ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ মানেই যুদ্ধ, ক্রিকেট যুদ্ধ! ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই মর্যাদার লড়াই। তবে বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি মানেই একপেশে একটা লড়াই, যেখানে বরাবরই ভারত জিতে এসেছে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই ইতিহাসের চিরন্তন দ্বৈরথ!
এর মধ্যে বিশেষ করে স্মৃতিতে আলোড়ন তোলে ২০১১ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল।
একটু দশ বছর আগে ফিরে যাই, দেখে আসি শচিনের সেই আক্ষেপের ইনিংস। শচিনের সেই ম্যাচ জয়ী ইনিংস আর পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে ভারতের ফাইনালে যাওয়ার লড়াই।
মোহালিতে এদিন টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। সেবাগ-শচিনের ব্যাটে ভালো শুরু পায় মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। সেবাগ ঝড়ে দারুন সূচনা করে ভারত। দলীয় ৪৮ রানে ২৫ বলে ৩৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ওহাব রিয়াজের বলে লেগ বিফোরের শিকার হয়ে বিদায় নেন। একপ্রান্তে থেকে গম্ভীরের সাথে জুটি গড়েন শচিন। দু’জনের ব্যাটে দলীয় রান শতকের কোটা পেরোয়। দলীয় ১১৬ রানে ব্যক্তিগত ২৭ রানে বিদায় নেন গম্ভীর। এরপরই ভারতের করুন দশার শুরু!
১১৬ রানে ১ উইকেট থেকে ওহাব রিয়াজের ১৪১ রানেই নেই ৪ উইকেট! বিরাট কোহলি ৯ আর যুবরাজ সিং ফিরেন গোল্ডেন ডাকে। একপ্রান্তে তখনো ঠায় দাঁড়িয়ে শচিন, চাপের মুখে তুলে নিয়েছেন ফিফটি। অপেক্ষা শততম সেঞ্চুরির।
৫ম উইকেটে ধোনীর সাথে ৪৬ রানের জুটি গড়ার পথে ব্যক্তিগত ৮৫ রানে সাইদ আজমলের বলে আফ্রিদির হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন শচিন। শততম সেঞ্চুরির থেকে ১৫ রান দূরে থাকতেই আউট হলেন লিটল মাস্টার। মোতেরায় শচিন ভক্তদের তখন মাথায় হাত! শচিনের পর ধোনীও ফেরেন দ্রুতই! শেষ দিকে রায়নার ৩৬ রানে ভর করে শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৬০ রান করে ভারত। পাকিস্তানের পক্ষে ওহাব রিয়াজ সেদিন একাই ৫ উইকেট শিকার করেন! ওহাব ৪৬ রানে ৫টি ও সাইদ আজমল ৪৪ রানে নেন ২ উইকেট।
ভারতের পক্ষে শচিন ছাড়া সেদিন কেউই পেরোতে পারেননি পঞ্চাশের কোটা! নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও শচিনের ৮৫ এর সাথে সেবাগ-রায়নার ছোট অবদান ভারতকে চ্যালেঞ্জিং স্কোর এনে দেয়।
জবাবে লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ভালো শুরু পায় পাকিস্তান। ওপেনিং জুটিতে আসে ৪৪ রান, দলীয় ৪৪ রানে জহির খানের বলে কামরান আকমল ফেরেন ১৯ রান করে এরপরই পাকিস্তানি ব্যাটিং লাইন আপে তান্ডব চালান ভারতীয় বোলাররা! ২য় উইকেটে আসে ২৬ রান, দলীয় ৭০ রানে মোহাম্মদ হাফিজ ফেরেন ৪৩ রানে। এরপর ৩৬ রানের মাথায় নেই টপ অর্ডারের আরো দুইজন ব্যাটসম্যান! শুরু পেলেও আসাদ শফিক-ইউনিস খানরা কেউই বড় করতে পারেননি তাদের ইনিংস।
দলীয় ১০৬ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে পাকিস্তান। ৫ম উইকেটে মিসবাহ-উমর আকমল ৩৬ রানের জুটি গড়লেও দলীয় ১৪২ রানে ২৯ রান করে ফেরত যান আকমল। একপ্রান্তে ইনিংস মেরামত করতে দাঁড়িয়ে ছিলেন মিসবাহ। তবে যোগ্য সমর্থন পাননি কারোই! মাত্র ৩ রান করেই ফিরেন আব্দুল রাজ্জাক, দলীয় ১৫০ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে তখন পাকিস্তান।
৮২ বলে তখনো দরকার ১১১ রান, হাতে মাত্র ৪ উইকেট! ৭ম উইকেট আফ্রিদির সাথে ৩৪ রানের জুটি পাকিস্তানকে কিছুটা আশা দেখালেও দলীয় ১৮৪ রানে আফ্রিদিকে ফিরিয়ে সে আশায় পানি ঢেলে দেন হরভজন সিং। একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার মিছিল দেখছিলেন মিসবাহ! ওহাব রিয়াজ-উমর গুলরাও দ্রুত ফিরলে দলীয় ২০৮ রানে ৯ উইকেট হারায় পাকিস্তান। ম্যাচে জয়ের আশা শেষ, ২৩ বলে দরকার ৫৩ রান, হাতে মাত্র ১ উইকেট। ভারতীয় বোলারদের সামনে সেদিন অসহায়ত্ব বরণ করেছিলেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা। একপ্রান্ত আগলে রেখে ফিফটি তুলে নেন মিসবাহ, কিন্তু এই আগলে রাখার প্রতিদান দিতে পারেনি বাকিরা। দলীয় ২৩১ রানে ১ বল বাকি থাকতে গুড়িয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস। ৫৬ রানে বিদায় নেন মিসবাহ, সেই সাথে ওই আসরের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় হয় পাকিস্তানের!
পাকিস্তানের পক্ষে একমাত্র মিসবাহ পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলেন, বাকিদের মধ্যে হাফিজ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন। ভারতের পক্ষে জহির খান, আশিষ নেহেরা, মুনাফ প্যাটেল, হরভজন সিং ও যুবরাজ সিং প্রত্যোকেই নেন দুইটি করে উইকেট।
ইতিহাসের সেরা দ্বৈরথের লড়াইয়ে আবারো পরাজিত হয় পাকিস্তান। বিশ্বকাপের মঞ্চে এলেই যেনো এদের দম ফুরিয়ে যায়। শচিনের সেঞ্চুরির আক্ষেপটা বেশিদিন ছিলো না পরের বছর ২০১২ সালে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বিপক্ষেই সেই ঐতিহাসিক সেঞ্চুরির সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন তিনি।