আলো জ্বেলে স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায়

গ্রুপ পর্বে সবসময়ই সফল দল দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রতি বিশ্বকাপেই গ্রুপ পর্বে একেবারে চ্যাম্পিয়নদের মতই ক্রিকেট খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এবার বিশ্বকাপ শুরু হবার আগে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে খুব কম মানুষই বাজি ধরেছেন। হয়তো আরব আমিরাতের কন্ডিশন এখানে একটা বড় ফ্যাক্টর ছিল। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিন আক্রমণটা বেশ শক্তিশালী ছিল।

তবে টুর্নামেন্ট যত গড়িয়েছে ততই নিখুঁত ক্রিকেট খেলেছে প্রোটিয়ারা। রাবাদা-শামসিদের বোলিং লাইন আপ আরব আমিরাতে ঝড় তোলার জন্য যথেষ্টই ছিল। ফলে একটা সময় মনে হচ্ছিল বি গ্রুপ থেকে সেমি ফাইনালে যাওয়ার জোর দাবিদার দক্ষিণ আফ্রিকা। অথচ গ্রুপ পর্বের পাঁচ ম্যাচের চারটিতে জিতেও বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে প্রোটিয়াদের। এটাকে শুধু দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কীই বা বলা যায়।

গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে শক্তিশালী ইংল্যান্ড দলকেও হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ইয়োন মরগ্যানের দলকে ১০ রানে হারিয়েও সেমি ফাইনালে জায়গা করে নিতে পারেনি তাঁরা। কেননা অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডও জিতেছিল চারটি করে ম্যাচ এবং নেট রান রেটে তাঁরা এগিয়ে ছিল প্রোটিয়াদের থেকে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ মিশন নিয়ে তাঁদের হেড কোচ মার্ক বাউচার বলেন,’ এটাকে কোনভাবেই সফল বলা যায় না। কেননা আমরা গ্রুপ পর্ব থেকেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। আমাদের বাদ পড়াটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক ও হতাশার। আমার মনে হয় আমরা পুরো বিশ্বকাপেই দারুন ক্রিকেট খেলেছি। প্রথম মাচে হেরে যাওয়ার পর অনেক চাপ নিয়েও আমরা ঘুরে দাড়িয়েছি।‘

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নামে প্রোটিয়ারা। তবে শুরুটা দারুণ হয়েছিল। ইংল্যান্ডের সামনে ১৯০ রানের বিশাল টার্গেট দেয় তাঁরা। তবে সেমিতে যেতে হলে শুধু জিতলেই হতো না বরং ১৩০ রানের মধ্যে আটকাতে হতো ইংল্যান্ডকে। তাহলেই নেট রান রেটে এগিয়ে সেমিফাইনাল খেলতে পারতো দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে জবাবে ইংল্যান্ডও বেশ ভালো ব্যাটিং করে। ১০ রানে ম্যাচ হারলেও ১৭৯ রান করে নিজেদের সেমি নিশ্চিত করেছে ইংল্যান্ড।

জেতার পরেও বাড়ি ফিরে যেতে হওয়ায় বাউচার বলেন,’ আমাদের জন্য ড্রেসিং রুমে বেশ কঠিন একটা দিন ছিল। আমাদের খুব কঠিন একটা সমীকরণের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তবে যেটুকু আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল আমরা সেটুকুতেই নজর দেয়ার চেষ্টা করেছি। তবে বাইরের অনেক কিছুই আমাদের পক্ষে ছিল না।‘

ওদিকে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১১৮ রান করেও অস্ট্রেলিয়াকে প্রায় আঁটকে দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই ম্যাচটাও দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আসতে পারতো। সেই ম্যাচ নিয়ে বাউচার বলছিলেন,’ ওই ম্যাচে আমাদের পিচ পড়তে ভুল হয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম এটা ১৬০ রানের পিচ। কিন্তু ১৩০-১৪০ রান সেখানে ভালো স্কোর ছিল।‘

এছাড়া বাংলাদেশের বিপক্ষেও নেট রান রেট বাড়িয়ে নেয়ার বড় সুযোগ ছিল তাঁদের। মাত্র ৮৫ রান তাড়া করতে নেমেও ১৩.৩ ওভার ব্যাট করেছিল তাঁরা। সেদিন ৮ ওভারের মধ্যে ম্যাচ শেষ করতে পারলেও হয়তো ভিন্ন চিত্র হতে পারতো দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ ক্যাম্পেইনে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে বাউচার বলেন, ‘বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে হয়তো আমরা আরেকটু আক্রমণাত্মক হতে পারতাম। তবে আমরা দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে ফেলেছিলাম। ফলে আমাদের এরচেয়ে বেশি রিস্ক নেয়া সম্ভব ছিল না।’

সেমিফাইনাল না খেলতে পারলেও গ্রুপ পর্বের চারটা ম্যাচই দারুণ ভাবে জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। নেট রান রেটের কারণে বাদ পড়াটাকে দুর্ভাগ্য হিসেবেই মেনে নিতে হচ্ছে। এছাড়া ক্রিকেটাররা মাঠে যেভাবে খেলেছেন সেটা নিয়ে মার্ক বাউচারও খুশিই। শুধু ভাগ্যকে মেনে নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে প্রোটিয়াদের।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link