ধোনি গল্পের অন্য অধ্যায়

২০১১ বিশ্বকাপ ভারতের জন্য স্বপ্নের এক টুর্নামেন্ট। প্রতিটা ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তের মনে গেঁথে আছে যে টুর্নামেন্ট। মহেন্দ্র সিং ধোনির হাত ধরে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মত শিরোপা জয় করে ভারত।

ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের হাতছানি। শচীনের শেষ বিশ্বকাপ আসর। শচীন টেন্ডুলকার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সবকিছু অর্জন করেছিলেন – স্রেফ ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাদে। ১৯৮৩ বিশ্বকাপের পর ২৮ বছর বিশ্বকাপ জয় থেকে বঞ্চিত ছিল ভারত। কিন্তু সেবার পুরো আসর জুড়ে দাপট দেখিয়ে ফাইনালে পৌঁছে যায় শচীন-শেবাগরা।

ওই আসরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড। রোমাঞ্চকর এক লড়াইয়ে ম্যাচের ফলাফল হয় ‘টাই’। শ্বাসরুদ্ধকর শেষ ওভার; সোয়ান-শাহজাদদের ম্যাচ বাঁচানো ব্যাটিংয়ে সেদিন ব্যাঙ্গালুরুতে ক্রিকেটপ্রেমীরা সাক্ষী হয়েছিল টান টান উত্তেজনার এক ম্যাচের।

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শচীনের সেঞ্চুরি আর গৌতম গম্ভীর, যুবরাজ সিং’য়ের ফিফটিতে ৩৩৮ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় ভারত। জবাবে বিশাল লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসের দেড়শোতে এক পর্যায়ে ইংলিশদের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ২৮১ রান।

শেষ ৪৫ বলে ইংলিশদের প্রয়োজন ছিল ৫৮ রানের, হাতে ৮ উইকেট। ম্যাচ পুরোপুরি তখন ইংল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু এরপরই পাল্টে যায় ম্যাচের চিত্র। পর পর দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচের মোড় পাল্টে দেন পিযুষ চাওলা। সেখান থেকে পরের ৬ ওভারে আরও ৩ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় ইংল্যান্ড। এরপর গ্রায়েম সোয়ান ও আজমল শাহজাদের ব্যাটে আবার ম্যাচে ফেরে ইংলিশরা।

সেই ম্যাচের শেষ মুহূর্তের শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ের স্মৃতিচারণ করেছেন সাবেক ইংলিশ তারকা স্পিনার গ্রায়েম সোয়ান।সেই ঘটনার স্মৃতিচারণ করে এক সাক্ষাৎকারে সোয়ান বলেন, ‘একটা সময় আমরা সহজ জয়ের পথেই ছিলাম এবং ড্রেসিং রুমে মজা করছিলাম যে ভারত ২০ রান কম করেছে। তারপরই পিযুষ চাওলা টানা দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এরপর তো মনে হল আমরা ম্যাচটা জিততে পারবো না। বোলারদের কাঁধে তখন মূল দায়িত্ব। আমি ব্যাট করতে নেমে চাওলাকে একটা ছক্কা হাঁকালাম। সেই ছক্কাতেই আবার ম্যাচে ফিরি। আমাদের জয়ের জন্য তখনও ১৪ রানের প্রয়োজন। এরপর এজে (আজমল শাহজাদ) ব্যাট করতে নেমে আমার মাথার উপর দিয়ে ছক্কা মেরে দিল।’

৩০৭ রানে ৭ উইকেট থেকে ব্রেসনানের ৯ বলে ১৪ ও সোয়ানের ব্যাটে জয়ের আশা জাগে ইংলিশদের। ৪৯ তম ওভারের শেষ বলে ব্রেসনান ফিরলে শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৪ রানের। সেখান থেকে শেষ ৩ বলে দরকার ছিল ১১ রানের। ম্যাচে তখন ইংলিশদের হার প্রায় নিশ্চিত। এরপরই মুনাফ প্যাটেলকে মাথার উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জমিয়ে দেন শাহজাদ।

সোয়ান বলেন, ‘আমাদের তখনও ১৪ রানের প্রয়োজন। আজমল শাহজা ব্যাটিংয়ে আসল। আমি বললাম, আমরা আমাদের সেরাটা দিব। আর সে নিজের খেলার প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকালো সোজা আমার মাথার উপর দিয়ে। আমি নিজেও যেন বিশ্বাস করতে পারিনি।’

শেষ ২ বলে ৪ রান। পরের বলে অনেকটা চুরি করেই দুই নিলেন সোয়ান! এতেই যেন ফিল্ডারের উপর ক্রুদ্ধ হয়ে যান ধোনি। ধোনির এমন রূপ সচরাচর দেখাই যায় না।

সোয়ান বলেন, ‘শেষ দুই বলে প্রয়োজন ছিল চার রানের। আমরা পরের বলে দুই রান নিলাম; আসলে সেখানে দুই হওয়ার কথা না। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি এতেই ধোনি ক্ষুব্ধ হয়ে যান। ফুলার লেন্থে করা শেষ বলটা ড্রাইভ করি, কভারের ফিল্ডার ঝাপিয়ে পড়ে বল ঠেকানোয় একের বেশি রান নেওয়া সম্ভব হয়নি।’

সোয়ান ও শাহজাদের ব্যাটে শেষ পর্যন্ত টাই নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইংলিশরা। শেষ বলেও জয়ের আশা জাগিয়েছিল ইংল্যান্ড। তবে ইউসুফ পাঠানের দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে ম্যাচ টাই হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link