ইব্রাহিম কোনাতে: ক্লপ-ডিফেন্সের নতুন অস্ত্র
৩৬ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে আরবি লিপজিগ থেকে ডিফেন্ডার কিনেছেন ক্লপ। কারণ একটাই, গত মৌসুমে ডিফেন্স নিয়ে যে পরিমাণ ঝক্কি পোহাতে হয়েছিল তাকে, তা আর চান না ‘দ্য নরমাল ওয়ান’। সে জন্য সমাধান হিসেবে ডাক পরেছে এই ২২ বছর বয়সী ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডারের। কিন্তু এর মাঝে কী এমন দেখলেন ক্লপ যে সবাইকে বাদ দিয়ে এর রিলিজ ক্লজই ট্রিগার করলেন তিনি?
গত মৌসুমটা শুরু হয়েছিল লিভারপুলের স্বপ্নের মতো। আগের মৌসুমের মাঝামাঝি এসে চিন্তায় পরে গিয়েছিল অল রেডরা, ৩০ বছর পর প্রিমিয়ার লিগ শিরোপার সামনে তারা আর এখনই মহামারীর হানা দিতে হল? মহামারীর হানা সামলে নিয়ে দর্শক ছাড়াই নিজেদের প্রথম প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা উদযাপন করেছিল লিভারপুল। স্বপ্ন ছিল পরের মৌসুমে তা বাড়িয়ে নেওয়ার।
কিন্তু সে স্বপ্নে প্রথম কাঁটা হয়ে আসে ভ্যান ডাইকের ইনজুরি। ক্লপের অধীনে লিভারপুলের সাফল্যের মূল তারকা ছিলেন ভার্জিল ভ্যান ডাইক। নেদারল্যান্ডের এই তারকাকে রেকর্ড দামে লিভারপুলে নিয়ে এসেছিলেন ক্লপ। এরপর থেকে লিভারপুলের ডিফেন্সের গ্রাফ শুধু উপরের দিকেই উঠেছে।
তাঁকে মাঝখানে স্তম্ভ বানিয়েই পুরো দলকে সাজানো শুরু করেছিলেন ক্লপ। টানা সাফল্য যখন লিভারপুলের হাতের মুঠোয় তখনই পিকফোর্ডের সাথে ধস্তাধস্তিতে এসিএল ইনজুরিতে পরেন ভ্যান ডাইক। ছিটকে যান পুরো মৌসুমের জন্য। আর সেউ সাথে শুরু হয় লিভারপুলের চোট-যাত্রা।
একে একে ইনজুরিতে পরেন জো গোমেজ, জোয়েল মাতিপের মতন ডিফেন্ডার। তাই জানুয়ারি আসার আগেই। টানা খেলার ধকল সামলাতে ইউরোপের প্রতিটি দলই হিমশিম খেয়েছে, তবে রিয়াল আর লিভারপুলের মতন অবস্থা হয়নি কারোরই। এতটাই ইনজুরি যে শীতকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতে ক্লপ ধারে দুইজন ডিফেন্ডার নিয়ে এসেছিলেন শুধু দলের ডিফেন্সে লোক দাঁড় করানোর জন্য। হেন্ডারসন, মিলনাররা তো নিয়মিতই ডিফেন্সে খেলেছেন একটা সময়।
সবমিলিয়ে এবারের উইন্ডোতে প্রথম ট্রান্সফারই হওয়ার কথা ছিল একজন ডিফেন্ডার। তাই দলবদলের বাজার খুলতে না খুলতেই বসে পরেছেন ক্লপ, কিন্ত এনেছেন নিজের পছন্দের ডিফেন্ডারকে।
কিন্তু প্রশ্ন হতে পারে এতজন থাকতে কোনাতেই কেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে একটু পেছনে ফিরে তাকাতে হবে। ক্লপ আসার পর থেকেই একটা নির্দিষ্ট দলের খেলোয়াড় তার বিশেষ পছন্দ, দলটা আরবি লাইপজিগ। এত দল থাকতে এই দলকেই আলাদা চোখে দেখার কারণ তাদের স্পোর্টিং ডিরেক্টর।
