একের পর এক হতাশায় শেষ হয়েছে বেশ কয়েকটা বছর। সম্ভাবনার দিক দিয়ে ক্লাবটা পৌঁছে গিয়েছিল শূন্যের কোঠায়। শূন্য সম্ভাবনার রেশ ঘিরে ধরেছিল গোটা দলটাকেও। বলছি গত দুই দশক ধরে ব্যর্থতায় বেড়াজালে বদ্ধ হয়ে থাকা আর্সেনালের কথা। মৃতপ্রায় এ ক্লাবকে একটু জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছিলেন মিকেল আর্তেতা। কিন্তু তারপরও তাঁর সামনে শত প্রতিকূলতা। ক্লাবের ট্রানজিশন পিরিয়ড সামলানোর গুরুদায়িত্ব।
টানা ব্যর্থতায় আর্সেনালের অবস্থা এক সময় এমন হয়ে উঠেছিল যে, কোনো মতে লিগ টেবিলে ৬ এর মধ্যে থেকে থেকে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। আরতেতা দলের মধ্যে সেই মানসিকতা পরিবর্তন করারই চেষ্টা করলেন। বড় স্বপ্নের দিকে পা বাড়ালেন। আর্সেন ওয়েঙ্গারের মত আর্সেনাল ডাগ আউটে একটা জাগরণ তৈরি করার চেষ্টা করলেন। দলকে একদম ঢেলে সাজালেন।
গত মৌসুমে সেটার প্রতিফলনও দেখা গেল দ্রুতই। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট টেবিলে তিন/চারের মধ্যেই উঠানামা করছিল আর্সেনাল। যা সময়ের বিবেচনায় বেশ সফল চিত্রই বটে। কিন্তু দুর্দান্ত খেলে লাভ কী?
যদি চ্যাম্পিয়নস লিগেই নিজেদের জায়গা নিশ্চিত না করা যায়? আর্সেনালের ক্ষেত্রেও এমন হলো। লিগের শেষ মুহূর্তে এসে খেই হারিয়ে ফেললো তারা। আর তাতে পয়েন্ট টেবিলের পাঁচে নেমে গেল আর্সেনাল। ফলাফল- চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলার সুযোগ আরো একবার হাতছাড়া হল।
২০২২/২৩ মৌসুম। নতুন করে শুরু করার দৃঢ় প্রত্যয়। ডিফেন্ডার আলেকসান্দার জেনচেঙ্কো এবার ক্লাবের সবাইকে একটা বার্তা দিলেন- চলতি মৌসুমে শীর্ষ তিনে থাকা চাই-ই চাই। জেনচেঙ্কোর কথা শুনের ড্রেসিংরুমে থাকা বেশ কিছু খেলোয়াড় বিস্ময়ে ভেসে হেসেও ফেললেন। ব্যাপারটা এমন যে, টানা ব্যর্থতায় ভঙ্গুর আত্মবিশ্বাস থেকে কেউ বেরই হতে পারছে না।
কিন্তু, কিছুটা অবাক বিস্ময়ে ভেসে যাওয়ার মতোই ব্যাপার যে, আর্সেনাল এবার প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত লিগ টেবিলে শীর্ষে আছে। আগের বারের চ্যাম্পিয়ন ম্যানসিটি থেকে ৫ পয়েন্টের স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছে আরতেতার দল। তাও আবার এক ম্যাচ কম খেলে। প্রায় দুই দশক বাদে আবারো তাই ইপিএল শিরোপা উঁচিয়ে ধরার জন্য মুখিয়ে আছে আর্সেনাল।
হ্যাঁ। লিগ শিরোপার জন্য এখনও লম্বা এক পথ পাড়ি দিতে হবে আর্সেনালকে। এখন পর্যন্ত কেবল অর্ধেক পথ অতিক্রান্ত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আর্সেনাল মাঠের ফুটবলে যা করে দেখিয়েছে তা রীতিমত দুর্দান্ত। ১৯ ম্যাচের মাত্র ১ টিতে পরাজয় আর ২ টি ম্যাচে ড্র। বাকি ১৬ ম্যাচেই জয়। আর ১৯ ম্যাচে এমন দুর্দান্ত ফর্ম অব্যাহত থাকলে এবারের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা নিশ্চিতভাবেই যাচ্ছে আর্সেনালের ঘরে।
