চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফেভারিটের তকমা নিয়ে খেলতে নামা ভারত যেন নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে। আধুনিক টি-টোয়েন্টির পরিবর্তনশীলতার সাথে যেন তাঁরা মানিয়েই নিতে পারছে না। সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার মাইকেল ভনের মতে ভারত এক দশক আগের ভারতের মতই খেলছে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সপ্তম আসর।
নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচেই হেরেছে ভারত। চির প্রতিদ্বন্দী পাকিস্তানের কাছে দশ উইকেটে এবং পরবর্তী ম্যাচে আট উইকেটে হেরেছে নিউজিল্যান্ডের কাছে। এতেই শঙ্কা জেগেছে তাঁদের সেমিফাইনালে উঠতে না পারার। তাঁদেরকে অপেক্ষায় থাকতে হবে পাকিস্তান কিংবা নিউজিল্যান্ডের হোঁচট খাবার এমকি তাকিয়ে থাকতে হবে আফগানিস্তানের দিকেও।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে শেষ হয়েছিল ভারতে সবচেয়ে আলোচিত ও জাকজমকপূর্ণ ফ্রাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। সুতরাং বিশ্বকাপ দলে থাকা প্রত্যেক খেলোয়াড়েরা পেয়েছিল নিজেদের প্রস্তুত করে নেবার সুবর্ণ সুযোগ। বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি লিগ বিবেচনায় আইপিএল উপরের সাড়িতেই থাকবে তাতে দ্বিধা নেই।
কিন্তু ভারত জাতীয় দল রীতিমত করেছে বিস্মিত। তাঁদের দলটি কাগজে কলমে সেরা এবং প্রতিভাবান খেলোয়াড়ে পূর্ণ। তবুও কেমন জানি খেই হারিয়ে ফেলছে দলটি। গত ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিং বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয় ভারতকে, দলে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, ঈশান কিষাণের মতো ব্যাটার থাকা সত্ত্বেও।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় পাওয়ার-প্লে শেষে ৩৫ রানে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলা ভারত পরবর্তী আট ওভারে একটি বাউন্ডারিও আদায় করতে পারেনি। এতে ভারতের ব্যাটিং এর নিন্দা করা থেকেও বেশি প্রসংশার দাবি রাখে ব্ল্যাক ক্যাপ বোলার ইশ সোধি, মিশেল স্যান্টনার ও অ্যাডাম মিলনে। সপ্তম থেকে পঞ্চদশ ওভারের মধ্যে ব্ল্যাক ক্যাপ স্পিনাররা রান দিয়েছেন মোটে ৩২টি। ভারতের এমন ব্যাটিং প্রদর্শনের নিন্দা করেন মাইকেল ভন তাঁর অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ডে। সেখানে লেখেন, ‘ভারত ২০১০ সালের ক্রিকেট খেলছে , ক্রিকেট এগিয়ে গিয়েছে।’
মাইকেল ভনের এমন মতামত প্রকাশ নেহায়েৎ নিন্দা জন্যে নিন্দা করা না। এটা সত্যিকার অর্থেই সমালোচনা হিসেবে বিবেচনা করাই শ্রেয়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এত প্রতিভাবান ব্যাটিং অর্ডার থাকার পরও ভারতের ব্যাটিং ছিল প্রচণ্ড রকমের দৃষ্টিকটূ। তাঁদের ইন্টেট কিংবা বডি ল্যাংগুয়েজ কোনটাই যেন ঠিক ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করেনি। যেই ভারতকে সবসময় আগ্রাসীরুপেই দেখেই অভ্যস্ত পুরো ক্রিকেট বিশ্ব।
ভারতের এমন অসহায়ত্ব এবং নেতিবাচক মানসিকতা উল্লেখ করে সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক ভন তাঁর দ্বিতীয় টুইটে লেখেন, ‘ভারত চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পথে। এই প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের মাইন্ডসেট এবং অ্যাপ্রোচ এখন পর্যন্ত নেতিবাচক এবং ভুল।’
ভারত শেষমেশ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১১০ রানের ছোট্ট পুঁজি পায় রবীন্দ্র জাদেজার ২৬ রানের ইনিংসের উপর ভরসা করে। এদিন ভারতকে রুখে দেওয়ার মূল কাজটা করেন ট্রেন্ট বোল্ট ও ইশ সোধি। তাঁরা যথাক্রমে তিনটি ও দুইটি করে উইকেট নেন ভারতের। এদিন ভারতের বিপক্ষে ইশ সোধি ১৮ তম টি-টোয়েন্টি উইকেট শিকার দখল করে নেন ভারতের বিপক্ষে উইকেট শিকারি তালিকার শীর্ষস্থান টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। অন্যদিকে বোল্ট তুলে নেন নিজের পঞ্চাশতম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি উইকেট।
অপক্ষান্তরে ভারতের বোলারদেরকে হতাশায় ভাসিয়ে মাত্র ১৪.৩ ওভারে জয় তুলে নেয় কিউইরা। মাত্র দুই উইকেট খরচায় নিউজিল্যান্ড পৌঁছে যায় জয়ের বন্দরে। এই জয়ে নিউজিল্যান্ড শিবিরে স্বস্তির বাতাস বয়ে গেলো ভারতে পড়ে গিয়েছে চিন্তার অতল গহ্বরে। দেখবার পালা শেষমেশ ভারত এই বিশ্বকাপে কামব্যাক করে সেমিফাইনালে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে কি না।