বাবা-মায়ের জন্ম ব্যাঙ্গালুরুতে, শহরটার সাথে রাচিন রবীন্দ্রের নাড়ির টান তাই আগ থেকেই আছে। নিজের শেকড়ের কাছে প্রত্যাবর্তন তাই স্মরণীয় করে রাখতেই হতো তাঁকে, তিনি সেটাই করেছেন। যে পিচে ভারত গুটিয়ে গিয়েছে স্রেফ ৪৬ রানে, সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি খেলেছেন ১৩৪ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস।
এর মধ্য দিয়ে নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে নাম লেখালেন এই বাঁ-হাতি। ২০১২ সালে রস টেইলর ভারতের মাটিতে সেঞ্চুরি করার এক যুগ পর কোন কিউই ব্যাটার এখানে হেলমেট উঁচিয়ে ধরতে পারলেন। ‘বিশেষ’ রেকর্ডটা অবশ্য বেঙ্গালুরুর লোকাল বয়ের ঝুলিতে নিজেই রেখেছেন ক্রিকেট বিধাতা, তা নাহলে ডেভন কনওয়ে হয়তো নব্বইয়ের ঘরে আউট হতেন না।
যদিও এই ব্যাটারের পারফরম্যান্স এতটুকুতে সীমাবদ্ধ ছিল না, দ্বিতীয় ইনিংসেও নিজের দৃঢ়তার প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। ১০৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ব্ল্যাকক্যাপসরা ৩৫ রানে দুই উইকেট হারালেও আর কোন বিপদ হতে দেননি তিনি। ওয়ানডে স্টাইলে খেলেছেন, ৪৬ বলে করেছেন ৩৯ রান। তাতেই আট উইকেট হাতে রেখে নির্ধারিত লক্ষ্য টপকে যায় সফরকারীরা।
সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড ভারতের মাটিতে টেস্ট জিতেছিল ১৯৮৮ সালে, বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশ দর্শকের তখন জন্মই হয়নি। ব্যাঙ্গালুরুর টেস্টে যে ঐতিহাসিক জয় এলো এবার, সেই জয়ের নায়ক রাচিনই জন্মেছেন এগারো বছর পর!
এর আগে ভারতের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপেও রঙিন সব গল্প লিখেছিলেন তিনি। তাঁর বিশ্বকাপ অভিষেক হয়েছিল আহমেদাবাদে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সেদিন স্রেফ ৯৬ বলে ১২৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে নিজের আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন; টুর্নামেন্টের বাকি অংশে সেই বার্তা আরো শক্তশালী হয়ে উঠেছিল। সবমিলিয়ে ১০ ম্যাচে তিনি করেছিলেন ৫৭৮ রান, ভেঙ্গেছিলেন অজস্র রেকর্ড।
ভারতের মাটি যে এই তরুণের জন্য পয়মন্ত সেটা এখন অন্তত নতুন করে বলতে হবে না। চলতি টেস্ট সিরিজের বাকি দুই ম্যাচেও তাই তাঁর উপর থাকবে পারফরম্যান্সের বাড়তি চাপ। সেটা অবশ্য নিউজিল্যান্ডের জন্য ভালোই, চাপের মুখেই তো তিনি নিজের সেরাটা দিতে জানেন।