ব্যাঙ্গালুরুতে গোলাপি বলের টেস্ট। প্রথম ইনিংসে লঙ্কান স্পিনারদের দাপটে শ্রেয়াস আইয়ার ছাড়া কেউই থিতু হতে পারেননি। বাকিদের দমাতে পারলেও আইয়ারের সামনে স্পিন ভেলকি দেখাতে পারেননি প্রাভিন জয়াবিক্রমা, লাসিথ এম্বুলদানিয়া, ধনঞ্জয়া ডি সিলভারা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাকিরা ব্যর্থ হলেও ব্যাট হাতে উজ্জ্বল ছিলেন শ্রেয়াস আইয়ার। শেষ উইকেটে জয়াবিক্রমার বলে স্টাম্পিং হবার আগে ৯৮ বলে খেলেন ৯২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। স্পিনারদের বিপক্ষে তিনি বরাবরই নিজেকে সেরা হিসেবে প্রমাণ করে আসছেন। ব্যাঙ্গালুরুর টার্নিং উইকেটে লঙ্কান স্পিনারদের সামনে বাকিরা নড়বড়ে হলেও বেশ সাবলিল ভাবেই ব্যাটিং করেছেন ভারতের এই নব্য তারকা।
৪ ছক্কা ও ১০ চার হাঁকান আইয়ার। তবে সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৮ রান দূরে থাকতে আউট হন তিনি। এমন টার্নিং উইকেটে আইয়ারের দুর্দান্ত ইনিংসটি ভারতকে জয়ের ভীত গড়ে দেয়। সাবেক ক্রিকেটার সহ সমর্থকদের প্রশংসায় ভাসছেন আইয়ার।
আইয়ার বলেন, ‘যখন আমি ড্রেসিং রুমে বসা ছিলাম। প্রতি ওভারেই ড্রামা হচ্ছিলো। অনেক থ্রিল ছিলো। আমি প্রথম পাঁচ বল যে খেললাম, সত্যি খুব কঠিন ছিলো। এটা ছিলো চা বিরতির আগে শেষের আগের ওভার। আমি খুভ নার্ভাস ছিলাম। আমি শুধু চাচ্ছিলাম কোনোভাবে এই দুই ওভার টিকে থাকতে। কারণ আমি জানি এরপর আমি কি করতে পারবো।’
২০১৫ এর শুরুতে রঞ্জি ট্রফিতে জয় বিষ্টর সাথে জুটি বেঁধে টার্নিং উইকেটে চতুর্থ উইকেটে স্পিনারদের বিপক্ষে দুর্দান্ত ব্যাট করে দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন শ্রেয়াস। স্পিনারদের বিপক্ষে দিন দিন আরও দুর্দান্ত হয়ে উঠছেন এই ভারতীয় তারকা।
ব্যাঙ্গালুরুতে প্রথম ইনিংসে লেফট আর্ম স্পিনারদের বিপক্ষে বলের লাইনে খেললেও স্কিড করা বলগুলো ডিফেন্স করেন এই ডান হাতি ব্যাটার। যার কারণে বেশ টার্ন পাওয়া সত্ত্বেও আইয়ারকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলতে পারেননি লঙ্কান স্পিনাররা। আইয়ারের হিটিং জোনে জয়াবিক্রমার দু’টি বল টার্ন করালেও সেখান থেকে উঠিয়ে কাউ কর্ণার দিয়ে দুই ছক্কা হাঁকান আইয়ার!
ক্রিকবাজের রেকর্ড অনুযায়ী আইয়ার মাত্র ১৩টি বল ডিফেন্স করেছেন, বাকি সব বলেই তিনি রান বের করার জন্য খেলেছেন। প্রথম ইনিংসে ভারত দুইশো রান পার করার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিলো শ্রেয়াস আইয়ার ও ঋষাভ পান্তের।
অবশ্য দুই লঙ্কান স্পিনারও যোগ্য সাপোর্টটাই দিয়েছেন! হাফ ভলি, ফুল টস, লো ফুল টসের ছড়াছড়িতে বেশ কিছু বাউন্ডারি সহজেই আদায় করে নেন পান্ত-আইয়াররা। এমন টার্নিং উইকেটে স্পিনারদের এই লুজ বলগুলোর কারণেই প্রথম ইনিংসে বেশ ভালো সংগ্রহ পায় ভারত। এছাড়া বেশ কিছু হাফ চান্সকে ক্যাচে পরিণত করতে না পারা ব্যর্থতাও ভুগিয়েছে লঙ্কানদের!
প্রথম ইনিংসে ৯২ রানের অসাধারণ ওই ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও স্পিনারদের বিপক্ষে দাপট দেখিয়ে ৬৭ রানের আরেকটি অসাধারণ ইনিংস উপহার দেন আইয়ার। স্পিনারদের দাপটের সামনে দুই ইনিংসেই ঢাল হয়ে দাঁড়ায় আইয়ারের ব্যাট।
আইয়ারের ৯২ রানে প্রথম দিনেই প্রথম ইনিংসে ২৫২ রানে থামে ভারত। জবাবে ব্যাট করতে নেমে জাসপ্রিত বুমরাহর পাঁচ উইকেট শিকারে মাত্র ১০৯ রানে শেষ লঙ্কানরা। ১৪৩ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে আইয়ার ও পান্তের রেকর্ডগড়া ফিফটিতে ৯ উইকেটে ৩০৩ রানে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত।
পরের দিনের খেলা শুরু হতে না হতেই আরেক সুসংবাদ পেয়ে গেলেন আইয়ার। তিনি আইসিসির মাস সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন। তাই বলাই যায়, সময় এখন আইয়ারের।