ভারতেকে ক্রিকেটারদের খনি বলাই যেতে পারে। বিগত কয়েক বছর যাবৎ ধরে তাঁদের ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে শুরু করে আইপিএলের মঞ্চেই প্রতিনিয়তই যেন প্রতিভার প্রদর্শন লেগেই রয়েছে। তবে ঘরোয়া কিংবা আইপিএলে ভাল করলেই যে একজন খেলোয়াড় খুব সহজেই দলে জায়গা করে নিতে পারছেন বিষয়টা তেমনও নয়। নিকট অতীতে ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলে অভিষেক হওয়া খেলোয়াড়দের সংখ্যা হাতে গুনে শেষ করার মতো। ভারত বরাবরই অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে দলে সুযোগের ক্ষেত্রে।
তবে যে শুধু অভিজ্ঞতার বিচারেই ভারত দলে বর্তমান যারা খেলছেন তাঁরা টিকে রয়েছেন বিষয়টা তাও নয়। ভারতের বর্তমান দলে থাকা প্রত্যেকটা খেলোয়াড় নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন বহুবার এবং তাঁরা প্রত্যেকেই ধারাবাহিক পারফর্মার। তাই নতুন উদীয়মান, সম্ভাবনাময়ী খেলোয়াড়দেরকে অপেক্ষা করতে হয় তাঁদের সময়ে কিংবা কালের গর্ভে কোন এক খেলোয়াড়ের হারিয়ে যাওয়ার।
এক কঠিন পথ পাড়ি দিয়েই তবে মেলে ভারত জাতীয় দলের দরজা। তবে যেহেতু ভারত দলে লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া সেই হাওয়ায় ভেসে ভেসে বেশকিছু নতুন মুখ দেখা যেতে পারে ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলে। এমন সম্ভাবনায় থাকা খেলোয়াড়দের নিয়ে আজকের আলোচনা।
- শাহরুখ খান
হার্ড হিটার কিংবা একজন ফিনিশারের অভাব খানিক বোধ করছে ভারত এই মুহূর্তে। কেননা হার্দিক পান্ডিয়া রয়েছেন অফ ফর্মে। সেক্ষেত্রে তামিল নাড়ুর খেলোয়াড় শাহরুখ খান হতে পারেন ভারতের পরবর্তী পছন্দ। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর ব্যাটিং পারফর্মেন্স মুগ্ধ করার মতো।
আইপিএলের গত মৌসুমে তিনি রান তুলেছেন ১৩০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটের। তাছাড়া লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটেও ব্যাটটা চলমান শাহরুখের। একজন ফিনিশার হিসেবে ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ কদর রয়েছে তাঁর। ব্যাটিং এর পাশাপাশি অফ-স্পিন বোলিংও করতে জানেন তিনি। সুতরাং ২০২২ সালে হয়ত তাঁকে দেখা যেতে পারে নীল জার্সিতে।
- রবি বিষ্ণয়
অনূর্ধ্ব ১৯ দল থেকে উঠে আসা লেগ-স্পিন বোলার রবি বিষ্ণয়। ধারণা করা হয় তিনিই আগামী দিনে ভারতের স্পিন বোলিংকে নেতৃত্ব দেবেন। বর্তমান সময়ে ভারতের লেগ-স্পিন ডিপার্টমেন্টটা বেশ নড়বড়ে অবস্থানে রয়েছে যুজবেন্দ্র চাহাল ও রাহুল চাহারের অফ ফর্মে চিন্তার একটা বড় ভাঁজ ফেলে দিয়েছে নির্বাচকদের কপালে।
সেক্ষেত্রে হয়ত নির্বাচকেরা রবি বিষ্ণয়কে বাজিয়ে দেখতে পারেন অন্ততপক্ষে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। কেননা ২০২১ এর আইপিএল আসরে বিষ্ণু নয় ম্যাচে পেয়েছেন ১২ টি উইকেট। ইকোনমি রেট ছিলে ছয়ের ঘরে। ২০২২ সালটা হতে পারে রবি বিষ্ণুর জাতীয় দল অভিষেকের।
- আর্শদ্বীপ সিং
জহির খান, আশিস নেহেরাদের পর ঠিক তেমন আর মান সম্মত বা-হাতি পেস বোলারের দেখা পায়নি ভারত। সেই আক্ষেপের অন্ধকারের ধীরে ধীরে আলো ছড়াতে শুরু করেছেন আর্শ্বদীপ সিং। পাঞ্জাব কিংসের হয়ে গত দুই আইপিএল মৌসুমে বেশ ভাল বল করেছেন তিনি। ২০২১ মৌসুমে ১৮ টি উইকেট নিয়েছেন তরুণ এই বা-হাতি পেস বোলার।
এর পাশাপাশি ইনিংসের শেষ দিকে নিজের স্কিল দ্বারা প্রতিপক্ষকে স্লথ ব্যাটিং-এ বাধ্য করা আর্শদ্বীপ বেশ প্রসংশাও কুড়িয়েছেন শেষ আইপিএল মৌসুমে। তাছাড়া লিষ্ট-এ ক্যারিয়ারে ১৬ ম্যাচের বিপরীতে ১৯ উইকেট রয়েছে আর্শদ্বীপের নামের পাশে। সেক্ষেত্রে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে হয়ত জাতীয় দলের সুযোগ পেতে পারেন আর্শদ্বীপ সিং।
- আবেশ খান
আবেশ খান ডাক পেয়েছিলেন সদ্য সমাপ্ত হওয়া নিউজিল্যান্ড সিরিজের টি-টোয়েন্টি দলে। তবে তাঁর অভিষেক এখন অবধি ঘটেনি। ২০২১ আইপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার আবেশ খান মুখিয়ে আছেন তাঁর জাতীয় দলের অভিষেকে জন্যে।
ধারণা করা হয় ২০২২ সালে অভিষিক্ত হতে যাওয়া খেলোয়াড়দের মধ্যে আবেশ খানের সম্ভাবনা বেশি। তাঁর প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটের ১০০ উইকেটও তাঁর স্বপক্ষেই নির্বাচকদের দরজায় কড়া নাড়ছে। তাছাড়া গত মৌসুমে দিল্লি ক্যাপিটালসের অন্যতম অস্ত্র আবেশ নিয়েছিলেন ২৪টি উইকেট।
- দিপক হুডা
অনূর্ধ্ব ১৯ দলের অসাধারণ পারফর্ম করা দিপক হুডা বেশ আশার সঞ্চার করেছিলেন সমর্থকদের মনে। তিনি হতে চলেছেন ভারতের পরবর্তী মেগাস্টার এমন অভিমতও ছিল অনেকের। তবে ২৬ বছর বয়সে এসেও এখন অবধি ভারত দলের সেই নীল জার্সিটি পরে ক্রিকেটের ময়দানে নামবার সুযোগ হয়নি ঘরোয়া ক্রিকেটে ১২ টি শতকের মালিক দিপক হুডার।
মিডল অর্ডারে বেশ কার্যকরী একজন ব্যাটার দীপক হুডা। এর পাশাপাশি তিনি অফ-স্পিন বোলিংও বেশ ভালই করেন। তাছাড়া বিগত বছর গুলোতে পারফর্মেন্সের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা দীপক রয়েছেন বর্তমানে ফর্মে এমতবস্থায় তাঁকে হয়ত সুযোগ দেবেন ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলের নির্বাচকরা।