Social Media

Light
Dark

ইতিবাচক পরিবর্তনের নেতিবাচক ম্যাচ

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে যেমন মাঠের খেলোয়াড়দের মাঝে আলাদা উদ্দীপনা তৈরি করে তেমনি দর্শকমহলে তৈরি হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। যে আলোচনা-সমালোচনায় বাদ যায় না মাঠের ভেতরের আম্পায়ারিংয়ের ব্যাপারটাও। ভারত পাকিস্তান ম্যাচ মানেই চুলচেড়া বিশ্লেষণ। ম্যাচের প্রতিটি মুহূর্ত কিংবা প্রত্যেক বল নিয়ে করা হয় বিশ্লেষণ। যেখানে আলাদা স্থান পায় আম্পায়ারদের কিছু সিদ্ধান্ত। সমালোচনা হয় ‘আম্পায়ার্স কল’ নিয়ে।

যদিও আম্পায়ারিং নিয়ে সমালোচনা অনেকাংশে কমে এসেছে পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী ক্যাপ্টেন ইমরান খানের একটি সাহসী সিদ্ধান্তের পর।

বিংশ শতাব্দীর আশির দশকের শেষের দিকের কথা, ভারতের বিপক্ষে সিরিজের আগে ইমরান খান সিদ্ধান্ত নিলেন শুরু হতে যাওয়া সিরিজের আম্পায়ারিং এর দায়িত্ব পালন করবেন তৃতীয় কোনো দেশের আম্পায়ার। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মূল কারণ ছিলো প্রত্যেকবার সিরিজের পর বিপক্ষ দেশের মিডিয়ায় ফলাও করে সমালোচনা করা হতো বাজে আম্পায়ারিং নিয়ে। এ সময় স্বাগতিক দেশ আম্পায়ারের সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করতো।

দেখা যেত অনেক প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তও স্বাগতিকদের পক্ষে দিয়ে দেওয়া হতো। ইমরান খানের এমন সাহসী সিদ্ধান্তের পর ১৯৯২ সাল থেকে প্রতি ম্যাচে অন্তত একজন নিরপেক্ষ আম্পায়ার এবং ২০০২ সালে ম্যাচে দু’জন নিরপেক্ষ আম্পায়ার বাধ্যতামূলক করে আইসিসি। মাঝে করোনার জন্য কিছুদিন এই নিয়ম স্থগিত করলেও সাকিব আল হাসানের টুইটকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আবারও পুরনো সিদ্ধান্তে নিরপেক্ষ আম্পায়ারে ফিরে এসেছে আইসিসি।

তবে আম্পায়ারদের পক্ষপাতিত্বের কারণে ক্রিকেটের অন্যতম কলঙ্কিত ম্যাচের ঘটনা ঘটে গিয়েছে তার অনেক আগেই। মনে করা হয় ঐ ঘটনার পর থেকেই স্বাগতিক দেশের আম্পায়ারদের দিয়ে নড়েচড়ে বসে বিশ্ব মিডিয়া।

একবার পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে পাকিস্তানে গিয়ে বাজে আম্পায়ারিংয়ের চূড়ান্ত অধ্যায় দেখতে হয়েছিলো ভারতকে। যে কারণে ভারতের অধিনায়ক বিষাণ সিং বেদি স্বেচ্ছায় হার স্বীকার করে ব্যাটসম্যানদের মাঠে থেকে উঠিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। যা ছিলো ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বপ্রথম কলঙ্কিত এক ঘটনা।

ঘটনাটা ১৯৭৮ সালের। সেবার তিন টেস্ট এবং তিন ওয়ানডে খেলতে পাকিস্তানে গিয়েছিলো বিষাণ সিং বেদির নেতৃত্বে ভারত দল। ঐ সিরিজেই অভিষিক্ত হয়েছিলেন ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের কারিগর কপিল দেব। টেস্ট এবং ওয়ানডে – দুই ফরম্যাটেই অভিষিক্ত হয়েছিলেন কপিল দেব।

ঘটনাটা ঘটেছিলো সিরিজ নির্ধারনী তৃতীয় ওয়ানডেতে৷ আগের দুই ওয়ানডেতে ভারত এবং পাকিস্তান একটি করে ম্যাচ জিতেছিল। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আবহের সাথে যুক্ত হয়েছিলো সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচের উত্তেজনা। এ যেন এক অঘোষিত ফাইনাল।

৪০ ওভারের সেই ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো পাকিস্তান। নির্ধারিত ৪০ ওভার শেষে সাত উইকেট হারিয়ে ২০৫ রান সংগ্রহ করেছিলো মুশতাক বাহিনী। পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬২ রান সংগ্রহ করেছিলেন আসিফ ইকবাল।

২০৬ রানের টার্গেট এ ভালোই শুরু পেয়েছিলো ভারত। শেষে ২১ বলে ২৩ রানের দরকার ছিলো ভারতের। এমন পরিসংখ্যানে ভারতের ম্যাচ জিতে নেওয়া সময়ের ব্যাপার ছিল মাত্র। তাই পাকিস্তানের বোলাররা একটা ঘৃণিত বুদ্ধি আঁটে যার ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিল স্বয়ং আম্পায়ার। দুই অনফিল্ড আম্পায়ার ছিলেন জাভেদ আখতার ও খিজির হায়াত।

পাকিস্তানের বোলাররা অনবরত বাউন্সার দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের লক্ষ্য ছিলো ব্যাটসম্যানকে কোনোভাবেই বলের সংস্পর্শে আসতে না দেওয়া। অন্য দিকে ব্যাটসম্যান আম্পায়ার এর কাছে ওয়াইড এবং নো বলের আবেদন করলেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিলো না। সরফরাজ নওয়াজ টানা দু’টো বাউন্সার যেন, উইকেটরক্ষক ওয়াসিম বারি ঝাঁপিয়ে পড়ে কোনোক্রমে বলটা আটকান।

ভারতীয় ওপেনার অংশুমান গায়কোয়াড় তখন ৭৮ রানে অপরাজিত। তিনি কি করবেন, বুঝতে পারছেন না। শেষে আর কোনো উপায় না পেয়ে ভারতের অধিনায়ক বিষাণ সিং বেদি। ব্যাটসম্যানের কোন প্রকার অসংযত আচরণ করতে মানা করে মাঠ থেকে উঠে যেতে বলেন।  ব্যাটসমম্যানরা মাঠ ছেড়ে গেলে পাকিস্তানকে জয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

তবে, বিষাণ সিং বেদির ঠাণ্ডা মাথার সিদ্ধান্ত সেদিন ক্রিকেটে বড় একটা পরিবর্তনের পথ খুলে দেয়। এই ম্যাচের পরে বিষাণ সিং বেদি কিংবা পাকিস্তানের আম্পায়ারদের নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। আর সব শেষে ম্যাচটি খুলে দিয়েছিলো নতুন একটা দরজা। নিরপেক্ষ আম্পায়ারিংয়ের ধারণা আসে। সেই ধারাবাহিকতা টিকে আছে আজও। কথায় বলে না, যা হয় ভালর জন্যই হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link