এক সময় ছিলেন লম্বা চুলের এক ‘র’ ফাস্ট বোলার। সে সময় খুব কম লোকই মনে করেছিলো যে, তিনি থাকতে এসেছেন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় তিনি আজ পরিণত এবং সবচেয়ে অভিজ্ঞ। আজ তিনি সবচেয়ে বড় আস্থার নাম।
ইশান্ত শর্মা ভারতীয় টেস্ট বোলিং লাইন আপের অন্যতম সেরা ভরসা। আজকে কপিল দেবের পর দ্বিতীয় ভারতীয় পেসার হিসেবে খেলতে যাচ্ছেন শততম টেস্ট। ইশান্ত শর্মার আগে মাত্র ১০ জন পেসার পেরেছেন শততম টেস্ট খেলতে ।
২০০৭ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক ইশান্ত শর্মার। তখন তাঁর অধিনায়ক হিসেবে ছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। এরপর তাঁর অধিনায়কের পালাবদল ঘটেছে কিন্তু পরিবর্তন হয়নি ইশান্ত শর্মার অবস্থান। রাহুল দ্রাবিডের পর অধিনায়ক হিসেবে এসেছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি,ভিরাট কোহলি এবং অজিঙ্কা রাহানে। প্রত্যেক অধিনায়কের আস্থার প্রতিমূর্তি হিসেবে ছিলেন ইশান্ত শর্মা।
ইশান্ত শর্মার রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক ২০০৬ সালে দিল্লির হয়ে। দিল্লির হয়ে একই ম্যাচে অভিষেক হয়েছিলো তার জাতীয় দল অধিনায়ক বিরাট কোহলির। রঞ্জি থেকে জাতীয় দলে আসতে সময় নেননি ইশান্ত শর্মা।
২০০৬-০৭ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে দলে ডাক পেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহুর্তে নির্বাচকরা দল থেকে বাদ দিয়ে দেয় তাঁকে। কিন্তু এর পরও জাতীয় দলে আবার ডাক পেতে সময় নেননি তিনি। ২০০৭ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে পেসার মুনাফ প্যাটেলের জায়গায় জাতীয় দলে ডাক পান তিনি। বাংলাদশের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অভিষেক হয় তাঁর। এই ম্যাচে মাত্র তিন ওভার বোলিং করার সুযোগ পান তিনি। তিনি তিন ওভার বোলিং করে উইকেট শুন্য থাকলেও এক ওভার মেইডেন দিয়েছিলেন।
ইশান্ত ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ছিলো ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে দূর্দান্ত বোলিং। পার্থে মাত্র ১৯ বছর বয়সে দূর্দান্তভাবে পরাস্ত করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক রিকি পন্টিংকে। এছাড়া মোট ৭ ইনিংসে ৬ বার রিকি পন্টিংকে আউট করেছেন ইশান্ত শর্মা।
২০০৮ সালে ভারতের হয়ে ১৩ টেস্টে ৩৮ নেন ইশান্ত শর্মা। ২০০৯ এবং ২০১০ সালে ভারতের হয়ে ১৫ টেস্ট খেলে ৪৩ উইকেট নেন তিনি। কিন্তু এর পরের দুই বছর নিজের পারফর্মেন্সের ছিটেফোটাও দেখাতে পারেন নি তিনি। নিজের এই হতশ্রী পারফর্মেন্সের কারণে ২০১১ সালের ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে নিজেকে দল ঢুকাতে পারেননি তিনি। কিন্তু বিশ্বকাপের সময় পরিশ্রম এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফর্ম করে আবারো জাতীয় দলে ফেরেন ইশান্ত শর্মা।
২০১১ সালে ১২ টেস্টে নেন ৪৩ উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্টে ২২ উইকেট নিয়ে হন সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। কিন্তু অ্যাংকেলের চোটের কারণে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় দলে নিয়মিত হতে পারেননি ইশান্ত শর্মা।
অনিয়মিতভাবে খেলেও প্রতি ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রতি ৬৪ বলে একটি করে উইকেট নেন। কিন্তু ইনজুরি কাটিয়ে জাতীয় দলে নিয়মিত হবার পর ২০১৮ সাল থেকে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬ বল।
বর্তমান সময়ের যেকোনো পেসারের থেকে দূর্দান্ত খেলছেন ইশান্ত শর্মা। পরিসংখ্যানের দিক থেকে কাগিসো রাবাদা, জশ হ্যাজলেউড, ট্রেন্ট বোল্টের থেকে ভালো অবস্থায় আছেন তিনি।
ভারতীয় টেস্ট দলে নিয়মিত হলেও রঙ্গিণ পোষাকে এখনো নিয়মিত হতে পারেন নি এই ৩২ বছর বয়সী পেসার। রঙিণ পোষাকে খুবই কম ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ওয়ানডেতে মাত্র ৮০ ম্যাচ খেলে ১১৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। আর টি-টোয়েন্টিতে জাতীয় দলের মাঠে নামতে পেরেছেন মাত্র ১৪ বার। এই ১৪ ম্যাচে শিকার করেছেন মাত্র ৮ উইকেট।
টেস্টে ইশান্ত শর্মার রেকর্ড বেশ ভালো। আজকের আগ পর্যন্ত ৯৯ টেস্টে শিকার করেছেন ৩০২ উইকেট। এখানে বোলিং গড় ৩২.২২ এবং একটি উইকেটের জন্য করেছেন ৬০ টি বল।
এখন যে ফর্মে আছেন এবং ফিটনেসের যে অবস্থা তাতে বলাই যায়, ভারতের হয়ে পেসার হিসেবে সর্বোচ্চ সংখ্যক টেস্ট খেলে ফেলবেন তিনি। যদিও তার আপাতত লক্ষ্য টেস্ট চাম্পিয়নশীপের ফাইনাল। কারণ তাঁর জন্য এটিই বিশ্বকাপ এবং এটি বিশ্বকাপের শিরোপার সমান মর্যাদাপূর্ণ।