পাকিস্তানের উইকেট রক্ষক ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ানের আইসিইউ থেকে ফিরে করা অর্ধশতকের রুপকথার গল্প তো সকলেরই জানা। কিন্তু সেদিন অস্ট্রেলিয়া বনাম পাকিস্তানের মধ্যকার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের জয়ের নায়ক যে ফাইনালে খেলেছিলেন ইনজুরি নিয়ে সেই গল্প নিশ্চয়ই সকলের অজানা। থাকাটাই স্বাভাবিক। কিছু গল্প থেকে যায় আড়ালে। আলো ছড়িয়ে সামনে আসে সময় হলে, ঠিক সূর্য্যি মামার মতো।
পাকিস্তান বনাম অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে নি:সন্দেহে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের নায়ক তাঁদের উইকেট রক্ষক ব্যাটার ম্যাথু ওয়েড। ১৭ বলে ৪১ রানের এক ঝড়ের তাণ্ডব চালিয়ে জয় তুলে নিয়েছিলেন এই সময়ের অন্যতম সেরা বোলার শাহীন আফ্রিদিকে টানা তিন বলে তিন ছক্কা হাকিয়ে। ম্যাচ যেখানে পৌঁছাবার কথা ছিল শেষওভার অবধি কিন্তু ওয়েড কালক্ষেপণ না করে এক ওভার বাকি থাকতেই জয় তুলে নিয়েছিলেন।
সেমিফাইনালের জয়ের সেনানি ফাইনালের আগে পড়েছিলেন সাইড স্ট্রেইন ইনজুরিতে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা যায় সেটা ছিল গ্রেড দুইয়ের স্ট্রেইন ইনজুরি। বেশ অস্বস্তিতেই ছিলেন তিনি তবুও বুঝতে দেননি কাওকে। এমনকি দেখেননি নিজ ইনজুরির টেস্ট রিপোর্টও।
বিশ্বকাপ জয় পরবর্তী সময়ে এসে নিজের এই ইনজুরির কথা স্বীকার করেছেন ওয়েড এবং তিনি আরো বলেন, ‘ফাইনালের আগের দিন বেশ চিন্তিত ছিলাম। যদি আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যাট চালাতে না পারতাম তাহলে হয়ত আমি খেলতাম না।’
ওয়েড তাঁর এই ইনজুরি কিংবা অস্বস্তি লুকাবার চেষ্টা করেও পাড় পাননি তাঁর আরেক সতীর্থ গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের কাছে। ফাইনালের আগে টুকটাক অনুশীলন করতে গিয়ে তাঁর সতীর্থ টের পান কিছু একটা সমস্যা রয়েছে ওয়েডের। ওয়েডের ইনজুরি নিয়ে ম্যাক্সওয়েল বলেন, ‘সে আন্ডারআর্ম বলগুলো খুব সতর্কতার সাথে খেলছিলো। তো আমি প্রশ্ন করলাম কি হচ্ছে? সজোড়ে ব্যাট চালাও। তখন সে বলল যে তিনি সাইড স্ট্রেইন ইনজুরিতে ভুগছেন। এর আগে অবধিও আমি জানতাম না এ বিষয়ে কিছু।’
তবে দলের অধিনায়ক অ্যারোন ফিঞ্চ জানতেন বিষয়টা। তিনি জানান যে ওয়েড তাঁর স্ক্যান রিপোর্টগুলোও দেখতে অনীহা প্রকাশ করেন। এছাড়া ফিঞ্চ আরো বলেন, ‘ডাক্তার সন্দেহ করে যে এটা গুরুতর কিছু হতে পারে, তাই তিনি ওয়েডকে কিছু স্ক্যান করার পরামর্শ দেন। তবে সেগুলোর রিপোর্ট ওয়েড জানতেও চায়নি। কিন্তু আমি জানতাম যে এটা একটা দ্বিতীয় স্তরের স্ট্রেইন ইনজুরি। ফাইনালে ওয়েডের খেলাটা একটু কষ্টকর হয়ে যাবে। তবে আমি এটাও বিশ্বাস করতাম ফাইনালে কেউ যদি খেলে তবে সেটা ম্যাথু ওয়েড।’
ফাইনালে ম্যাথু ওয়েডকে ব্যাটিং করতে হয়নি। তবে উইকেট কিপিং করতে হয়েছে পুরো বিশ ওভার। ইনজুরি নিয়ে তাঁর উইকেট কিপিং এর প্রসংশা করে ফিঞ্চ বলেন, ‘সে ফাইনালে ভালই কিপিং করেছে। তবে শেষের দিকে এসে আমি বুঝতে পারছিলাম তাঁর অস্বস্তি হচ্ছে।’
এভাবেই ম্যাথু ওয়েড, বাবর আজম কিংবা মোহাম্মদ রিজওয়ানরা বিশ্ব আসরের মঞ্চে ত্যাগ, ইনজুরি সব ভুলে খেলে যান ক্রিকেটের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, ক্রীড়ার সৌন্দর্য বর্ধনে। আর এরই সাথে তাঁরা সমৃদ্ধ করেন রুপকথার ভাণ্ডার।