বর্তমান ফুটবল বিশ্বের হেভিওয়েট স্পোর্টিং ডিরেক্টরদের তালিকায় সবার উপরে থাকবেন রালফ রাংনিক। তার হাত ধরে উঠে এসেছে এমন কোনো প্রোডাক্টের উপর থেকে কখনই বিশ্বাস হারাননি ক্লপ। তার হাত ধরে উঠে আসা সাদিও মানে আজ লিভারপুলের ভরসা। তার কাছ থেকেই নাবি কেইটা আর তাকুমি মিনামিনোকেও কিনেছেন ক্লপ। কারণ একটাই, প্রত্যেকে জানেন কীভাবে ক্লপের গেগেনপ্রেসিংয়ের সাথে মানিয়ে নিতে হয়।
২২ বছর বয়সী ইব্রাহিম কোনাতেকে কেনার পেছনের মূল কারণও তাই একই। একজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবে যা যা প্রয়োজন সবটাই আছে তার। স্প্রিড, স্ট্রেথ, স্কিল; মাত্র ২২ বছর বয়সেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন লিপজিগে। সেখানে তাকে ডাকা হতো ফ্রেঞ্চ ভ্যান ডাইক হিসেবে। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে ঠিক কতটা স্কিলফুল হলে এমন ডাকনাম পাওয়া সম্ভব তার।
এছাড়াও ক্লপের অধীনে খেলতে হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হাই লাইন ডিফেন্সে খেলতে পারার ক্ষমতা। লিভারপুলের ডিফেন্সিভ ট্যাক্টিসই হাই লাইনে। একজন ডিফেন্ডারের জন্য শুধু স্কিল কিংবা স্ট্রেন্থ নয়, লিভারপুলের ডিফেন্সের জন্য যোগ্য হতে হলে টাইমিংটাও জরুরি।
কখন ডিফেন্সে নামতে হ্নে, কখন অ্যাটাকারদের পুশ করে বল বের করে নিতে হবে; সবটা জানা জরুরি। যেটা বার্সা-রিয়াল কিংবা গার্দিওলার ফুটবলে খুব একটা দরকার হয় না। গেগেনপ্রেসিংয়ের ক্ষেত্রে যতটা দরকার হয়।
এই মৌসুমে একের পর এক ইঞ্জুরির ধাক্কায় নিজেদের নরমাল প্রেসিং গেম থেকে অনেকটাই সরে এসেছিলেন ক্লপ। কিন্তু কোনাতের আগমন আর ভ্যান ডাইকের ফেরত আসা আবারও ক্লপকে নিজের সেরা ট্যাক্টিসে ফিরতে সাহাযত করবে।
যদিও কোনাতের পজিশন এখনও প্রথম একাদশে নিশ্চিত হয়। ক্লপের ভরসা এখনও গোমেজ-ভ্যান ডাইক জুটিতেই। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগের ইন্টেন্সিটিতে কোনাতের সুযোগ পেতে বিন্দুমাত্র চিন্তা করতে হবে না।
কয়েক বছর আগে রালফ রাংনিক বেশ বড় মুখ করে বলেছিলেন, কোনাতের ভবিষ্যৎ হচ্ছে বার্সা-রিয়ালের মতন দল। কোচ জেসে মার্শ অবশ্য তখনই তাকে ক্লপ-ঘরনার খেলোয়াড় বলে আখ্যা দিয়েছেন। মার্শের কথা ফলেছে, লিভারপুলে স্বপ্ন-যাত্রা শুরু হতে চলেছে ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডারের। এখন দেখার বিষয় নিজেকে কতটা উপরে তুলতে পারেন তিনি।