আগের সিরিজেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংলিশরা হয়েছে হোয়াইটওয়াশ। আইরিশরা সেখানে পাত্তাই পাবে না সেটিই প্রত্যাশিত। প্রথম দুই ম্যাচেও তাই হয়েছে। তবে সিরিজের শেষ ম্যাচে এসে যেন নিজেদের ছন্দ খুঁজে পেলো আয়ারল্যান্ড। প্রথমে বাংলাদেশকে ১২৪ রানে অলআউট করার পর ব্যাটিংয়েও রীতিমতো দাপট দেখিয়েছে পল স্টার্লিংরা। ৩৬ বল হাতে রেখে সাত উইকেটের জয়ই জানান দেয় উড়তে থাকা বাংলাদেশ শেষ ম্যাচে রীতিমতো অসহায়ই ছিল আয়ারল্যান্ডের কাছে। আগেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করা বাংলাদেশের জন্য ব্যাটে বলে হতাশাজনক এক দিনই কাটলো চট্টলায়।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে আগের দুই ম্যাচেরই পুনরাবৃত্তি করতে চাইলেন লিটন দাস আর রনি তালুকদার। কিন্তু টি -টোয়েন্টির নতুন বাংলাদেশের দেখা যেন এদিন মিলল না। হর-হামেশাই আগ্রাসী এপ্রোচে ব্যর্থ হবে দল। আজ হলোও তাই। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ব্যক্তিগত পাঁচ রান করে মার্ক এডায়ারের বলে ডকরেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান লিটন দাস।
প্রথম দুই ম্যাচে তেমন কিছু করতেই হয়নি আগের সিরিজেই সিরিজ সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব জেতা নাজমুল হোসেন শান্তর। আজ সুযোগ ছিল ইনিংস বড় করার। কিন্তু আট বলে চার রান করে ফিরে গেলেন তিনিও। এরপর রনি তালুকদার, তাওহিদ হৃদয়, সাকিব আল হাসানরা দ্রুতই সাজঘরের পথ ধরলে ৬১ রানে সাত উইকেটের দল তখন বাংলাদেশ।
আগের দুই ম্যাচেই দুইশো পেরোনো বাংলাদেশের তখন দলীয় সংগ্রহ ১০০ রান অবদি নিয়ে যাওয়াটাও দূরের বাতিঘর। কিন্তু তখনই বাংলাদেশের ত্রাণকর্তা হিসেবে এলেন শামীম হোসেন পাটওয়ারী। দীর্ঘদিন পর দলে ফিরেছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে। সেই সিরিজের দুই ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগই পাননি। আয়ারল্যান্ড সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেও খুব বেশি অবদান রাখার সুযোগ ছিল না।
নিজেকে নতুন করে চেনাতে শামীম বেছে নিলেন এই সুযোগটাকেই। ছয় নম্বরে নামা শামীমকে পুরো ইনিংসেই ব্যাট করতে হয়েছে টেল এন্ডারদের নিয়ে। কিন্তু কি অসাধারণ ভাবেই না গড়লেন সেই ইনিংস। নাসুমকে নিয়ে ৩৩ রানের পার্টনারশিপে দলের সংগ্রহকে ১০০ এর ওপরে নিয়ে যাবার দিকে গেলেন। দুর্দান্ত সব শট খেলতে থাকা শামীম পেয়ে গেলেন নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি।
ফিয়ন হ্যান্ডের বলে আউট হবার আগে ৪২ বলে পাঁচ চার আর দুই ছক্কায় ৫১ রান করেন শামীম। বাংলাদেশ পায় মোটামুটি লড়াই করার মত ১২৪ রানের পুঁজি।
১২৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক আয়ারল্যান্ড। অধিনায়ক পল স্টার্লিং নিজের সেরাটা যেন তুলে রেখেছিলেন শেষ ম্যাচের জন্যই। ওয়ানডে সিরিজ আর টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে রীতিমতো মুখ থুবড়ে পড়েছিল আইরিশ ব্যাটিং লাইনআপ। কিন্তু এদিন আয়ারল্যান্ডকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন স্টার্লিং।
দলীয় ১৭ রানে তাসকিন এডায়ারকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দিলেও অন্য প্রান্তে যেন তোয়াক্কাই করলেন না আইরিশ অধিনায়ক। বাংলাদেশ বোলারদের অসহায় বানিয়ে হাঁকাতে থাকলেন একের পর এক বাউন্ডারি। অভিষিক্ত রিশাদ হোসেনের বলে আউট হবার আগে ৪১ বলে ৭৭ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেন তিনি।
মূলত স্টার্লিংয়ের ইনিংসটাই আইরিশ ব্যাটিংয়ের হাইলাইটস। এই এক ইনিংসই ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশের হাত থেকে। প্রথম ইনিংস শেষেই আপতপক্ষে ম্যাচে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বোলারদের ওপর যেটুকু আশা ছিল তাও শেষ করেছন স্টার্লিং।
আগের সিরিজেই ইংল্যান্ডকে ধবলধোলাই করার পর আইরিশরা টাইগারদের কাছে উড়ে যাবে সেটিই প্রত্যাশিত ছিল। প্রথম দুই ম্যাচে হয়েছেও তাই। তবে তৃতীয় ম্যাচে এসে ব্যর্থ বাংলাদেশের পুরো ব্যাটিং লাইনআপই। ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় নিশ্চিত হলেও, নিশ্চয়ই ভালো ভাবেই সিরিজটা শেষ করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ।