বাজির পাশা উল্টে গেল

টি-টোয়েন্টি মানেই ঝুঁকি। আপনাকে ঝুঁকি কিছু নিতেই হবে। কখনো টসে জিতে ঝুকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কখনো বোলিংয়ের সময় ঝুকি নিতে হবে। সব ঝুঁকিতে যে পক্ষে ফল আসবে তাও নয়। কখনো পাশার দান জিতে যাবেন, কখনো আবার হেরে যাবেন।

আইপিএলে ঝুঁকি নিয়ে সফল হয়নি এমন কিছু ঘটনা নিয়ে আজকের এই আয়োজন।

  • পুনে ওয়ারিয়র্সের বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত 

আইপিএলের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে সিদ্ধান্ত ছিলো এটি। ব্যাঙ্গালুরুর ফ্ল্যাট উইকেটে টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন পুনে ওয়ারিয়র্সের অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ।

ফিঞ্চের  সিদ্ধান্ত ভূল প্রমাণ করতে সময় নেননি রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর ওপেনার ক্রিস গেইল। এই ম্যাচে ৬৬ বলে ২৬৫.১৫ স্ট্রাইক রেট ১৭৫ রানের বিশাল ইনিংস খেলেন তিনি। এই ম্যাচে গেইল ১৩ টি চার এবং ১৭ টি ছক্কা হাঁকান। এই ইনিংস খেলার পথে পুনে অধিনায়ক ফিঞ্চের এক ওভারে ২৯ রান তোলেন গেইল। এই ম্যাচে পুনে ওয়ারিয়র্সের সবচেয়ে ইকোনমিক্যাল বোলার ছিলেন ভুবনেশ্বর কুমার। তিনি চার ওভারে ২৩ রান দিয়েছিলেন।

  • ড্যানিয়েল ভেট্টোরির পছন্দের ‘ভুল বোলার’ 

এটি আইপিএলের ২০১২ মৌসুমের কথা। মুখোমুখি হয়েছিলো রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু এবং চেন্নাই সুপার কিংস। এই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ২০৫ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় ব্যাঙ্গালুরু।

ব্যাটিংয়ে নেমে ব্যাঙ্গালুরুর বোলারদের জন্য জয় থেকে বেশ দূরে সরে যাচ্ছিলো চেন্নাই। প্রথম ১৮ ওভারের মধ্যে দলের প্রধান বোলারদের ওভার কোটা পূর্ণ করে ফেলেন ভেট্টোরি। এই কারণে ম্যাচের ১৮ তম ওভারে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন বিরাট কোহলিকে। যিনি কিনা নিয়মিত বোলিং করেন না। এমনকি পার্ট টাইম বোলার হিসেবে খুব প্রতিষ্ঠিত নন। শেষ দুই ওভারে ৪৩ রান লাগে এই ভরসায় সম্ভবত বোলিংয়ে আনেন কোহলিকে।

১৮ তম ওভারে ক্রিজে স্ট্রাইকে ছিলেন প্রোটিয়া বোলিং অলরাউন্ডার অ্যালবি মরকেল। কোহলির করা এই ওভারে ২৮ রান তুলে নেন তিনি। এর মাধ্যমে চেন্নাইকে আবারো ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন।

শেষ ওভারে ডোয়াইন ব্রাভো এবং রবীন্দ্র জাদেজা দুই জন মিলে ১৫ রান নিয়ে চেন্নাইকে জয়ের বন্দরে ভেড়ান।

  • নিকোলাস পুরানের সুপার ওভার ব্যাটিং 

২০২০ আইপিএল মৌসুমের প্রথম ভাগে বেশ কিছু ভুল করেছিলো কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব (বর্তমান পাঞ্জাব কিংস)। মৌসুমের দ্বিতীয় অর্ধে ভালো খেলার পরও প্লে-অফে খেলার সুযোগ পায়নি পাঞ্জাব।

প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ১৫৭ রানের সংগ্রহ পায় দিল্লি ক্যাপিটালস। মোহাম্মদ শামির দূর্দান্ত বোলিংয়ের পরও মার্কোস স্টয়নিসের ব্যাটে ভর করে ১৫৭ রানের সংগ্রহ পায় দিল্লি।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে আম্পায়রের ভুলে শর্ট রানের কারণে ১৫৭ রানে থামে পাঞ্জাবের ইনিংস। এর ফলে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। ম্যাচে পুরোপুরি ব্যর্থ নিকোলাস পুরানকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় পাঞ্জাব। কিন্তু এখানেও ব্যর্থতার পরিচয় দেন তিনি। এর ফলে সুপার ওভারে মাত্র ২ রান তুলতে পারে পাঞ্জাব।

জবাবে ঋষাভ পান্তের ২ রানে ম্যাচ জিতে যায় পাঞ্জাব।

  • স্যামসনের এক রান না নেওয়া 

এইবারের আইপিএলে পাঞ্জাবের কিংসের মুখোমুখি হয়েছিলো রাজস্থান রয়েলস। এই ম্যাচে আগে ব্যাট করে লোকেশ রাহুল, দীপক হুডা এদের ব্যাটে ভর করে ২২১ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায়।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে রাজস্থান। কিন্তু এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করে যান সঞ্জু স্যামসন। ৬৩ বলে করেন ১১২ রান।

ইনিংসের শেষ দুই বলে জয়ের জন্য ৫ রানের প্রয়োজন ছিলো রাজস্থানের। স্ট্রাইকে ছিলেন সঞ্জু স্যামসন। কিন্তু এই বলে এক রান নেওয়ার সুযোগ থাকলেও তা নেননি স্যামসন। কারণ তিনি ভেবেছিলেন এক রান নিলে স্ট্রাইক প্রান্তে চলে যাওয়া ক্রিস মরিস ম্যাচ জেতাতে পারবেন না।

শেষ বলে ছক্কা হাঁকানোর জন্য ব্যাট চালান সঞ্জু স্যামসন। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক ভাবে বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডারের হাতে ধরা পড়েন তিনি। এর ফলে ৪ রানে ব্যবধানে ম্যাচ হারে রাজস্থান।

  • ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন

২০২০ মৌসুমে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের (বর্তমান পাঞ্জাব কিংস) বিপক্ষে ব্যাটিং অর্ডারে নিচে নামানো হয় এবি ডি ভিলিয়ার্সকে। এই ম্যাচে ডি ভিলিয়ার্সের জায়গায় ব্যাটিং করতে আসেন ওয়াশিংটন সুন্দর। তাঁকে মূলত পাঠানো হয়েছিলো ডান-বাম কম্বিনেশনের জন্য। এছাড়াও তিনি ব্যাট হাতে বেশ ভালো ঝড় তুলতে পারেন। কিন্তু একটি চারে সাহায্যে ১৪ বলে ১৩ রান করেন তিনি।

এরপর এই ম্যাচেই আরেকটি ভুল করে ব্যাঙ্গালুরু টিম ম্যানেজমেন্ট। তাঁরা ডি ভিলিয়ার্সের আগে ব্যাটিয়ে পাঠায় শিভম দুবেকে। তিনি ১৯ বলে ২৩ রানের ইনিংস খেলেন। শেষ দিকে ক্রিস মরিসের ব্যাটে ভর করে ১৭১ রানের সংগ্রহ পায় ব্যাঙ্গালুরু।

এই লক্ষ্য বেশ সহজেই পেরিয়ে যায় পাঞ্জাব। একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ম্যাচ হারতে হয় ব্যাঙ্গালুরুকে।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link