সময়ের আগে অনন্ত আড়ালে

দেশের হয়ে সবাই যুদ্ধে যায় না। দেশের জন্য সবাই প্রাণও দেয় না। তবুও দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবার পন্থা কিন্তু কম নেই। তেমনই এক পন্থা খেলাধুলা। বিশেষ করে এই উপমহাদেশের প্রতিটা শিশুরই স্বপ্ন থাকে জাতীয় ক্রিকেট দলের জার্সিটা একবার হলেও গায়ে জড়ানোর। ভারত সেদিক থেকে সবার চাইতেই এগিয়ে। প্রায় ১২০ কোটি জনসংখ্যার প্রতিনিধি হওয়া তো আর চাট্টিখানি কথা নয়।

তবে দেশটির ক্রিকেট কাঠামো বেশ শক্ত। আর জাতীয় দলের জায়গা করে নেওয়ার পথটাও বেশ সংকীর্ণ। তবে সে সংকীর্ণ পথটা এক একজন মহাতারকাকেই নিয়ে আসে দলে। তবে ব্যতিক্রমী একটা শর্টকাট রাস্তায় পরিণত হয়েছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। এখানে পারফর্ম করতে পারাটাও অবশ্য কম কথা নয়। সেখানকার পারফরমেন্স জাতীয় দলে আসার পথটা একটু সুগম করে দেয়।

তবে সে সুগম পথ ধরে, অনেকেই সময়ের আগে চলে আসেন ভারতের জাতীয় দলে। তাঁদের কেউ কেউ হয়ত টিকে যান, তবে সে সংখ্যাটা নেহায়েৎ কম। যারা ছিটকে যান বা যাচ্ছেন তাঁদের কেউ কেউ হয়ত আর কখনোই জাতীয় দলের জার্সিটা গায়ে জড়াতে পারবেন না।। পরিপক্কতার বড্ড অভাবই তাঁদেরকে দূরে ঠেলে দেয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। আজকে তেমন কিছু খেলোয়াড়দেরকে ঘিরেই হবে আলোচনা।

  • বরুণ চক্রবর্তী

আইপিএল ও তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত পারফরমেন্সের ফলস্বরুপ জাতীয় দলে নিজেকে আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন বরুণ চক্রবর্তী। মূলত আইপিএল দিয়েই নজর কাড়েন তিনি। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে এক মৌসুমে ১৮ উইকেট নিয়ে আসার আলো দেখাচ্ছিলেন বরুণ। ২০২১ আইপিএলে তিনি সে কীর্তি গড়েন। এরপরই মূলত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জাতীয় দলে অভিষেক হয় তাঁর।

শুরুর সিরিজটাতে ভালই করেন তিনি। মিডল ওভারে বল করা বরুণ নিজের ইকোনমি রেটটা রেখেছিলেন পাঁচের ঘরে। কিন্তু তিনি নিজের সেই পারফরমেন্সের ধারা ধরে রাখতে পারেননি। অগ্যতা তিনি ছিটকে যান জাতীয় দল থেকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি তাঁর ছিল না বলাই যায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কেবল একটি উইকেটের দেখা পান তিনি। তাইতো অকালেই ঝড়ে পড়লেন। আবার দলে ফেরার সম্ভাবনাও অতীব ক্ষীণ।

  • বিজয় শংকর 

হঠাৎ করেই জাতীয় দলের নির্বাচকদের কলমের কালি লিখে ফেলে বিজয় শংকরের নাম। তাঁরা সম্ভবত খুব বেশি বিমোহিত ছিল এই পেস বোলিং অলরাউন্ডারের। ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করেই তিনি নজর কাড়াতে সুযোগ পেয়েছিলেন। বিশ্বকাপের আগে জাতীয় দলের জার্সিতে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেই সেই সমীহ আদায় করেছিলেন। বদলে সুযোগ পেয়ে যান ২০১৯ বিশ্বকাপের মত মেগা ইভেন্টে। তবে সে সুযোগটা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন তিনি।