লিগ শুরুর আগে জেনচেঙ্কোর কথায় সবাই হাস্যরসে মেতে উঠলেও আর্সেনালের এবারের দলটা ছিল সম্ভাবনায় পূর্ণ। আর সেই সম্ভাবনাগুলোই এবার আর্সেনালের দুয়ার খুলে দিয়েছে। আর্সেনালের আক্রমণভাগের কথাই ধরা যাক। রাইট উইংয়ে আছেন বুকায়ো সাকা সেন্টার ফরোয়ার্ডে আছেন আরেক ইংলিশ ফুটবলার এনকিতিয়াহ।
এই মুহূর্তে এ দুই জনকেই ইংল্যান্ডের সবচেয়ে প্রতিভাবান ফুটবলার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। লিগ জুড়েও দু’জন দিয়েছেন আস্থার প্রতিদান। সাকা এবারের লিগে ৭ গোলের পাশাপাশি ৭ টি এসিস্ট করেছেন। আবার এনকিতিয়াহর শেষ মুহূর্তের গোলে গত ম্যাচেই ম্যানইউকে হারিয়ে পূর্ণ ৩ পয়েন্ট পেয়েছে আর্সেনাল।
এ দিকে লেফট উইংয়ে থাকা গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেলিও আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। ৭ গোলের পাশাপাশি ২ গোলে সহায়তা করেছেন তিনি। আর্সেনালের ভবিষ্যৎ কতটা সমৃদ্ধির পথে যাচ্ছে তা আক্রমণভাগে থাকা খেলোয়াড়দের বয়সের দিকে তাকালেই হয়। সাকা, এনকিতিয়াহ কিংবা মার্টিনেলি- কেউই এখনও বয়সে ২৩ অতিক্রান্ত করেননি। আর্সেনাল এবার এই তারুণ্য নির্ভর দল দিয়েই সফলতা পাচ্ছে। দুই তিন মৌসুম আগে থেকেই যে ইঙ্গিত তারা দিয়ে আসছিল তা বাস্তব হয়ে ধরা দিচ্ছে এবারের মৌসুমে।
এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৩ বার প্রিমিয়ার লিগ শিরোপ জিতেছে আর্সেনাল। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে প্রথম বারের মত লিগ শিরোপা জিতেছিল গানার্সরা। এরপর ২০০১-০২ মৌসুমের পর ২০০৩-২০০৪ মৌসুমে শিরোপা জিতেছিল আর্সেনাল। কিন্তু এরপর টানা ব্যর্থতায় আর লিগ শিরোপা জেতা হয়নি আর্সেনালের। বেশ কিছু বছর বাদে আবার শিরোপা জেতার লড়াইয়ে বেশ ভালভাবেই আছে মাইকেল আরতেতার দল।
যদিও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ মাঝেমধ্যেই রঙ বদলায়। খেই হারানো দল যেকোনো সময় চেনা ছন্দে ফিরতে পারে। আবার ছন্দে থাকা দল শেষ মুহূর্তে খেই হারিয়ে ফেলতে পারে। তাই আর্সেনালের জন্য ইপিএল শিরোপা এখনও অনেক দূরের পথ। তবে এখনকার ছন্দের ধারাবাহিকতা থাকলে এবারের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা খুব সম্ভব আর্সেনালের জন্য।
ইংল্যান্ডের ইতিহাসে তৃতীয় সফল ক্লাব আর্সেনাল। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১৩ টি শিরোপা জিতেছে গানার্সরা। তথাকথিত অলক্ষুণে ১৩ সংখ্যাটাকে ১৪ তে নিয়ে যাওয়া হতে পারে এ বছরেই। তবে বাকি ১৯ ম্যাচে দেখাতে হবে ছন্দ। তাহলেই বহু বছর বাদে আবারো ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপার মুখ দেখবে আর্সেনাল।