বিশ্রাম, বিদায় ও বিশৃঙ্খলা

বেশ পালাবদল চলছে বাংলাদেশের ক্রিকেট মহলে। তারুণ্যের জয়োগানের মধ্যেও একটা ছোট্ট বিতর্ক আছেই। ক্রিকেটপাড়ায় বেশ কানাঘুষা শুরু হয়েছে মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিককে বাধ্যতামূলক বিশ্রামে পাঠানোর ঘটনায়। বিষয়টা কি কেবলই বিশ্রামের? নাকি কৌশলে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ অধ্যায়ের ইতি টানছে বোর্ড? সময়ের পালাবদলে এক কালের সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটারদের কি দলে জায়গা দিতেই ইতস্তত করছে ক্রিকেট বোর্ড? সরাসরি বাদই বা কেন দেওয়া যাচ্ছে না?

তবে কিছু তো একটা ঘটছেই। বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেক ধরনের পরিবর্তন যে এসেছে একথা তো মানতেই হবে। দলে নতুন অনভিজ্ঞ অথচ সম্ভাবনাময় তারুণ্যের সমারোহ। তাঁরা আশাজাগানিয়া বাণী শোনাচ্ছেন টাইগার ভক্তদের। বিসিবিও সম্ভবত আস্থার সবটুকুই এবার ঢেলে দিতে চাচ্ছেন এই তরুণদের ওপর।

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন সোমবার অবশ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ টিটোয়েন্টি ক্রিকেটটা ভালো খেলছে না, এখন বোর্ড নতুন কিছু করার চেষ্টা করছে।’

ফলস্বরূপ এই সিরিজের টি- টোয়েন্টি ফরম্যাটে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বাধ্যতামূলক বিশ্রাম দিয়েছে। এইদিকে অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান তো আগেই ছুটি নিয়ে রেখেছিলেন। তামিম ইকবালও সম্প্রতি হুট করেই বিদায় জানিয়েছেন ক্রিকেটের এই স্বল্প ঘরানাটিকে। আর মাশরাফি বিন মর্তুজা ২০১৭ তেই অবসরে গিয়েছেন। তাঁর মানে দলে নেই সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাশরাফি, মাহমুদুল্লাহ কেউই। বাংলাদেশ ক্রিকেটের পঞ্চপাণ্ডবের অনুপস্থিতিতে দলের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে টান পড়বে এটা স্বীকার করতেই হবে।

আসন্ন জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বিসিবি। স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিনটি টি-টোয়েন্টি ও তিনটি ওডিআই ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ৩০ জুলাই থেকে শুরু হতে যাচ্ছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের সফর। নুরুল হাসান সোহানকে অধিনায়ক করে ১৫ সদস্যের টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা করেছে বিসিবি। অবশ্য ওয়ানডে স্কোয়াডে রাখা হয়েছে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহকে।

অবশ্য ঢালাওভাবে ক্রিকেট বোর্ডকে দোষ দেওয়াটাও অনুচিত হবে। সর্বশেষ ১০ ইনিংসে মুশফিকের ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ১৭৭ রান। এই ১০ ইনিংসে ফিফটি রয়েছে মাত্র একটি। মুশফিকের পরিসংখ্যান কিছুটা সম্মানজনক হলেও, রিয়াদের পরিসংখ্যান বেশ হতাশাজনক। শেষ ১০ ম্যাচে মাহমুদুল্লাহর রান ১২২।

একটি ম্যাচেও ফিফটির দেখা পাননি রিয়াদ। কেবলমাত্র দুটিতে রানের খাতায় বিশের ঘর পার হতে পেরেছেন! এরকম অফফর্মে থাকা অবস্থায় একজন ক্রিকেটার দল থেকে বাদ পড়বে এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু বিসিবি এখনো বিষয়টিকে বিশ্রাম বলেই দাবি করছে।

অথচ জিম্বাবুয়ের হলো বাংলাদেশের প্রিয় প্রতিপক্ষ। চাইলেই তুলনামূলকভাবে দুর্বল এই দলের বিপক্ষে অভিজ্ঞ মুশফিক- মাহমুদুল্লাহদের নিজেদের প্রমাণের আরেকটা সুযোগ দেয়া যেত টি- টোয়েন্টিতে। কিন্তু বোর্ড কর্মকর্তারা বরং সিদ্ধান্ত নিলো বাংলাদেশের লাকি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তরুণ সম্বলিত দলকেই পাঠাতে।

খালেদ মাহমুদ সুজন আগে বলেছিলেন ‘রিয়াদ, মুশফিক, সাকিব, তামিম এরা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনেক দিয়েছে। আবার একই সাথে এটাও মানতে হবে তারা সারাজীবন ক্রিকেট খেলবেন না।

ক কথায় সিনিয়র ক্রিকেটারদের সময় ফুরিয়ে আসার কঠিন সত্য কথাটা সুজন হয়তো বলেই ফেললেন। অর্থাৎ এই মুহুর্তে ক্রিকেট বোর্ডের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে তরুণ তারকারা। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ভবিষ্যতে সমৃদ্ধ করার দায়িত্বটা ধীরে ধীরে তাদের কাঁধে তুলে দিতে যাচ্ছে ক্রিকেট বোর্ড।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link