পূর্বকথন
ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের সাথে টেস্ট হেরেছে ভারত। সেই সাথে টাটকা স্মৃতি জানান দিচ্ছে এই বিরাটবিহীন দলের নেতৃত্ব দিয়ে অস্ট্রেলিয়া জয় করে ফিরেছিলেন অজিঙ্কা রাহানে। ব্যাস, দুইয়ে দুইয়ে মিলে গেছে চার, বসন্তে কোকিলের ডাকের সাথেই শোনা যাচ্ছে গুঞ্জন- বিরাট কোহলি কি তাহলে ভারতের টেস্ট দলের নেতৃত্বে থাকার যোগ্য নন?
আরো পড়ুন
ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া-বিরাট-অজিঙ্কা
যে ইংল্যান্ড ম্যাচ নিয়ে বিরাটের নেতৃত্বের টানাটানি, সে ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসে বিরাট করেছিলেন ৭২। বিরাট ছাড়াও শুভমন গিল একটা হাফ-সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন বটে ,কিন্তু আমরা কি এটা ভুলে যেতে পারি যে বিরাট আর শুভমন ছাড়া আর কেউ ২০ এর কোটাও পার করতে পারেনি? সে হিসেবে শুধুমাত্র অধিনায়কের দিকে আঙুল তোলা আসলে ঠিক কতটা যৌক্তিক?
এটা ঠিক যে অস্ট্রেলিয়াতে দুর্দান্ত নেতৃত্ব দিয়েছেন অজিঙ্কা রাহানে, সেজন্যে তিনি ক্রেডিট পেতেই পারেন। কিন্তু সেজন্যে তাকে কি বিরাটের চাইতেও সেরা অধিনায়ক বলা যায়? কিংবা এরপরে একটা ম্যাচ হারলেই বিরাটের হাত থেকে অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড নিয়ে নেওয়া যায়?
অধিনায়কত্বের পরিসংখ্যান
টেস্টে অধিনায়ক বিরাট কোহলি ইতোমধ্যেই নিজেকে সেরাদের কাতারে নিয়ে গেছেন। নিচে একটি ছবি সংযুক্ত করে দিলাম। এই ছবিটাতে সেইসব অধিনায়কদের তালিকা আছে যারা তাঁদের দলকে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে নেতৃত্বে দিয়েছেন।
এই তালিকাতেই অধিনায়ক কোহলির একটা চমকপ্রদ জয়ের হার পাওয়া যায় (৫৭.৮৯%)। শুধু তাই না, কোহলির এই জয়ের হার ক্লাইভ লয়েড, গ্রায়েম স্মিথ, স্টিফেন ফ্লেমিং আর বিরাটের নিজের দেশের মহেন্দ্র সিং ধোনির চাইতেও বেশি। এরপর যদি আমরা শুধুমাত্র ভারতীয় ক্রিকেটকেও বিবেচনা করি সেখানেও থাকবে চমক।
মহেন্দ্র সিং ধোনীর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টেস্ট ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন বিরাট কোহলি। আর তাতেই জয়ের হারে ধোনিকে পেরিয়ে গেছেন তিনি। শুধু কি তাই? বিরাট ছাড়া আর কোন অধিনায়ক যে ৩০ টেস্ট ম্যাচই জিততে পারেনি।
অধিনায়ক-ব্যাট-বিরাট
কোহলির অধিনায়ক থাকার একটি কারণ হল, অধিনায়ক থাকলেই তিনি বেশি দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করেন। পুরো চিত্রটা ভিজুয়ালাইজ করতে আমি নিচে একটি ছবি সংযুক্ত করে দিলাম। এখানে দেখা যাচ্ছে, বিরাট কোহলি অধিনায়ক হিসেবে মাঠে নেমেছেন ৫৭ ম্যাচে আর অধিনায়ক না থাকার সময় মাঠে নেমেছেন ৩১ ম্যাচে।
এখানে অধিনায়ক বিরাটের ব্যাটিং গড় ৬০.২৬ আর সাধারণ খেলোয়াড়ের ব্যাটিং গে ৪১.১৩!
এছাড়াও, অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকদের তালিকাতেও বিরাটের অবস্থান চার নম্বরে। সবচাইতে মজার ব্যাপার হল, এই রান সংগ্রাহকদের তালিকাতে বিরাটই সেরা পাঁচের একমাত্র খেলোয়াড় যিনি ১০০ এর কম টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। তাঁর পরের নাম ‘ক্লাইভ লয়েড’ ও বিরাটের চাইতে ১৭ ম্যাচ বেশি খেলে বিরাটের চাইতে ৭০ রান কম করেছেন।
বিরাট চাপে ভাল খেলেন সেটা আমরা আগেই জানতাম, সেটা আরেকবার মনে করিয়ে দিলাম আরকি।
শেষ
ভারতের অ্যাডিলেট-লজ্জার পর বিরাট কোহলি তাঁর সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে দেশে ফিরে এসেছিলেন। আর এরপরই নাটকীয়ভাবে সিরিজ জিতে নেয় ভারত। বিরাটের অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্নের শুরু সেখান থেকেই। কিন্তু পরিসংখ্যান সাক্ষী দিচ্ছে, বিরাট আস্তে আস্তে নিজেকে ইতিহাসসেরা অধিনায়কদের কাতারেই নিয়ে যাচ্ছেন, আর আস্তে আস্তে আরো উপরে ওঠাবেন নিজেকে।
এখনও কি কোন সন্দেহ আছে?