ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আসবে না ভাটা

ভারত, পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচটি উত্তাপ ছড়িয়েছিল মাঠ কিংবা মাঠের বাইরে, সমানতালে। ম্যাচ পূর্ববর্তী সময়ে চলেছে পরিসংখ্যানের কাঁটাছেড়া। কোন দল রয়েছে কার থেকে এগিয়ে এ নিয়ে হয়েছে বিশদ আলোচনা মাঠের বাইরে।

খেলার দিন মাঠের উত্তাপ যেন হয়েছিল আগ্নেগিরির ফুটন্ত লাভা। ভারত প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে যেন সেই লাভায় ছড়িয়ে পড়ে পুরো মরুর দেশ আরব আমিরাত ছাপিয়ে সমগ্র বিশ্বজুড়ে। ভারত-পাকিস্তান মহাদ্বৈরথ আর তাঁতে উত্তেজনা ছড়াবেনা তা কি করে হয়।

তবে উত্তেজনার ম্যাচটিতে ভারত হেরেছিল পাকিস্তানের অনবদ্য ব্যাটিং নৈপুণ্যে। বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতের একছত্র আধিপত্যের খানিক অবসান ঘটানো ম্যাচে হয়েছিল রেকর্ড। ভারত পেয়েছিল প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টিতে দশ উইকেটে হারার তিক্ত স্বাদ। অপরদিকে ঠিক একই ব্যবধানের জয় ছিল পাকিস্তান ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বপ্রথম ক্রিকেটের ক্ষুদ্র সংস্করণে।

বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের দৃঢ় ব্যাটিং- এ ভারতীয় বোলাররা ছিলেন উইকেট শূন্য। এতে হয়েছে যত ঝামেলা। ভারতীয় গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়াতে ভারতের ক্রিকেট খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্য করে বয়ে গেছে সমালোচনার ঝড়। এই সমালোচনার ঝড় মাত্রা ছাড়িয়েছে ধর্মীয় আক্রমণাত্মক কটূ কথায়।

ভারত দলে একজন মাত্র মুসলিম খেলোয়াড় ছিলেন বোলার মোহাম্মদ শামি। তাঁকে ঘিরেই যত ধর্মীয় আক্রমণে নাজেহাল হয়ে যাব সোশ্যাল মিডিয়া, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ পরবর্তী সময়ে। শুধুমাত্র ধর্মের দোহাই দিয়ে শামিকে একজন দেশদ্রোহীও আখ্যা দেন অনেকে।

তবে এমন গর্হিত কাজের জন্যে ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) এবং জাতীয় দল ছিল নিরব। এমন ধর্মীয় আক্রমণাত্মক আলাপচারিতার বিপক্ষে আসেনি তেমন কোন অফিসিয়াল বিবৃতি না পাওয়া গেলেও ভারতীয় সাবেক ক্রিকেটাররা সোশ্যাল মিডিয়াতে ছিলেন সোচ্চার।

অবশেষে ভারতীয় দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি মুখ খুলেছেন। প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানিয়েছেন এ ধরণের নেক্কারজনক ঘটনার। যারা ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজিকে কেন্দ্র করে মানুষকে হেনস্তা করেন তাঁদেরকে মেরুদণ্ডহীন আখ্যা দিয়ে এ বিষয়ে বিরাট বলে, ‘কারো ধর্মের ভিত্তিতে তাঁকে আক্রমণ করা সত্যিকার অর্থে খুব প্যাথেটিক একটি ঘটনা।’

ভারত-পাকিস্তানের সেই ম্যাচে মোহাম্মদ শামি ছিলেন সবচেয়ে খরুচে বোলার। তবুও তিনি যে একাই খুব বাজে খেলেছেন কিংবা তাঁর একার জন্যেই ম্যাচটি হেরেছিল ভারত বিষয়টি তেমনও নয়। যারা এমন নির্ধবুদ্ধীতার পরিচয় দিয়ে অনলাইনে কুৎসা রটান তাঁদের নিন্দা করে কোহলি বলেন, ‘অনলাইনে হেনস্তা করা এখন রীতিমত এক বিনোদনে পরিণত হয়েছে। আমি আমার জীবনের একটি মিনিট ও এমন সকল লোকদের দিকে মনোযোগ দিয়ে নষ্ট করতে চাই না, শামিও চায় না, এমনকি আমার দলের কোন খেলোয়াই চায় না।’

এমন আক্রমণাত্মক আলাপচারিতায় তাঁদের ড্রেসিং রুমের আবহাওয়ায় কোন পরিবর্তন আসবে না এ বিষয়ে অভয় দিয়ে কোহলি আরো বলেন, ‘আমরা শামিকে পূর্ণ সমর্থন করছি, আমরা তাঁকে দ্বিগুন সমর্থন জানাচ্ছি পূর্বের তুলনায়। তাছাড়া এমন বিচ্ছিন্ন ঘটনা আমাদের মধ্যকার বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্বকে প্রভাবিত করতে পারবে না।’

এসব কিছু ভুলে কোহলি এবং তাঁর দল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরবর্তী ম্যাচগুলোতে ফোকাস করে জয় ছিনিয়ে আনতে মুখিয়ে আছে এমনটাই জানান ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link