দেশের ক্রিকেট কাঠামোর মধ্যে থাকা যে কোনো ভারতীয় ক্রিকেটারই বাইরের দেশের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে অংশ নিতে পারেন না। একদম শুরু থেকেই নিয়ম করে রেখেছে দেশটির ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই)।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের পর বাইরের লিগে খেলতে হলে সেই ক্রিকেটার পরবর্তীতে আর আইপিএলে বা দেশটির অন্য কোনো ঘরোয়া ক্রিকেট লিগে অংশ নিতে পারবেনা। যার কারণে ভারতীয় ক্রিকেটারদের বাইরের দেশের লিগে অংশ নিতে দেখা যায় না। তবে, অবসরের পর কেউ কেউ ভিনদেশি লিগে খেলার সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন। তাঁদের নিয়েই এবারের আয়োজন।
- জহির খান
ভারতের সর্বকালের সেরা বোলারদের একজন জহির খান। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন বাঁ-হাতি এই পেসার। পরবর্তীতে তিনি আইপিএলে দিল্লী ক্যাপিটালসের হয়ে অধিনায়কত্বও করেন৷ এরপর ২০১৭ সালে তিনি আইপিএল থেকেও অবসর গ্রহণ করেন৷ ভারতের ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের পিছনে অন্যতম অবদান ছিলো জহির খানের।
পরবর্তীতে ২০১৯ আবুধাবি টি-টেন লিগে দিল্লী বুলসের হয়ে খেলার সুযোগ পান তিনি। বর্তমানে তিনি আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া কিছু ম্যাচে তিনি ধারাভাষ্য করেন।
- মানপ্রিত গনি
আইপিএলে মানপ্রিত গনি প্রথম কয়েক আসরে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলেন। পরবর্তীতে দূর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে জাতীয় দলেও জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকেই বোলিংয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন তিনি। আইপিএলে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে দল পেলেও নিয়মিত ম্যাচ পাননি তিনি। এরপর ২০১৯ সালে গনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এবং আইপিএল থেকেও অবসরের সিদ্ধান্ত নেন।
এরপরই কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগে টরন্টো ন্যাশনালের হয়ে খেলতে চুক্তিবদ্ধ হন। পরবর্তীতে এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার কলম্বো কিংসের হয়ে লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগেও (এলপিএল) অংশ নেন।
- প্রবীন তাম্বে
সবচেয়ে বয়স্ক হিসেবে আইপিএল খেলা ক্রিকেটার হলেন লেগ স্পিনার প্রবীন তাম্বে। ২০১৭ সালে তিনি সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে ক্রিকেট খেলেন। এরপরের দুই মৌসুমেই নিলামে অবিক্রিত ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে তাম্বে সিন্ধিসের হয়ে আবুধাবি টি-টেন লিগে অংশগ্রহণ করেন। আর সেখানে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টি-টেনে পাঁচ উইকেট শিকার করেন তাম্বে!
এরপর ২০২০ আসরে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলেন তাম্বে, বিসিসিআইয়ের অনুমতি না থাকার পরও। অপর দিকে ভারতের বাইরে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলার কারণে বিসিসিআই তাকে আইপিএলে নিষিদ্ধ করে।
- ইরফান পাঠান
তাঁর সময়ের সেরা বাঁ-হাতি স্যুইং বোলার ছিলেন ইরফান পাঠান। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে প্রথম ওভারেই তার হ্যাটট্রিকের রেকর্ড এখনো ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে তাজা স্মৃতি হয়ে আছে। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাঁর অবদানও ছিল অনেক। আইপিএলে সবশেষ তিনি ২০১৭ সালে গুজরাট লায়ন্সের হয়ে খেলছিলেন।
পরবর্তীতে নিলামে অবিক্রিত থাকায় ২০২০ সালে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে এলপিএলে ক্যান্ডি টাস্কার্সের হয়ে নাম লেখান। বর্তমানে তিনি স্টার স্পোর্টস নেটওয়ার্কের হয়ে ধারাভাষ্য প্যানেলে নাম লিখিয়েছেন।
- যুবরাজ সিং
ভারতের সর্বকালের সেরাদের একজন যুবরাজ সিংয়ের বিপুল সংখ্যাক ভক্ত পুরো ক্রিকেটবিশ্বেই রয়েছে। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে তিনি ছয় বলে ছয় ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ড গড়েন। তার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ২০১১ বিশ্বকাপেও চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত।
২০১৯ আসর পর্যন্ত আইপিএলে অংশ নেন যুবরাজ সিং। এরপর আইপিএল থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি কানাডায় অনুষ্ঠিত গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি কাপে টরন্টো ন্যাশনালের হয়ে অংশ নেন। আবুধাবি টি-টেন লিগে মারাঠা অ্যারাবিয়ান্সের হয়ে ২০২০ আসরে খেলেন তিনি।
- মুনাফ প্যাটেল
সাবেক এই ভারতীয় পেসার জাতীয় দলের হয়ে ১৩ টি টেস্ট, ৬০ টি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলেন। ভারতের হয়ে ২০১১ সালের বিশ্বকাপও জিতেন তিনি। তবে তিনি অবসর নেন ২০১৮ সালে।
এরপর তিনি মনোযোগ দেন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে। আবুধাবির টি-টেন লিগে খেলেন। এরপর তিনি শ্রীলঙ্কার এলপিএলেও দেখা যায় থাকে। ইরফান পাঠানের সাথে ক্যান্ডি টাস্কার্সেই খেলেন তিনি।
- প্রবীন কুমার
ভারতের হয়ে ছয় টেস্ট, ৬৮ টি ওয়ানডে ও ১০ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন সাবেক এই পেসার। ২০১৮ সালে অবসর নিয়ে ফেলেন। অবসর নেওয়ার উদ্দেশ্যই ছিল আবুধাবির টি-টেন লিগে অংশ নেওয়া। সেখানে তিনি খেলেন পাঞ্জাবি লিজেন্ডসের হয়ে। এরপর মন দেন রাজনীতিতে।