ঈশান দ্য ডায়নামাইট

পঞ্চদশ আসরের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) ব্যাট হাতে নিজের নামের প্রতি মোটেও সুবিচার করতে পারেননি। আসরে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হওয়ায় সবার নজরটা ছিল তার দিকেই। কিন্তু অর্থের এই বোঝাটা যেন চাপ হয়ে দাঁড়ায় ঈশান কিষাণের জন্য। ব্যাট হাতে তিন ফিফটির দেখা পেলেও পুরো আসর জুড়ে বাকিটা সময় তিনি ছিলেন নিষ্প্রভ। দলের আস্থা কিংবা ভরসার প্রতিদানও দিতে পারেবনি। হতাশ করেছেন দলকে, হতাশায় ডুবিয়েছেন সমর্থকদেরও।

লোকেশ রাহুলের ইনজুরি, রোহিত শর্মা বিশ্রামে – ঈশানের জন্য নিজেকে প্রমাণের জন্য বড় সুযোগ; তাও কি-না জাতীয় দলের মঞ্চে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজটা ঈশানের ভাগ্য লেখার সিরিজ বললেও ভুল হবে না। এইত মাস কয়েক বাদে অস্ট্রেলিয়ায় পর্দা উঠবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের। স্কোয়াডে জায়গা পেতে হলেও এই সিরিজটায় ঘুরে দাঁড়াতে হবে এই তরুণ তারকাকে।

রাহুল-রোহিত না থাকায় সুযোগ যেন নিজ হাতে ধরা দিয়েছে ঈশানের কাছে। আর সেই সুযোগটা সাদরে গ্রহণ করে বাজিমাতও করেছেন তিনি। সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত এক ইনিংসে প্রত্যাবর্তন করেছেন ঈশান। প্রোটিয়াদের কাছে দল হেরেছে ঠিক, কিন্তু ব্যাট হাতে তাণ্ডবের শুরুটা হয়েছিল ঈশানের হাত ধরেই।

৪৮ বলে ৩ ছক্কা আর ১১ বাউন্ডারিতে ৭৬ রান – ঈশানের জন্য স্বভাবসুলভ এক ইনিংস। পুরো আইপিএল জুড়ে ব্যর্থতা আর নিষ্প্রভতা নিয়ে মাথা নুয়ে মাঠ ছেড়েছেন। সেই ব্যর্থতা আর হতাশা দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দাপুটে প্রত্যাবর্তন দেখালেন তিনি।

পকেট ডাইনামাইট – ঈশানের নামের পাশে এই তকমাটা বেশ মানানসই। ছোটখাটো হলেও ডাইনামাইটের বিস্ফোরণে অবস্থা কি হতে পারে সেটা নিশ্চয়ই আঁচ করতে পারছেন? গায়ের গড়নে ছোটখাটো হলেও ব্যাট হাতে নিজের দিনে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেন ঈশান। মারকাটারি ব্যাটিংটাই মূলত স্বভাবসুলভ।

তবে সদ্য শেষ হওয়া আইপিএলে তিনি যেন ছিলেন উলটো পথে। মাত্র ১২০ স্ট্রাইক রেটে ৩২ গড়ে করেছিলেন ৪১৮ রান। নিলামঘরে হৈচৈ ফেলে দিয়ে প্রায় ১৫.৫ কোটি রুপিতে বিক্রি হওয়া ঈশানের নামের পাশে এই পরিসংখ্যানটা সাদামাটাই বলা চলে। তবে দলীয় অবস্থান বিচারে তিনি দলের অন্যতম সেরা পারফরমার ছিলেন। অবশ্য ব্যাট হাতে আগের আসরের অবস্থা ছিল আরও বাজে। ১০ ম্যাচে ২৬ গড়ে করেন মোটে ২৪১ রান।

তবে সব ছাপিয়ে আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে দেখা গেল চিরচেনা ঈশানের। সেই বিধ্বংসী রূপ, বোলারের উপর চড়াও হওয়া; বলকে সজোরে হাঁকিয়ে সীমানা ছাড়া করা আর নান্দনিক ব্যাটিং।

ভবিষ্যত সম্ভাবনাময় এক তারকা হিসেবেই জাতীয় দলে উঠে আসেন তিনি। খারাপ সময়টা সবার ক্যারিয়ারেই কম-বেশ আসে। ক্যারিয়ারের শুরুতেই খানিকটা ধাক্কা খেয়েছেন ঈশান। তবে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তার পারফরম্যান্স এখনও ঈর্ষনীয়। সুযোগের পূর্ণ ব্যবহার করে নিজেকে আরও একবার প্রমাণ করেছেন এই তরুণ তারকা।

অবশ্য সিরিজের বাকি এখনও চার ম্যাচ। নিজের সেরাটা দিয়ে এই সিরিজটা প্রত্যাবর্তনের সেরা গল্প হিসেবে লিখে রাখতে চাইবেন ঈশান। আর দাপুটে প্রত্যাবর্তনে অস্ট্রেলিয়া অনুষ্ঠিব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে নিজের নামের টিকিটটাও নিশ্চিত করতে চাইবেন ভারতের এই পকেট ডাইনামাইট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link