২০২২ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) এবারের আসরকে সামনে রেখে সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমানকে ছেড়ে দিয়েছে তাঁদের ফ্র্যাঞ্জাইজি দল কলকাতা নাইট রাইডার্স ও রাজস্থান রয়্যালস। শুধু সাকিব-ফিজ ই নন! ফাফ ডু প্লেসিস, শ্রেয়াস আইয়ার, ডেভিড ওয়ার্নার, ট্রেন্ট বোল্টদের মতো তারকাদেরও ছেড়ে দিয়েছে ফ্র্যাঞ্জাইজি গুলো। অপরদিকে, খেলোয়াড় রিটেইন করার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অনেক দলই নিজেদের কোট পূরণ করে খেলোয়াড় রিটেইন করতে ইচ্ছে প্রকাশ করেনি।
পাঞ্জাব কিংসের নিয়মিত অধিনায়ক লোকেশ রাহুল ও সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের তারকা রশিদ খানও আছে এবারের নিলামে! মূলত তাদের নিজেদের ইচ্ছাতেই দলগুলো তাদেরকে ছাড়পত্র দিতে বাধ্য হয়েছে। যার কারণে হয়তো চড়ামূল্যে এই দুই তারকাকে হয়তো দেখা যাবে নতুন কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলতে।
কিন্তু অন্যান্য বারের তুলনায় এবারের আইপিএলে সবকিছু ভিন্ন হওয়ার কারণ কি? অন্যান্য বারের তুলনায় এবারের আইপিএল নিয়ে তোড়জোড়টাও অনেক বেশি। ক্রিকেট ভক্তদের মাঝেও উত্তেজনাটাও বাড়তি। এসব কিছুর মূলে রয়েছে ‘মেগা অকশন’।
- কী এই মেগা অকশন?
প্রতি বছর আইপিএলের আগে যে নিলাম হয় সেটি মূলত সাধারণ নিলাম। যেখানে নিলামে খুব বেশি সংখ্যক খেলোয়াড় নেওয়ার সুযোগ থাকে না। কারণ প্রায় প্রতি দলই পূর্বের বছরের সিংহভাগ খেলোয়াড়কেই রেখে দেয়। প্লেয়ার রিটেইনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো নিয়মও থাকে না।
অপরদিকে, প্রতি তিন বছর পর পর একটি মেগা অকশন অনুষ্ঠিত হয় যেখানে প্রতি দলকেই নির্দিষ্ট কোটার বাইরে সব খেলোয়াড়কেই বাধ্যতামূলকভাবে নিলামের জন্য ছেড়ে দিতে হয়। এরপর নিলাম থেকে পছন্দ অনুযায়ী খেলোয়াড়কে বিড করে যেকোনো দলই ওই খেলোয়াড়দেরকে কিনে নিতে পারে।
- খেলোয়াড় ধরে রাখার নীতিমালা
আইপিএলের সাধারণ অকশন আর মেগা অকশনের নিয়মে আছে বেশ কিছু পার্থক্য। প্রতি বছর অনু্ষ্ঠিত সাধারণ নিলামে প্রতিটি দলই পছন্দ অনুযায়ী খেলোয়াড়কে দলে রেখে দিতে পারবে। অপরদিকে, মেগা অকশনে প্রতিটি দল সর্বোচ্চ পাঁচজন খেলোয়াড়কে রিটেইন করতে পারবে।
এর মধ্যে সর্বোচ্চ তিনজন কে সরাসরি রিটেইন করা যাবে। এবং বাকি দু’জনকে ‘রাইট টু ম্যাচ’ (আরটিএম) কার্ডের মাধ্যমে নিলাম থেকে নেওয়া যাবে। এছাড়া কেউ যদি সরাসরি দু’জনকে রিটেইন করে সেক্ষেত্রে তিনজনকে নিলামে আরটিএমের মাধ্যমে রিটেইন করতে পারবে। অর্থাৎ সর্বমোট পাঁচজনকেই রিটেইন করা যাবে।
