরের শুরুর দিকেও দৃশ্যপট এমন ছিল না। তিনি নিজেও সম্ভবত বিশ্বাস করতেন না অল্প সময়েই বাংলাদেশের আস্থার স্তম্ভ হবেন। পারফরমেন্সের সেই ধারা ভিনদেশেও তাকে প্রশংসা পেতে সহয়তা করবে।
এভাবেই সম্ভবত জীবন বদলে যায়। তবে বদলে যাওয়া জীবনকে সঠিক ট্র্যাকে রাখতে হয়। সম্ভাবনার প্রদীও নিভে যাওয়ার উদাহরণ তো আর কম নেই। হৃদয় হারিয়ে যাওয়ার মিছিলে যোগ না দেওয়ার ব্রতই সম্ভবত নিয়েছেন।
মাস ছয়েকের ক্যারিয়ারটা নিদেনপক্ষে এক যুগ হবে। মাঝে অবশ্য খারাপ সময় আসবে। সেই সময় পার করার পথটাও তো জানা হৃদয়ের। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপটা তো বন্ধুর এক পথ পাড়ি দিয়েই জিতেছিলেন হৃদয়রা।
এরপর অবশ্য হৃদয়কে জেতে হয়েছে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে। নিজের ব্যাটিং করার ধরণ বদলেছেন। কষ্ট করে আয়ত্ব করেছেন দরকারি সব টেকনিক। ব্যাস তারপর ভাগ্যের একটু সহয়তা। তাতেই হৃদয় আজ সর্বত্র।