ঈশাণ কোণে আলোর পরিস্ফূরণ ঘটেছে

পাটনা থেকে রাঁচি। এরপর আইপিএল। ঈশান কিষাণের বাইশ গজে চলার পথটা ছিল ঠিক এমনই। তবে দারুণ প্রতিভাধর এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার ঠিক জাতীয় দলে এসে সুযোগটা নিজের করে নিতে পারছিলেন না। এমনিতে পারফর্ম করছিলেন নিয়মিতই। কিন্তু একাদশে থাকে তো মাত্র একজন উইকেটরক্ষক ব্যাটার।

আর সেই তত্ত্বেই পারফর্ম করা স্বত্ত্বেও ভারতীয় একাদশে নিয়মিত মুখ হয়ে উঠতে পারেন নি ঈশান কিষাণ। তবে ঘরের মাটিতে আসন্ন বিশ্বকাপের জন্য নিজেকে যেন দলের অটোমেটিক চয়েস বানানোর পথেই রয়েছেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার। এমনিতে ওপেনিং পজিশনে ব্যাট করলেও দলের প্রয়োজনে এ ব্যাটার ব্যাট করছেন মিডল অর্ডারে। শুধু ব্যাটই করছেন না, যথারীতি রান ফোয়ারা ছোটাচ্ছেন ব্যাটে।

সর্বশেষ ৪ ম্যাচে করেছেন টানা ৪ টা ফিফটি। আর সেই সুবাদে আসন্ন বিশ্বকাপে ভারতের একাদশে উইকেটরক্ষকের গ্লাভস পাওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন এই ঈশান কিষাণ। ২০১৯ বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব সামলেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।

এবার সেই দায়িত্বটা বোধহয় পেতে পারেন ঈশান! কী কাকতালীয় এক ব্যাপার। এই ধোনিকেই শৈশব থেকে ক্রিকেটের আইডল মেনে এসেছেন ঈশান কিষাণ। আর তাঁরই উত্তরসূরি এবার তিনি উইকেটের পিছনের ধোনির ভূমিকায় দাঁড়াবেন।

ঈশান কিষাণের ধোনিপ্রীতি কেমন ছিল, তা জানা যায় তাঁরই এক কাছে বন্ধুর কাছে। ঝাড়খণ্ডের পেসার মনু কুমার তাঁর বন্ধু ঈশান কিষাণকে নিয়ে জানিয়েছেন, ‘ঈশান ছোট বেলা থেকেই একজন যোদ্ধার মতো ছিল। আর সে যে ক্রিকেটার হবে, এটা তখন থেকেই ঠিক করে রেখেছিল। ও ধোনির বাড়ির খুব কাছেরই এক মাঠে প্র্যাকটিস করতো। সে সব সময়ই ধোনিকে অনুসরণ করত। ধোনির ব্যাটিং ভিডিও দেখতো। এমনকি ধোনি কিভাবে উইকেটকিপিং করে, সেটাও সে রপ্ত করতো।’

২০১৮ সালে একটা উইকেটরক্ষকদের বিশেষ ক্যাম্পে ঈশান কিষাণের সাথে কাজ করেছিলেন কিরণ মোর। উইকেট কিপিং কিংবা ব্যাটিংয়ে, ঈশান কিষাণ যে কতটা অনন্য, তা একদম সামনে থেকে দেখেছেন এ কোচ। সেই ক্যাম্পের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন,’ঈশান যেটা করে, সেটা ওর নিজের মতো করেই। আর এটাই ওর সবচেয়ে বড় শক্তি। আমি ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমির ঐ ক্যাম্পে সানজু স্যামসনকেও পেয়েছিলাম। তবে ঈশান কিষাণের মধ্যে একটা ব্যাপার আছে। ও খুবই এথলেটিক। বয়সের তুলনায় তাঁর স্কিল ছিল দুর্দান্ত।’

এবারের এশিয়া কাপে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ভারত যখন রীতিমত ধুঁকছে, তখন দলের ত্রাতা হয়ে হাজির হন ঈশান কিষাণ। ৮১ বলে ৮২ রানের ইনিংস খেলে দলকে নিয়ে যান লড়াই করার মতো এক সংগ্রহের পথে।

মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের সহকারী ব্যাটিং কোচ অরুণকুমার অবশ্য ঈশান কিষাণের এমন ইনিংসে অবাক হননি। কারণ তাঁর মতে, দলের বিপদে ঈশানের বেশ কিছু দারুণ ইনিংসের সাক্ষী তিনি। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এমন ইনিংস বহু দেখেছি ওর কাছ থেকে। ও শট খেলার যেভাবে চোখের কো-অর্ডিনেশন করে, তা দুর্দান্ত। সে ঠান্ডা মেজাজী। তবে ওর ইনিংস গুলো হয় পাওয়া হিটারদের মতো। ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য সে বড় এক সম্পদ। তবে কেবল তো শুরু, এখনও তাঁর পথচলা অনেক বাকি।’

অরুণকুমার অবশ্য যথাযথই বলেছেন। ভারতের হয়ে সব মিলিয়ে ৫০ টা ম্যাচ খেলা ঈশান কিষাণের এই তো শুরু। শৈশবের আইডল ধোনির পদচ্ছাপ অনুসরণ করলে ভারতের হয়ে তাঁকে যেতে হবে বহুদূর। ঈশান কিষাণ নিশ্চয় বাইশ গজের কীর্তিতে নিজেকে সেই অসীম সীমানাতেই নিয়ে যেতে চাইবেন।

 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link