একটা রোলার কোস্টার রাইড। পাকিস্তানের এবারের বিশ্বকাপ যাত্রাকে অন্তত সেটাই বলা যায়। যাচ্ছে তাই শুরুর পর একটা দল ফাইনাল অবধি পৌঁছে যাবে তেমনটা হয়ত ভাবেনি কেউ। তবে আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তানের উপর থেকে ভরসা হারিয়ে ফেলা কঠিন। প্রতিবার দলটা ভরসা জোগায় সমর্থকদের। তবে তীরে এসে তরী ডোবায়। এটা যেন নিত্যদিনের গল্পে পরিণত হয়েছে। তবে এবার গল্পটা খানিক ভিন্ন হতে পারত বলেও মত অধিনায়ক বাবর আজমের।
গেল আসরটার উদাহরণ টানা যেতে পারে। সেবার কি দুর্দান্ত শুরুটাই না করেছিল পাকিস্তান। সবাই ধরেই নিয়েছিল অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হবে দলটি। ইতিহাস রচনা করে ভারতে বিপক্ষে জয়। এরপর গ্রুপ পর্বে অপরাজিত পাকিস্তান। সেমিফাইনাল অবধি চলে যায় বিনা বাঁধায়। সেবারের রানার্সআপ দল নিউজিল্যান্ডও গ্রুপ পর্বে আটকাতে পারেনি পাকিস্তানকে। তবে দলটি গিয়ে হোচট খায় অস্ট্রেলিয়ার কাছে।
এবারের চিত্রটা ভিন্ন। শুরুতেই দুই হার। চিরপ্রতিদ্বন্দীদের বিপক্ষে হারটা তাও মেনে নেওয়া গেছে। তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারটা কোন ভাবেই তো মেনে নেওয়ার নয়। সে পরিস্থিতিতে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়া রীতিমত অবধারিত। তবুও ভাগ্যের জোর, আর পাকিস্তানের ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিক দৃঢ়তা এই দুইয়ের মিশেলে পাকিস্তান নিজেদেরকে আবিষ্কার করে সেমিফাইনালের মঞ্চে। অধিনায়ক বাবর আজম তাই নিজেদের এমন দৃঢ় প্রত্যয়ী মানসিকতার অনেক বড় ভক্ত।
একটা দল বাজে শুরুর পর নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে। সুযোগ পেয়ে কাজে লাগিয়েছে। ফাইনালের পথে টানা চারটি ম্যাচ জিতেছে টিম পাকিস্তান। এমনকি ফাইনালের শুরুটাও দারুণ ছিল বাবার আজমের দলের। শুরুতে মোহাম্মদ রিজওয়ান ও মোহাম্মদ হারিসের উইকেট হারিয়ে ফেলে দলটি। তবুও শান মাসুদের সাথে জুটি গড়ে রানের চাকা সচল রাখেন অধিনায়ক বাবর। ১১ ওভারে ৮৪ রান সংগ্রহ করে যখনই পাকিস্তান স্বপ্ন দেখতে শুরু করে একটা বড় সংগ্রহের তখনই পাল্টে যায় সমস্ত চিত্র।
হুট করেই দ্রুত উইকেট হারিয়ে ফেলে চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। আর সেখানেই ম্যাচ থেকে একটু একটু করে ছিটকে যেতে শুরু করে দলটি। ইংল্যান্ডের বোলারদের প্রশংসা করে বাবর বলেন, ‘ইংল্যান্ডের বোলারদের কৃতিত্ব রয়েছে। আমরা পার্টনারশীপ গড়বার চেষ্টা করছিলাম। তবে পরপর দুইটি উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যাই। আর সেই চাপটা ইনিংসের শেষ অবধি বজায় ছিল। আমরা ২০টা রান কম সংগ্রহ করতে পেরেছি।’
হয়ত অধিনায়কের মনের গহীন কোণে কোথাও একটা আফসোস রয়েছে। তবে সেটা ব্যাটিংকে ঘিরে নয়। সেটা শাহীন শাহ আফ্রিদির ইনজুরির কারণে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে শাহীন আফ্রিদি সেরে উঠেছিলেন তাঁর হাঁটুর ইনজুরি থেকে। একেবারেই বিশ্বকাপের মঞ্চে তাঁর পদার্পণ। শুরুর দিকে নিজেকে খুঁজে বেড়িয়েছেন। ধীরে ধীরে ছন্দ খুঁজে পেয়েছেন। এরপরই পাকিস্তানের আস্থার জায়গাটুকু আবারও আবারও জিতে নেন আফ্রিদি।
ফাইনালের মঞ্চে যখন দল একটা স্বল্প পুঁজি ডিফেন্ড করবার প্রচেষ্টা করছিল, তখন তিনিই ছিলেন ভরসার অন্যতম প্রতীক। প্রতিদানও দেন শুরুতেই অ্যালেক্স হেলসের উইকেট তুলে নিয়ে। ইনিংসের ১৩ তম ওভারে হ্যারি ব্রুকের ক্যাচ লুফে নেওয়ার সময় তিনি আঘাত পেয়ে বসেন আবারও সেই হাঁটুতে। তখন মাঠ ছেড়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তিনি ফিরে আসেন। তখনও ইংল্যান্ডের জয়টা দোদুল্যমান। পাকিস্তানি বোলাররা ভীষণরকম চাপে রেখেছিলেন ইংলিশ ব্যাটারদের।
১৫তম ওভারে বল করতে আসেন আফ্রিদি। তবে এক বল করেই আবার মাঠ থেকে উঠে যান। তখনও জয়ের জন্যে ২৯ বলে ৪১ রান প্রয়োজন ইংলিশদের। ঠিক তেমন মুহূর্তেই সব সমীকরণ পাল্টে যায়। ইংল্যান্ডের দিকে ম্যাচ ঝুকে পড়তে শুরু করে। তাইতো অধিনায়কের মনে খানিক আফসোস এসে জমা হয়। তিনি বলেন, ‘শাহীনের ইনজুরির পরই ম্যাচটা ইংল্যান্ডের দিকে চলে যায়। শাহীন থাকলে ম্যাচের ফলাফল অন্যরকমও হতে পারত।’
এই আফসোসটা নিশ্চয়ই একটা লম্বা সময় ধরে পোড়াবে বাবর আজম সহ পাকিস্তানের সবাইকে। তবে একটা দিকে নজর দেওয়া ভীষণ প্রয়োজন। বড় মঞ্চে শেষ অবধি সুন্দর শেষটা পাওয়া হচ্ছে না পাকিস্তানের। সেটা এশিয়া কাপ হোক কিংবা এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সুতরাং তীরে এসে তরী ডোবানোর এই সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আসার পথটা নিশ্চয়ই খুঁজতে হবে পাকিস্তানকে।