ঘুরেফিরে আসছে সেই ২০০৭

জমে উঠেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের খেলা। সুপার টুয়েলভ পেরিয়ে এবার সেমিফাইনালের পালা। সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড বনাম ভারত এবং নিউজিল্যান্ড বনাম পাকিস্তান। এই দুই ম্যাচে জয়ী দল দুইটি ফাইনালের টিকিট কাটতে সমর্থ হবে। সেমির পর্বটা পেরোলেই ফাইনাল। মানে বলা যায়, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের প্রতিযোগিতাটির এক্কেবারে শেষদিকে চলে এসেছে বিশ্বকাপ। অপেক্ষা কেবল আর তিন ম্যাচের।

এবারের বিশ্বকাপের আসরে টানটান উত্তেজনার কমতি ছিল না কখনোই। প্রায় সেমিতে পৌঁছে যাওয়া থেকে এক ধাপ দূরে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে অলৌকিক এক জয়ে টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। এই জয় সম্ভবত ডাচরা নিজেরাও স্বপ্নে দেখেননি। তবে এই জয় দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য দু:স্বপ্ন হলেও, বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচের জন্য সেমিফাইনালের দ্বার খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশকে হারিয়ে পাকিস্তান সেমিতে পৌঁছে যায়।

রীতিমতো সেমিফাইনালিস্ট নির্ধারণের জন্য সুপার টুয়েলভের শেষদিন অবধি অপেক্ষা করতে হয়েছে। এই জন্য পাকিস্তান দলটি ডাচদের একটি ধন্যবাদ দিতেই পারে। আর এই একই গ্রুপ তথা গ্রুপ-২ থেকে ভারত আগেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে রেখেছিল জিম্বাবুয়েকে ৭১ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে দিয়ে। ওদিকে গ্রুপ-১ থেকে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে নিউজিল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড।

ভারতীয় দলটি বর্তমানে বেশ শক্তিশালী অবস্থানে আছে। বিরাট কোহলি, বর্তমানে দারুণ ফর্মে থাকা সুরিয়াকুমার যাদবের মত ব্যাটার এবং আর্শদ্বীপ সিং, ভুবনেশ্বর কুমার, হার্দিক পান্ডিয়া এবং মোহাম্মদ শামির মত ইস্পাত কঠিন বোলিং লাইন আপ দিয়ে ভারত সহজেই যেকোন দলকে ধ্বংস করে দিতে পারে। ইতোমধ্যে প্রতিপক্ষ ভারতের এমন বিধ্বংসী রূপ দেখে ইংল্যান্ড দলটি নড়েচড়ে বসেছে এই ব্যাপারটি নিশ্চিত।

ওদিকে আবার পাকিস্তানের পেস বোলিং তো বিশ্ববিখ্যাত। পাকিস্তানের গতিদানবদের মোকাবেলার চিন্তা যেকোন ব্যাটারের বুকে ভয় ধরায়। তাছাড়া নিজেদের দিনে বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান, শাদাব খান একা হাতে ম্যাচ জেতাতে সক্ষম। তাই নিউজিল্যান্ড দলটির জন্য পাকিস্তানকে টপকে ফাইনালে যাওয়াটা সহজ হবে না।

বিশ্বক্রিকেটে এখন টানটান উত্তেজনা। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আগ্রহটা বরং বাড়ছেই। ক্রিকেটভক্তদের মনে উঁকি দিচ্ছে রাশি রাশি প্রশ্ন। কোন দুইটি দল ফাইনালে যাবে? কোন দুইটি দল এতদূর এসেও থমকে যাবে? শেষমেশ বিশ্বকাপের স্বপ্নের ট্রফিটা কোন দল সগৌরবে উঁচিয়ে ধরবে? এবারে রানার্স আপই বা কারা হবে। ফাইনালের জন্য আরও প্রায় এক সপ্তাহ বাকি। এরই মধ্যে বাতাসে জল্পনা কল্পনার অন্ত নেই।

উপমহাদেশীয় পাওয়ার হাউসগুলোর ভক্তরা ইতোমধ্যেই তাঁদের স্বপ্নের ম্যাচ আপের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন কাদের কথা বলছি। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। বলছিলাম দুই চির-প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচের কথা। ভারত পাকিস্তানের অনেক ভক্তই ইতোমধ্যে ধরে নিচ্ছেন যে, এই দুই দলই শিরোপার লড়াইয়ে শেষ মোকাবেলায় অংশগ্রহণ করবে।

এমন তখনই হবে যখন ভারত সেমিফাইনালের ম্যাচটিতে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডকে হারাবে, অন্যদিকে পাকিস্তান নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় তুলে নিবে। তবেই ভারত ও পাকিস্তান উভয় দলই ফাইনালের যোগ্যতা লাভ করবে। কিন্তু যদি অন্যরকম ফলাফল হয়, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতিও ভিন্ন হবে।

তবে ভারত-পাকিস্তানের ভক্তরা বরাবরই অন্য যেকোনো দলের সাথে মোকাবেলার চেয়ে বরং নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ের জন্য মুখিয়ে থাকে। সীমানার রাজনৈতিক দ্বন্দ থেকে মাঠের ক্রিকেটের লড়াই, দুই দলের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার সূচনাটা ঘটে যেন ভ্রূণের মাতৃগর্ভে থাকাকালীনই। মাঠের লড়াইয়ে একে অন্যকে বধের চিন্তায় উৎসুক হয়ে থাকা এই দুই দলের মধ্যকার ম্যাচের উত্তাপটা তাই অন্য সব ম্যাচ থেকে একটু বেশিই থাকে।

আবার কিছু কিছু ভক্ত ইতোমধ্যেই কল্পনা করে নিয়েছেন এবারের বিশ্বকাপটি ২০০৭ বিশ্বকাপের অনুরূপ হতে যাচ্ছে। খুলেই বলি। সেবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। তাই অনেকে আশা রাখছেন ২০২২ এ হতে যাচ্ছে ২০০৭ আসরের পুনরাবৃত্তি।

আর ২০০৭ সালের সেই ফাইনালটা তো ক্রিকেট ইতিহাসেরই অংশ। প্রথমবারের মত আইসিসি ইভেন্টের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল এই দুই দল। আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তানকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন মিসবাহ উল হক। শেষ ওভারের লড়াই। উইকেট তখন একটা হাতে থাকলেও, ম্যাচ পাকিস্তানের লাগামে। কিন্তু, যোগিন্দর শর্মার বলে হঠাৎই কি যেন হল মিসবাহ’র। ইম্প্রোভাইজ করতে গেলেন, ক্যাচ উঠল। ধরলেন শ্রীশান্থ। ভারতের উৎসব, পাকিস্তানের কান্না। এবারের বিশ্বকাপেও কি তেমন কিছুই অপেক্ষা করছে এমসিজিতে? কে জানে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link