শিরোনামটা দেখেই নিশ্চয় আঁতকে উঠলেন। ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাকিবকে টেকনিক্যালি অনেকেই বাংলাদেশের সেরা অধিনায়ক ভাবেন। বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবালও একবার এক ইন্টারভিউতে সাকিবকে ট্যাক্টিক্যালি সেরা অধিনায়ক তকমা দিয়েছিলেন। অথচ সেই সাকিব কিনা সবচেয়ে বাজে ক্যাপ্টেন! বিস্ময় না হয়ে উপায় কই!
কিন্তু বাস্তবতা তো ভিন্ন কথা বলে। মাঠের ক্রিকেটে একজন অধিনায়কের চূড়ান্ত লক্ষ্য ম্যাচজয়। আর সেই মানদন্ডেই একজন অধিনায়ক কতটা সফল আর কতটা ব্যর্থ তা নির্ণয় করা যায়। অধিনায়ক সাকিব সেই সংখ্যাতত্ত্বেই বেশ খানিকটা পিছিয়ে।
আপাতত পরিসংখ্যান যা বলে, মাঠের ক্রিকেটে নিজের পারফরম্যান্সে সাকিব এ প্লাস পেলেও, অধিনায়কত্বে তার ফলাফলটা একদম ডাহা ফেল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে ন্যূণতম বিশ ম্যাচ অধিনায়কত্ব করেছেন এমন তালিকায় অধিনায়ক সাকিবের অবস্থান ব্যর্থতার দিক দিয়ে একদম শীর্ষে, আর সফলতার দিক দিয়ে অবস্থান একদম তলানিতে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাকিব এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ২৮ ম্যাচে। কিন্তু তাঁর অধিনায়কত্বে সেই ২৮ ম্যাচের ২০ টিতেই বাংলাদেশের পরাজয় জুটেছে। অর্থাৎ অধিনায়ক হিসেবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সফলতার হার মাত্র ২৮.৫৭%।
আর এই হারটা শুধু বাংলাদশের মধ্যে নয়, নূন্যতম বিশ ম্যাচের হিসেবে পুরো বিশ্বের মধ্যেই সর্বনিম্ন। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের কোনো অধিনায়কও তেমন সফলতা দেখাতে পারেননি। ব্যর্থতায় একে অন্যকে ছাড়িয়ে গেছেন।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৪৩ টি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। সেই ৪৩ ম্যাচে তাঁর জয়সংখ্যা ১৬ টিতে।
এর মধ্যে ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডকে টানা দুই সিরিজে সব মিলিয়ে সাত ম্যাচজয় সে সংখ্যাটাকে একটু বাড়িয়েছে। তাছাড়া তাঁর অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ বেশির ভাগ সময় পরাজয়ের বৃত্তেই আঁটকে ছিল। তারপরও এখন পর্যন্ত ম্যাচজয়ের দিক দিয়ে বাংলাদেশের সেরা অধিনায়ক তিনিই।
মাশরাফির ছোঁয়ায় বাংলাদেশ ওয়ানডে দল পাল্টে গেলেও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে তিনিও তেমন সফলতা দেখাতে পারেননি। তাঁর অধীনে বাংলাদেশ ২৮ ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেছিল ১০ টিতে। তবে তাঁর অধিনায়কত্বেই ২০১৬ সালে এশিয়া কাপে ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। সেবারের এশিয়া কাপ হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।
টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে মুশফিকুর রহিমের শুরুটা দুর্দান্তই হয়েছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১২ সালে ২৫ বলে অপরাজিত ৪১ রানের ইনিংস খেলে হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। একই সাথে নিজের অধিনায়কত্বের অভিষেক ম্যাচেই পেয়েছিলেন জয়। তবে পরবর্তীতে সেই ধারা অব্যাহত রাখতে পারেননি তিনি। বাংলাদেশকে সবমিলিয়ে ২৩ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর মধ্যে জয় পেয়েছেন মাত্র ৮ টি ম্যাচে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের অধিনায়কত্বদের যতটা না ব্যর্থতা তার চেয়ে বরং সেটাকে দলগত ব্যর্থতায় বলা চলে। কারণ অনেক দিন বদলের গল্প শুনিয়েও সেই আগের দৈন্যদশাতেই আঁটকে আছে বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সরিয়ে সাকিবকে অধিনায়কত্বের বসানোর পর কিছুটা আশা জেগেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট মহলে। তবে সে আশায় গুড়েবালি।
নতুন করে দায়িত্ব নেওয়ার পর ৮ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করলেও জয় এসেছে মাত্র একটিতে। যে তিমিরে বাংলাদেশ ছিল সেই তিমিরেই আঁটকে আছে তারা। তাই অধিনায়ক হিসেবেও সাকিবের পাশে বসেছে ব্যর্থতার বিব্রতকর রেকর্ড। যদিও সাকিবের সামনে সুযোগ রয়েছে সেই বৃত্ত থেকে বের হবার।
সাথে পাশে পাচ্ছেন বিসিবিকেও। তবে দিনশেষে সেই একটি কথায় ঘুরে ফিরে আসবে, অধিনায়ক সাকিবকে সফলতায় সমৃদ্ধ করতে হলে তো টিম বাংলাদেশকে টিম হয়ে খেলতে হবে। ম্যাচে জিততে হবে। আর সেখানেই রয়েছে বড়সড়ো একটা গলদ। ম্যাচজয় তো দূরে থাক, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাদের থেকে ন্যূণতম ইন্টেন্টটাও চোখে পড়ে না। আর সময়ের সাথে সেই ধারা অব্যহত থাকলে ব্যর্থ বাংলাদেশের সাথে সাকিবের পাশেও বসবে বাজে অধিনায়কের তকমা।