২০১৯ বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেলেও তিনি কাজের কাজ তেমন কিছুই করতে পারেননি। তিন ম্যাচে খেলতে নেমে কেবল ৫৮ রান সংগ্রহের পাশাপাশি দুইটি উইকেট শিকার করতে পেরেছিলেন বিজয় শংকর। এরপর পায়ের আঙুলের ইনজুরি তাঁকে ছিটকে দেয় জাতীয় দল থেকে। এরপর আর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানোর সুযোগটা পাননি তিনি। সময়ের আগেই সম্ভবত সবচেয়ে বড় সুযোগটা পেয়েছিলেন বিজয় শংকর।

  • কৃষ্ণাপ্পা গৌতম

আরও এক আইপিএল প্রোডাক্ট ছিলেন কৃষ্ণাপ্পা গৌতম। এই অলরাউন্ডার তিনটি ভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজির হয়ে টুর্নামেন্টটি খেলেছিলেন। তবে রাজস্থান রয়্যালসে থাকাকালীন সময়ে তিনি নজরে আসেন। তাঁদের হয়ে মিডল ওভারে ব্রেকথ্রু এনে দেওয়ার কাজটা ভালই করছিলেন কৃষ্ণাপ্পা। তাছাড়া শেষ দিকে ব্যাট হাতে ঝড়ো সব ইনিংস খেলেও দলকে নিয়ে গিয়েছেন জয়ের বন্দরে।

সে সুবাদে জাতীয় দলেও ডাক এসে যায় তাঁর। তাঁর অভিষেকও হয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। তিনি একমাত্র পাওয়া সুযোগের সদ্ব্যবহারটা করতে ব্যর্থ হন। আট ওভারে ৪৯ রান খরচায় কেবল একটি মাত্রই উইকেট শিকার করতে পেরেছিলেন। ব্যাট হাতেও ছিলেন চরম ব্যর্থ। কেবল দুইটি রান এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে।

  • শিভাম দুবে 

আইপিএল থেকে উঠে আসা তারকাদের সংখ্যা কম নয়। তবে সেখান থেকে জাতীয় দল এবং ছিটকে যাওয়ার গল্পগুলোর একটা লম্বা ফিরিস্তি তৈরি করা যায়। এই যে যেমন আরেক উদাহরণ শিভাম দুবে। অলরাউন্ডার দুবে নিজেকে ভারত জাতীয় দলে মেলে ধরতে পারেননি। সকল সম্ভাবনার প্রদীপ নিভিয়ে একপ্রকার আড়ালেই চলে গেলেন তিনি।

এলেন আর চলে গেলেন তেমনটাও ঘটেনি তাঁর সাথে। বেশ কিছু ম্যাচ খেলার সুযোগ এসেছিল তাঁর। তবে একটি বাজে ওভার তাঁকে যেন খলনায়কে পরিণত করে। নিউজিল্যান্ডের দুই ব্যাটার টিম সেইফার্ট ও রস টেইলারের যৌথ প্রযোজনায় চিত্রনাট্যের বাইরেই চলে যান শিভাম। এই দুই ব্যাটার তাঁর এক ওভারে নিয়েছিলেন ৩৪ রান। ঐ শেষ।

  • উমরান মালিক

জোরে বল করতে পারেন। আর সেটা ধারাবাহিকভাবে করতে পারেন। ব্যাস আলোচনায় চলে এলেন উমরান মালিক। তিনি বনে গেলেন আগামী দিনের কাণ্ডারি। তাকে নিয়ে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। অগ্যতা আইপিএলের রাস্তা ধরে তিনি হাজির জাতীয় দলে। তবে অভিজ্ঞতার অভাবটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁকে বেশ ভুগিয়েছে। প্রস্তুতির অভাবটাও ছিল স্পষ্ট।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শুধু গতি দিয়ে অন্তত টিকে থাকা কঠিন। উমরানের লাইন লেন্থ নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে। তিনি ঠিক খেই হারিয়ে ফেলেন। আর তাছাড়া গতির সঠিক ব্যবহারটাও যেন করতে পারেন না। আরেকটু পরিপক্ক হয়েই তবে তাঁর আসা উচিৎ ছিল জাতীয় দলে। হয়ত হারিয়ে যাওয়াদের দলে উঠে যাবে তারও নাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link