আইপিএল ‘স্টারকিডনামা’

ভারতীয় ক্রিকেটে অনেক ক্রিকেটীয় পরিবারকে দেখা গেছে। ভারতীয় ক্রিকেটে এখন এতো সংখ্যক ক্রিকেটিয় পরিবার এসেছে যে, নিকট ভবিষ্যতে ভারতীয় ক্রিকেট দলের বেশির ভাগ সদস্য ক্রিকেটীয় সংস্কৃতি থেকে আসলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) সারা বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটীয় টুর্নামেন্ট। সারা বিশ্বের ক্রিকেটাররা চায় আইপিএল খেলতে। কিন্তু আইপিএলের বিভিন্ন নিয়মকানুন এবং সীমাবদ্ধতার কারণে সব ক্রিকেটারদের পক্ষে আইপিএল খেলা সম্ভব হয়ে উঠে না।

এতো সীমাবদ্ধতার পরও এমন কিছু ক্রিকেটার আইপিএলে দল পেয়েছেন বা পান। যারা কিনা ক্রিকেটীয় সংস্কৃতি থেকে এসেছেন। অবশ্যই আইপিএল খেলার যোগ্য বলেই তাঁরা দল পেয়েছেন বা পেয়েছিলেন। এমন কিছু ভাবার কোনো কারণ নাই যে, তাঁরা তাঁদের পারিবারিক পরিচয়ের কারণে দলগুলো তাদেরকে দলে ভিড়িয়েছিলো বা ভিড়িয়েছে।

  • বিদ্যুৎ শিবারামকৃষ্ণাণ

তামিলনাড়ু দলের সাবেক ক্রিকেটার ভেঙ্কটরমণ শিবারামকৃষ্ণাণের পুত্র বিদ্যুৎ শিবারামকৃষ্ণাণ। ২০০৮ সালে আইপিএলের উদ্বোধনী আসরে খেলেছেন চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে। এই আসরে নয় ম্যাচ খেলেছেন আইপিএলে। আইপিএল অভিষেক ম্যাচে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের বিপক্ষে অর্ধ শতক করে নিজের আইপিএল অভিষেক রাঙিয়েছিলেন। কিন্তু পরে আর নিয়মিত পারফর্ম করতে পারেন নি। এর ফলে আর কখনো আইপিএলে দেখা যায় নাই বিদ্যুৎ শিবারামকৃষ্ণাণকে।

  • অনিরুদ্ধ শ্রীকান্ত

অনিরুদ্ধ শ্রীকান্তের বাবা হলেন কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত। শ্রীকান্ত ছিলেন তার সময়ের ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। বিশেষ করে তিনি নিজের সময়ে মারমুখী সূচনার জন্য বিখ্যাত ছিলেন।

ক্যারিয়ারের শেষ করার পর শ্রীকান্ত তাঁর পুত্র অনিরুদ্ধ শ্রীকান্তকে নিজের হাতে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। সাথে বিভিন্ন আইপিএল ফ্রাঞ্চাইজিতে ভেড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন।

২০১১ সালে আইপিএলের চেন্নাইয়ের প্রথম ম্যাচে দলকে জেতানো ব্যাটং করেছিলেন অনিরুদ্ধ। কিন্তু নিয়মিত পারফর্ম করতে না পারার কারণে চেন্নাই দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। এরপর সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ দলেও সুযোগ পান অনিরুদ্ধ শ্রীকান্ত।

  • মায়াঙ্ক ডাগার

মায়াঙ্ক ডাগার ভারতের অন্যতম ফিট ক্রিকেটার। তিনি ভারতের হার্ট হিটার ব্যাটসম্যান বীরেন্দ্র শেবাগের ভাতিজা (বা ভাগিনা)। আগে আইপিএল ফ্রাঞ্চাইজি কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব দলে খেলতেন মায়াঙ্ক। মনে করা হয় তিনি হবেন ভারতের অন্যতম সেরা বাঁ-হাতি স্পিনার। বিশেষ করে তাঁর আর্মারগুলো নাকি বেশ কার্য্যকর।