এই পাঁচজনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ জন ভারতীয় (আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছে), সর্বোচ্চ ২ জন বিদেশী এবং সর্বোচ্চ ২ জন ভারতীয় (অভিষিক্ত নন) ক্রিকেটার রিটেইন করার যাবে।
তবে ২০২২ মেগা অকশনকে সামনে রেখে নিয়মে আনা হয়েছে খানিকটা পরিবর্তন। পূর্বের আট দলের সাথে নতুন ২ দল যুক্ত হওয়ায় মূলত এই নতুন নিয়ম।
নতুন এই নিয়মে পূর্বে যে আট দল ছিলো তাঁরা প্রত্যেকেই চারজন করে খেলোয়াড় রিটেইন করতে পারবে। এই চারজনের মধ্যে হয়তো ৩ জন ভারতীয় এবং ১ জন বিদেশী ক্রিকেটার নয়তো ২ জন ভারতীয় এবং ২ জন বিদেশী ক্রিকেটারকে রাখতে হবে। অপরদিকে, নতুন দুই আইপিএল দল লাখনৌ ও আহমেদাবাদের জন্য নিয়ম হলো তাঁরা ৩ জন খেলোয়াড়কে নিলামের আগে দলে নিতে পারবে। পূর্বের বছর গুলোতে খেলা আট দল যেসব খেলোয়াড়কে নিলামের জন্য ছেড়ে দিবে তাদের মধ্যে থেকে ২ ভারতীয় ও ১ জন বিদেশী ক্রিকেটারকে দলে ভেড়াতে পারবে নতুন দুই দল।
- এবারের মেগা অকশনে ‘রাইট টু ম্যাচ’ বা আরটিএম কার্ডের কোনো নিয়মই থাকবে না। আগের মেগা অকশন গুলোতে আরটিএম থাকলে এবার এই নিয়ম তুলে দিয়েছে আইপিএল কর্তৃপক্ষ।
- প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি মোট ৯০ কোটি রূপি খরচ করতে পারবে (প্লেয়ার রিটেইন সহ)।
- সাধারণ অকশনে প্রথমদিন প্লেয়ার নেওয়ার পর যদি বেশ কয়েক দলের খেলোয়াড় নেওয়া বাকি থাকে তবেই দ্বিতীয় দিন নিলাম ডাকা হয়। কিন্তু মেগা অকশনে দুইদিন ব্যাপি বৃহৎ আকারেই নিলাম হয়; প্রথম দিনে মারকুই খেলোয়াড়দের ডাকার পর ধীরে ধীরে ক্যাটাগরি অনুযায়ী বাকি ক্রিকেটারদের নিলামে তোলা হয়।
- প্রতিটা দল সর্বোচ্চ ২৫ এবং সর্বনিম্ন ১৮ জনের স্কোয়াড গড়তে পারবে। এর মধ্যে অভিষিক্ত ও নন-অভিষিক্ত মিলিয়ে সর্বনিম্ন ১৭ এবং সর্বোচ্চ ২৫ জন ভারতীয় ক্রিকেটারকে স্কোয়াডে নেওয়া যাবে। অপরদিকে, প্রতিটি দল সর্বোচ্চ ৮ জন বিদেশী ক্রিকেটারকে নিলাম থেকে দলে নিতে পারবে।
মূলত এই মেগা অকশনকে সামনে রেখেই বেশ ভেবে চিন্তেই প্লেয়ার রিটেইন করছে দলগুলো। তবে গুঞ্জন রয়েছে এবারের অকশনই হতে পারে শেষ মেগা অকশন! ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক পক্ষের অধিকাংশেরই মত এবারের পর আর মেগা অকশন না করা। এক্ষেত্রে এবারের আসরে নিলাম থেকে নেওয়া খেলোয়াড়দের সাথে ফ্র্যাঞ্চাইজি চাইলে কয়েক আসরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে। তবে এ ব্যাপারে এখনো আইপিএল কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।