ভারতীয় রক্তের ‘ভিনদেশি’ নেতা

ক্রিকেট ভারতে কেবল খেলা নয়, খেলার থেকেও বেশি কিছু। বিশ্বের ইতিহাসে সেরা সব ক্রিকেটাররা এসেছেন ভারত থেকে। তবে, সবাই কিন্তু ভারতের হয়ে খেলেননি। ভারতীয় বংশদ্ভুত অনেকেই অন্যান্য দেশের হয়ে খেলেছেন, সুনামও কুড়িয়েছেন। অনেকে তো অধিনায়কত্ব করেও সফল হয়েছেন। ভারতীয় বংশদ্ভুত সেই সব সফল অধিনায়কদের নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।

  • নাসের হুসেইন (ইংল্যান্ড)

নব্বই দশকে বড় দু:সময়ে তিনি হাল ধরেছিলেন ইংল্যান্ড দলের। নিজের সময়ে তিনি দলটাকে একটু ভদ্রস্ত রূপ দিতে পেরেছিলেন। ৪৫ টি টেস্ট দলকে নেতৃত্ব দিয়ে নাসির হুসেইন ১৭ টি ম্যাচ জিতেছেন।

নাসির হুসেইনের জন্ম ভারতের চেন্নাইয়ে। ১৯৭৫ সালে তিনি ভারত ছাড়েন। থ্রি লায়ন্সদের হয়ে অভিষেক হয় ১৯৮৯ সালে। ২০০৪ সালে খেলোয়াড়ী জীবনকে বিদায় বলা নাসের এখন পুরোদস্তর ধারাভাষ্যকার।

  • রোহান কাহ্নাই (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

৭০-এর দশকে সত্যিকারের কিংবদন্তি কয়েকজন ক্রিকেটারের ওপর ভর করে বিশ্বসেরা হয়ে উঠেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। সেই ক্যারিবিয়ান দলের এক কিংবদন্তি হলেন রোহান কাহ্নাই। ভারতীয় বংশদ্ভুত এই ক্রিকেটারের অভিষেক ১৯৫৭ সালে।

অধিনায়ক হিসেবে তিনটি জয় ও সাতটি ড্র নিয়েই তিনি অবসরে চলে যান। যাওয়ার আগে করে যান ছয় হাজার রান। তিনি একাধারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ওয়ানডে অধিনায়কও বটে। কাহ্নাইয়ের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হল ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল।

  • হাসিম আমলা (দক্ষিণ আফ্রিকা)

আধুনিক ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন হাসিম আমলা। আমলাদের পূর্ব পুরুষের বসবাস ছিল ভারতের গুজরাটে। আমলার দাদা ছিলেন সেখানকার সুরাট শহরের বাসিন্দা। আমলার বাবারা তিন ভাই। তিন ভাই তিন দেশে থাকেন। বলাই বাহুল্য, এর মধ্যে আমলার বাবা মোহাম্মদ এইচ. আমলা থাকেন দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে। সেখানেই ১৯৮৩ সালে জন্ম হয় হাশিম আমলার। চার বছরের বড় ভাই আহমেদ আমলার মত হাশিমও ওই ডারবানেই ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন বড় ক্রিকেটার। হাশিম আমলার বাকি দুই চাচার মধ্যে একজন থাকেন আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলসে। আরেকজন থাকেন ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে।

আধুনিক ক্রিকেটের গ্রেটদের একজন আমলা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৪ টি টেস্ট নেতৃত্ব দিয়েছেন। চারটিতে জিতেছেন, চারটি হেরেছেন। এছাড়া নয়টি ওয়ানডে ও দু’টি টি-টোয়েন্টিতেও অধিনায়কত্ব করেন।

  • আশিষ বাগাই (কানাডা)

দিল্লীতে জন্ম নেওয়া এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান খেলেছেন কানাডার হয়ে। তিনি দলটিকে এক যুগের বেশি সার্ভিস দিয়েছেন।

এর মধ্যে ছয় বছর ছিলেন অধিনায়ক। অধিনায়ক হিসেবে খেলেছেন ৬২ টি ওয়ানডে ও নয়টি টি-টোয়েন্টি। জয় পেয়েছেন চারটি ম্যাচে। ২০১৪ সালে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান।

  • আসিফ করিম (কেনিয়া)

কেনিয়ার বন্দর নগরী মম্বোসার বাসিন্দা। তবে, তিনি ভারতীয় বংশদ্ভুত। পূর্বপুরুষরা এসেছেন। আসিফ করিম কেনিয়ার ইতিহাসের সেরা অধিনায়ক। দলকে ২১ টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়ে জিতেছেন ছয়টিতে।

২০০৩ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে কেনিয়া। সেবার অবসর ভেঙে ফিরে দলকে নেতৃত্ব দেন আসিফ। সেই বিশ্বকাপের অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনাল হারলেও সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন আসিফ।

  • আংশুমান রাঠ (হংকং)

আংশুমান রাঠের জন্ম হংকংয়ে। তবে, তাঁর পূর্বপুরুষ ভারতের ভূবনেশ্বরের। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে তিনি হংকংয়ে দু’টি ম্যাচে নেতৃত্ব দেন। এর মধ্যে একটা ম্যাচ ছিল ভারতের বিপক্ষে। সেটা খেলোয়াড় ও অধিনায়ক হিসেবে তাঁর অভিষেক ম্যাচ। তাতে তিনি ৭৩ রানের একটা ইনিংসও খেলেন তিনি।

আংশু এখন হংকংয়ের পাট চুকিয়ে চলে এসেছেন ভারতে। নাগপুরে অনুশীলন করছেন। তিনি এখন ভারতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখছেন।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link