ভারত-জিম্বাবুয়ে ও ক্রিকেটের সূর্যগ্রহণ

পূর্বে রোডেশিয়া নামে পরিচিত দেশটির এতোদিন বিশ্বক্রিকেটে ধুঁকে ধুঁকে এগিয়ে চলা সম্ভাবনাময় একটি দেশ হিসেবেই কেবল পরিচিতি ছিল। বলছিলাম জিম্বাবুয়ের কথা। দেশটি ক্রিকেট প্রেমী হলেও নেই তেমন ক্রিকেটীয় জৌলুস।

তেমনি নেই ক্রিকেটারদের জৌলুস ও। যে দেশের ক্রিকেটাররা ও এক্কেবারে সাদামাটা জীবনযাপন করে থাকেন। দারিদ্র্য জর্জরিত একটি দেশ। অন্যান্য ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোতে যেমন ক্রিকেটীয় পেশা একটি রাজকীয় পেশা হিসেবে বিবেচিত হয়, সেখানে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটীয় দশা বড্ড বেশি মলিন।

এইতো বছরখানেক আগেই জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার রায়ান বার্ল নিজের ছেড়া জুতোর ছবি পোস্ট করে আক্ষেপ করেছিলেন টুইটারে। একজোড়া ভালো জুতা পর্যন্ত তাঁদের কপালে জুটছিলো না। তাইতো টুইটারে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটারদের করুণ দশার চিত্র তুলে আকুতি করেছিলেন ক্রিকেট সরঞ্জাম স্পন্সরের জন্য।

দুর্নীতির বেড়াজালে জর্জরিত জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট। ফলশ্রুতিতে দেশটির ক্রিকেটে উন্নতির দেখা মেলে না। পরে অবশ্য বার্লের ওই পোস্টের পর তিনি ও ক্রিকেটাররা অবশ্য স্পন্সর পেয়েছিলেন ‘পুমা’ থেকে। তবে তাতে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের ‍দুর্দশা খুব বেশি কাটেনি। এমনকি বার্লের ওই আচরণকে ভালোভাবে নেয়নি ক্রিকেট বোর্ড।

চলছে ভারত বনাম জিম্বাবুয়ে সিরিজ। ইতোমধ্যেই তিন ওয়ানডে সিরিজটিতে ভারত ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে আছে। আজ সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটিতে একদিকে জিম্বাবুয়ের চেষ্টা থাকবে হোয়াইট ওয়াশ থেকে নিজেদের রক্ষা করা। যদি দল হিসেবে বিবেচনা করি জিম্বাবুয়ের তুলনায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অবস্থা দারুণ রমরমা। আর দল হিসেবে ভারত কতটা শক্তিশালী দল তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। আজকের ম্যাচেই নির্ধারিত হবে ভারতের ‘জিম্বাবুয়েগ্রহণ’ সম্পন্ন হবে কিনা।

ওদিকে গত কয়েক বছরে জিম্বাবুয়ের খেলোয়াড়রা সাসপেনশন সহ্য করেছে, বিশ্বকাপ মিস করেছে, কোভিড ১৯-এ জর্জরিত হয়েছে, সফর বাতিল করেছে এবং তাঁদের বেতন কমছে। যেখানে ভারতের ক্রিকেটাররা তাদের বেতনের চেক কোটির হিসেবে গণনা করেন, সেখানে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটারদের বেতনের দৌড়টা হাজারের ঘরেই সীমাবদ্ধ থাকে।

এই যে ধরুন চলতি সিরিজেই ম্যাচ ফি হিসেবে ভারতীয় ক্রিকেটাররা যেই অর্থ পেতে চলেছেন, জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররা তাঁর দশ ভাগের একভাগ সমপরিমাণ অর্থ পাবেন। যেখানে ভারতীয় ক্রিকেটারদের কাছে বিদেশি দামী ব্র্যান্ড, ল্যাম্বরগিনি, বিদেশে অবকাশযাপন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার, সেখানে একজন শীর্ষ জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটারের কাছে এইসব কেবল স্বপ্ন।

ভারতের রয়েছে আইপিএল (আইপিএল)। যে ফ্রাঞ্চাইজি লিগ মানেই কাড়ি কাড়ি টাকা, বিদেশী নামীদামি ক্রিকেটারের সমারোহ, স্পন্সররা, ব্রডকাস্টাররা যে আসরের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। অন্যদিকে জিম্বাবুয়েরও এনপিএল রয়েছে।

আইপিএলের তুলনায় প্রায় জৌলুসহীন হলেও এই লিগ জিম্বাবুয়ের মানুষরা বিনা পয়সায় দেখার সুযোগ পায়। এই আসরের প্রাইজমানিটাও বড্ড কম আইপিএলের তুলনায়। অথচ জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ ও ভালোবাসা আপনি কখনো টাকা দিয়ে পরিমাপ করতে পারবেন না।

তাঁদের শহরে জলের অভাব, রাস্তায় বাতি নেই, জিনিসপত্রের ঘাটতি, মুদ্রাস্ফীতি এবং দেশের আর্থিক দুর্দশার মোকাবেলা করতে হয় প্রতিনিয়ত। এতসব কিছু তোয়াক্কা না করেও জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররা প্রাণভরে খেলে যান। বিপন্ন জীবনের আক্ষেপের জবাবটা মাঠের ক্রিকেটেই দিতে চান।

তাঁদের ক্রিকেটীয় আভিজাত্যের কমতি থাকলেও, ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসাটা অপরিসীম। ক্রিকেট দিয়েই বিশ্ব জয়ের বাসনা রাখেন তাঁরা। সিকান্দার রাজার মতো বাস্তবজীবনের জৌলুসহীন রাজারা বাইশ গজের রাজা কিভাবে হয়ে উঠতে হয় তা খুব ভালোভাবেই জানেন বটে। যতই সেসব বীরত্বের শেষে সব সময় জয় লেখা না থাকুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link