স্পিনের ভেলায় ফাইনালে ভারত

ঐতিহাসিক মোতেরায় ইংলিশদের হারিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে পা দিলো ভারত। লর্ডসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে মুখোমুখি হবে তারা। গোলাপি বলের বল লাল বলেও মোতেরায় লজ্জাজনক পরাজয় বরণ করেছে ইংলিশরা। দুই দিনের পর এবার তিন দিনে শেষ হল টেস্ট।

গোলাপি বলের তৃতীয় টেস্ট মাত্র দুই দিনেরও কম সময়ে শেষ হওয়ায় বেশ সমালোচিত হতে হয়েছিলো মোতেরার পিচ কিউরেটর-সহ বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়াকে (বিসিসিআই)। সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটাররা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একপ্রকার তুলোধুনো করেছেন ভারতী ক্রিকেট সংস্থাকে। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে দুই ইনিংসেই ইংলিশদের চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে মাত্র তিন দিনেই শেষ হলো চতুর্থ ও শেষ টেস্ট!

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালকে সামনে রেখে শেষ ম্যাচের আগের সমীকরণটি ছিলো এমন – ভারত জিতলে বা ড্র করলে ফাইনাল খেলবে তারা। অপরদিকে, যদি ইংল্যান্ড এই ম্যাচে জয় পায় তাহলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলবে অস্ট্রেলিয়া। তবে ইংলিশদের জন্য ফাইনালে যাওয়ার কোনো সুযোগই ছিলো না, তবে সুযোগ ছিলো আগের টেস্টের ভরাডুবির জবাব দেওয়া! সুযোগ ছিলো শেষ টেস্ট জয়ে সিরিজের সমতায় ফেরানো।

তবে ‘যেই লাউ সেই কদু’ – তৃতীয় টেস্টের মতো শেষ টেস্টেও চরম ব্যাটিং বিপর্যয়! এবার অবশ্য লাল বলেই, আর তাও কিনা টসের ভাগ্যটাও ছিলো ইংলিশদের সাথেই৷ টসে জিতে জো রুটের নেওয়া ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণ ই করলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা!

অক্ষর প্যাটেল ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনদের ঘূর্নিতে প্রথম দিনেই দিশেহারা ইংলিশ শিবির। নিয়মিত বিরতিতে আসা যাওয়ার মিছিলে ইংলিশরা অলআউট হয় মাত্র ২০৫ রানে! বেন স্টোকসের ৫৫ ছাড়া ফিফটি করতে পারেননি কেউই, লরেন্সের ৪৬ ও স্টোকসের ৫৫ ছাড়া বাকি নয় জন মিলে করেন মাত্র ১০৪ রান! অক্ষর তিনটি ও অশ্বিন নেন চার উইকেট।

জবাবে প্রথন ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে জেমস অ্যান্ডারসন ও বেন স্টোকসের বোলিং তোপে ৪১ রানে তিন ও ১৪৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে স্বাগতিকরা। এরপরই আসা-যাওয়ার মিছিল থেকে খানিকটা সরে গিয়ে নিজেদের রাস্তা তৈরি করেন ঋষভ পান্ত ও ওয়াশিংটন সুন্দর! সপ্তম উইকেটে দুই জনে জুটি গড়েন ১১৩ রানের। পান্তের তৃতীয় শতকে বিপর্যয় কাটিয়ে ধুকতে থাকা ইংলিশদের সামনে লিড দাঁড় করায় ১৬০ রানের।

তবে সুন্দর আক্ষেপটা মাত্র ৪ রানের! মাত্র ৪ রানের জন্য দেখা পেলেননা ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট শতকের। স্টোকসের পালটা আক্রমণে এক ওভারেই শেষ দুই উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। শেষ পর্যন্ত পান্তের ১০১ ও সুন্দরের অপরাজিত ৯৬ রানে প্রথম ইনিংসে ৩৬৫ রানে থামে ভারতের ইনিংস। সঙ্গীর অভাবে ইনিংস বড় করতে পারেননি সুন্দর।

১৬০ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিনে যখন ব্যাটিংয়ে নামে তখনি মনে হচ্ছিলো ইনিংস ব্যবধানেই হারতে যাচ্ছে ইংলিশরা। ব্যাটিংয়ে নামার পর অক্ষর-অশ্বিনের জাদুকরী ঘূর্নিতে যথারীতি আসা-যাওয়ার মিছিলে সামিল দেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। মাত্র ৩০ রানেই চার উইকেট হারায় সফরকারীরা! মনে হচ্ছিলো আউট হয়ে প্যাভেলিয়নে যেতে পারলেই যেনো বেঁচে যান তারা।

বেয়ারস্টো, রুট, স্টোকসদের ক্রিজে এক প্রকার নাচিয়েছেন অক্ষর-অশ্বিনরা। পঞ্চম উইকেটে ৩৫ রানের জুটি হলেও দলীয় ৬৫ রানেই পঞ্চম ও ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটলে ম্যাচ জয়ের অপেক্ষায় থাকেন ভারতীয়রা। সপ্তম উইকেটে ফক্স-লরেন্সের ৪৪ রানের জুটি ম্যাচে শুধুমাত্র ইংলিশদের দুই অংকে অলআউট হওয়া থেকে মান বাঁচিয়েছে তাছাড়া কিছুইনা। ১০৯ রানে সপ্তম আর ১১১ রানে অষ্টম উইকেট তুলে নিয়ে আবারো ফাইফর শিকার করেন অক্ষর প্যাটেল!

বাকি পথটাও অক্ষর-অশ্বিনদের কাধেই পাড়ি দেয় ভারত। লরেন্সের ফিফটিতে ১৩৫ রান সংগ্রহ করে ইংলিশরা। অক্ষর-অশ্বিনের জোড়া পাঁচ উইকেটে ইংল্যান্ডকে ইনিংস ও ২৫ রানে হারিয়ে ৩-১ এ সিরিজ জয়ের মাধ্যমে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনালে পা দিলো ভারত। বিরাট কোহলির দলের গন্তব্য এখন লর্ডস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link