  • অর্জুন টেন্ডুলকার

অর্জুন টেন্ডূলকারকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। তিনি ইতিমধ্যে ভারতীয় ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের কিছুটা হলেও মন জয় করে নিয়েছেন।

ক্রিকেট ঈশ্বর শচীন টেন্ডূলকারের পূত্র অর্জুন টেন্ডুলকার একজন বাহাতি পেসার। ২০২১ সালের আইপিএলে প্রথমবারের মত দল পেয়েছেন তিনি। এবারের আইপিএলে খেলবেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে। তবে, এখনো আইপিএলে অভিষেক হয়নি তাঁর।

  • জ্ঞানেশ্বর রাও

জ্ঞানেশ্বর রাও হলেন ভারতীয় ক্রিকেটার ভেনুগোপাল রাওয়ের ভাই। ভেনুগোপাল রাও ভারতের হয়ে খেলেছেন ১৬ ওয়ানডে ম্যাচ। ভেনুগোপাল রাও আইপিএলে অনেকগুলো ফ্রাঞ্চাইজির হয়ে খেলেছেন। তিনি খেলেছেন ডেকান চার্জার্স, দিল্লূ ডেয়ারডেভিলস এবং সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে।

ভেনুগোপালের ভাই জ্ঞানেশ্বর রাওকে প্রথম আইপিএলে দেখা গেছে আইপিএলের চতুর্থ আসরে। সেই মৌসুমে মাঠে নেমেছিলেন কোচি টস্কার্স কেরালার হয়ে। দুই ম্যাচে করেছিলেন মাত্র ১৯ রান। এরপর আইপিএলে দেখা যায় নাই তাকে।

  • নয়ন দোশি

দিলীপ দোশি ছিলেন আশির দশকে ভারতের খ্যাতনামা বাঁ-হাতি স্পিনার। বিষান সিং বেদি থাকায় ক্যারিয়ারের স্বর্ণসময়ে তিনি খেলতে পারেনি। ৩২ বছর বয়সে অভিষেক হয়। ৩৩ টি টেস্টে ১১৪ টি উইকেট নিয়ে তিনি ক্যারিয়ার শেষ করেন।

তাঁর ছেলে নয়ন দোশিও বাঁ-হাতি স্পিনার। তিনি মূলত কাউন্টি ক্রিকেট ও রঞ্জি ট্রফি খেলেন। ২০১০ ও ২০১১ – দু’টি আইপিএল মৌসুম তিনি খেলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু ও রাজস্থান র‌য়্যালসের হয়ে। ২০২১ সালের আইপিএলে তিনি সবচেয়ে বয়স্ক ক্রিকেটার হিসেবে নিলামে অংশ নিলেও কেউ তাঁকে নিতে আগ্রহী হয়নি।

  • রোহান গাভাস্কার 

স্বয়ং সুনীল গাভাস্কারের ছেলে আইপিএল খেলার আগেই ২০০৪ সালে ভারতের হয়ে ১১ টি ওয়ানডে খেলেন। এরপর ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে (আইসিএল) অংশ নেন। ২০০৯ সালে তিনি যোগ যেদন কলকাতা নাইট রাইডার্সে। ফ্র্যাঞ্চাইজিটির হয়ে খেলেন দু’টি ম্যাচ।

  • স্টুয়ার্ট বিনি

কিংবদন্তি রজার বিনির ছেলে স্টুয়ার্ট নিয়মিত আইপিএল খেলেছেন একটা সময়। ভারতীয় এই অলরাউন্ডার রাজস্থান রয়্যালস, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু – তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলেছেন আইপিএল। এই লিগে তিনি ৮৮০ রান ও ২২ টি উইকেট পান।

ভারতীয় দলেও এক সময় নিয়মিত ছিলেন বিনি। ভারতের হয়ে তিনি ছয় টেস্ট, ২০ ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link