তখনও ভারতীয় ফুটবলে আইএসএল-এর অনুপ্রবেশ ঘটেনি। আই লিগই দেশের একনম্বর লিগ। বিজয় মালিয়ার হাত ধরে কলকাতার দুই প্রধান ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানে বড় অঙ্কের স্পনসরশিপ বাবদ অর্থ আসত। এরকমই এক সময়ে ললিত মোদির মস্তিষ্কপ্রসূত আইপিএলের আবির্ভাব ঘটল। সে কী উন্মাদনা গোটা দেশ জুড়ে। কুড়ি ওভারের মশালা ম্যাচ চেটেপুটে উপভোগ করতেন দর্শকরা।
আইপিএলে বিজয় মালিয়ার দল ছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। প্রথম বারের আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচ জমিয়ে দিয়েছিলেন কেকেআর-এর ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের ঘরের মাঠ চিন্নাস্বামীতে ঝড় তুলেছিলেন ম্যাককালাম।
ফিরতি সাক্ষাতে দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল ইডেনে। সেদিন আবার ছিল পঁচিশে বৈশাখ। কেকেআর-আরসিবি ম্যাচের আগে বিজয় মালিয়া এক অদ্ভুত প্রস্তাব দিয়ে বসলেন। ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান ফুটবলার-কোচদের ইডেনে হাজির থাকতে হবে ম্যাচের সময়ে। মালিকপক্ষের নির্দেশ। মানতে হবেই। কী আর করা যাবে। ম্যাচের দিন দুই প্রধানের ফুটবলার-কোচ নিজেদের ক্লাবের জার্সি পরে মাঠে আসেন।
এদিকে পঁচিশে বৈশাখের জন্য ইডেনে একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। মমতা শঙ্করের গ্রুপ পারফর্ম করে। কেকেআর মালিক শাহরুখ খান ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য’ আবৃত্তি করেন। ইডেন ফুটছে। এরকম অবস্থায় নামে বৃষ্টি। সঙ্গে ঝড়। ম্যাচের ওভার সংখ্যা কাটা হয়। ম্যাচ শুরু হয় অনেক দেরিতে।
ধারাভাষ্যকার রবি শাস্ত্রীকে সামনে পেয়ে এক নিরাপত্তা আধিকারিক প্রশ্ন করে বসেন, ‘কী হবে? ওভার কি কাটা হবে?’ রবি তাঁর শাস্ত্রীয় বাচন ভঙ্গিতে বলেন, ‘ষোলা ষোলা ওভার কা ম্যাচ হোগা।’ খেলা শুরু হওয়ার বেশ খানিকবাদে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের ফুটবলাররা ইডেনে আসেন। নিজেদের মধ্যে মজা করে দুই প্রধানের ফুটবলাররা স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘করব, লড়ব, জিতব রে।’
কিন্তু তা কখনওই প্রকাশ্যে নয়। কারণ ইস্ট-মোহনের তারকারা এসেছিলেন আরসিবি-কে সাপোর্ট করতে। তাঁদের আনুগত্য দেখাতেই হত বিজয় মালিয়ার আরসিবিকে। নিজেদের শহরের দল কেকেআর তখন শত্রুপক্ষীয়। সেদিন অদ্ভুত বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন দুই প্রধানের তারকারা।
অবশ্য ক্রিকেটের সঙ্গে কি আত্মিক যোগ ছিল ফুটবলারদের! পরিস্থিতির চাপে পড়ে কতকটা বাধ্য হয়েই ইডেন ভরাতে হয়েছিল তাঁদের। দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচ শেষ হতে হতে আরও রাত হয়ে যাবে। এই আশঙ্কা ছিল ফুটবলারদের মনে। বেশি রাত করে ঘরে ফিরলে পরের দিন সকালে কীভাবে আসবেন তাঁরা অনুশীলনে?
বিজয় মালিয়ার দিন এখন শেষ। এখন আর দুই প্রধানের ফুটবলারদের নিজেদের ক্লাবের জার্সি পরে ইডেন ভরাতে হয় না। কলকাতার ফুটবল ক্লাবের হয়ে খেললেও সমর্থন করতে হয় না ভিনরাজ্যের ফ্র্যাঞ্চাইজিকে। সবার অলক্ষ্যে গাইতে হয় না ‘করব, লড়ব, জিতব রে’।