এক, বিশাল এক গণিতের দুনিয়ার ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্ক। এই অঙ্ক মাঝেসাঝে নিদারুণ এক দু:খের জলে ভাসায়। আবার ভিন্ন চিত্রও ঘটতে দেখা যায়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পুরো সিরিজ জুড়েই এই ‘এক’ অঙ্ক ঠিক কতটা দূরত্ব তৈরি করে তা যেন হাড়েহাড়ে টের পেয়েছে আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটাররা।
সিরিজের শুরুতেই এক উইকেটের পরাজয়। সিরিজের শেষ ম্যাচটাতেও ব্যবধান গড়ে দেয় সেই এক অঙ্ক। হায়রে! এক মহাসমুদ্র সমান দূরত্ব। তিনটি ম্যাচই হেরেছে আয়ারল্যান্ড। তবে তিন ম্যাচেই তামাম দুনিয়ার ক্রিকেট ভক্তদের মনটা ঠিক জয় করে নিয়েছেন আইরিশ ক্রিকেটাররা। প্রতিটা ম্যাচেই লড়াই করে গেছে একেবারে শেষ অবধি। তবে আক্ষেপের মহাসাগরে ডুবে যাওয়া ছাড়া অর্জনের খাতা একেবারেই শূন্য।
এইতো সেদিনের কথা আয়ারল্যান্ড পেয়ে যায় আইসিসির পূর্ণ সদস্য। তবে এখনও খুব একটা আলোচনায় আসে না আইরিশ ক্রিকেট। তবে এবার যেন আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটাররা মনে করিয়ে দিলো আয়ারল্যান্ড প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে সবার সাথে টক্কর দেবার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ অন্তত সে বার্তাই দেয়।
সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নামে আয়ারল্যান্ড। হ্যারি টেক্টরের শতকের বদৌলতে ডাবলিনে ৩০০ রানের সংগ্রহ পায় আইরিশরা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয় ২০১৯ বিশ্বকাপের রানার্সআপ নিউজিল্যান্ড। ৩০১ রানের জয় তুলতে তাঁদেরকে অপেক্ষা করতে হয় শেষ ওভার অবধি। শেষ ওভারে সবাইকে রীতিমত অবাক করে দেন নিউজিল্যান্ডের মিশেল ব্রেসওয়েল।
শেষ ওভারে ব্ল্যাকক্যাপসদের জয়ের জন্যে প্রয়োজন ছিল ১৯ রান। তবে তিন চার ও দুই ছক্কায় এক বাকি থাকতে জয় তুলে নেয় ব্রেসওয়েল। আর আয়ারল্যান্ডকে ভাসায় বিষাদের সমুদ্রে। পরের ম্যাচেও লড়াইটা জমিয়ে তুলেছিল আয়ারল্যান্ড। তবে সে ম্যাচেও বিষাদ অপেক্ষা আর কিছুই জোটেনি তাঁদের। শেষ ম্যাচটা যেন আরও বেশি জমজমাট।
মাত্র একটি রানের ব্যবধানে হারতে হয় আয়ারল্যান্ডকে। তবে এই যে এত কাছে যেতে পারবে আয়ারল্যান্ড সেটাই বা চিন্তা করেছিল কে! ৩৬১ রানের পাহাড়সম টার্গেট দাঁড়া করায় নিউজিল্যান্ড। এই রান সংগ্রহে মার্টিন গাপটিল হাকান শতক আর হেনরি নিকোলাস তুলে নেন দ্রুত গতির অর্ধশতক। জবাবে ব্যাট করতে নেমে বিন্দুমাত্র ঘাবড়ে যায়নি আইরিশ ব্যাটাররা।
বরং চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছে। পল স্টার্লিং আর হ্যারি টেক্টর নেতৃত্ব দেন সামনে থেকে। দুই জনে মিলে গড়ে ফেলেন ১৭৯ রানের এক সুবিশাল জুটি। এই জুটি আশার আলো হয়ে সামনে আসে। দ্রুত রান তুলে আশার মশালে জ্বালানি সর্বরাহ করতে থাকে স্টার্লিং-টেক্টর জুটি। তাঁরা খেলাটা নিয়েও যান শেষের দিকে। তবে তাঁদের পরে নামা ব্যাটাররা খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। তবুও খেলা গড়ায় শেষ ওভারে। পঞ্চাশতম ওভারে দরকার ছিল দশ।
হাতে ছিল কেবলমাত্র দুই উইকেট। তবে আইরিশ কোন সেট ব্যাটার ছিলেন না ক্রিজে। যার ফলে মাত্র দশ রানও সংগ্রহ করা হয়ে ওঠেনি আয়ারল্যান্ডের। তবুও শেষ ওভারে এসেছিল আট রান। আর সেই একটি অংকের আক্ষেপ সাগরে আরেকটু খানি তলিয়ে যায় গোটা আয়ারল্যান্ড। তবুও তাতে মানুষের মনে গভীর একটা দাগ কেটে গেল এই আয়ারল্যান্ড।
গেল বছর ওয়ানডেতে সেরা রান সংগ্রাহকের তালিকায় সবার উপরে ছিলেন পল স্টার্লিং। আবার এ বছরও রয়েছেন ছন্দে। অন্যদিকে হ্যারি টেক্টরও রয়েছেন ফর্মে। তিনিও রান করছেন নিয়মিত, প্রায় পঞ্চাশোর্ধ গড়ে। এমন সব খেলোয়াড় এবং পারফরমেন্স একটা নিরব দাবি জানায়। ‘আরও বেশি ম্যাচ চাই বড় দল গুলোর সাথে।’