স্পিনের দুর্বলতাই আইপিএলের অর্জন?

একটা লজ্জাজনক পরিস্থিতি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পরবর্তী সময়ে ভারতকে সহ্য করতে হয়েছে এক ঐতিহাসিক পরাজয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে টিম ইন্ডিয়া। প্রায় ২৭ বছর বাদে তাদেরকে সিরিজ পরাজয়ের স্বাদ দিতে পেরেছে লংকানরা। যার পুরো কৃতিত্ব লঙ্কান স্পিনারদের।

শেষ ম্যাচ তরুণ দুনিথ ওয়াল্লালাগে একাই ভারতের তরী ডুবিয়েছেন। ৫ উইকেট তুলে নিয়ে দলকে এনে দিয়েছেন ১১০ রানের বিশাল জয়। সে পরাজয় খানিকটা চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে ভারতের ড্রেসিংরুমে। গৌতম গম্ভীর এবার যেন সত্যিকার অর্থেই গম্ভীর এমন পরাজয়ের পর। অন্যদিকে রোহিত শর্মাও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।

মূলত স্পিন বোলারদের উপর চড়াও হতে পারেনি ভারত। যার ফলস্বরুপ এমন পরাজয় সঙ্গী হয়েছে ভারতের। তেমনটিই মনে করেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। স্পিনিং ট্র্যাকে স্পিনের প্রতিরোধ বা প্রতিকার হচ্ছে সুইপ শট। কিন্তু ভারতের ব্যাটাররা স্কোয়ার অব দ্য উইকেটে ঠিকঠাকভাবে খেলতেই পারেননি। সেখানেই আসলে জয়-পরাজয়ের ফারাক সৃষ্টি হয়েছে।

রোহিত লঙ্কান ব্যাটারদের প্রশংসা করে বলেন, ‘তারা ধারাবাহিকভাবে সুইপ শট খেলেছে, তাদের সুযোগ লুফে নিয়েছে। আমরা যতটা প্রত্যাশা করেছিলাম তারা নিজেদের পায়ের ব্যবহার ততটা করেনি। তারা শুধু সুইপ করে ডিপ স্কোয়ার লেগ ও মিডউইকেট ফিল্ডারদের মাঝে ফাঁকা জায়াগা তৈরি করেছে। আমরা ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে তেমন করতে পারিনি। আমরা সুইপ, রিভার্স সুইপ অথবা প্যাডেল সুইপের যথাযথ ব্যবহার করতে পারিনি। আমরা আমাদের পা বরং বেশি ব্যবহার করেছি। সেটাই ছিল পার্থক্য।’

ভারতীয় ব্যাটাররা স্পিন বোলারদের বিপক্ষে বেজায় খাবি খেয়েছে। অথচ সাধারণত তাদেরকে প্রতিপক্ষ বোলারদের উপর চড়াও হতে দেখা যায়। কিন্তু স্পিনিং উইকেটে শ্রীলঙ্কার ব্যাটাররা বেশ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। শেষ ম্যাচে আভিস্কা ফার্নান্দো ও কুশল মেন্ডিস ৮২ রানের জুটি গড়েন। তাছাড়া ৯৫ রান আসে আভিস্কার ব্যাট থেকে।

অন্যদিকে, ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান এসেছিল রোহিতের ব্যাট থেকে। ৩৫ রান করেছিলেন ভারতের অধিনায়ক। তিনি অবশ্য নিজের স্বভাবজাত ভঙ্গিমায় ব্যাটিং করেছেন আউট হওয়ার আগে অবধি। কিন্তু স্পিনারদের বিপক্ষে এই দুর্বলতার সমাধান করা প্রয়োজন ভারতের। সাম্প্রতিক সময়ে স্পিন দুর্বলতা প্রকট আকার ধারণ করেছে ভারত দলে।

এর মূল কারণ হতে পারে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) উইকেট। স্পোর্টিং উইকেট নয়, বরং আইপিএলের উইকেটগুলো পরিণত হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গে। ব্যাটারদের খুব বেশি পরীক্ষার মধ্যে পড়তে হয় না। ব্যাটাররা কঠিন সময়ের প্রস্তুতিও নেন না। সেজন্য ভারতীয় ব্যাটারদের স্পিন দুর্বলতা স্পষ্ট হচ্ছে সময়ের সাথে সাথে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে নেট অনুশীলনের কথা বলেছেন রোহিত।

কিন্তু নেট অনুশীলনই তো শেষ কথা নয়, সেটাও ভাল করেই জানা। প্রতিযোগিতার মঞ্চে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হলেও কেবল শিক্ষা হয় পরিপূর্ণ। ভারতকে এবার সে দিকেও খানিক নজর দিতে হবে। এই দুর্বলতা বয়ে বেড়ালে নিশ্চয়ই ভারতের ক্রিকেট হারিয়ে ফেলবে নিজেদের অপ্রতিরোধ্য সত্ত্বা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link