ইংল্যান্ডের ‘বাঁহাতি’ স্পিন ভরসা

ইংল্যান্ডের জন্য বাঁহাতি স্পিনার যেন অমাবস্যার চাঁদের মতই। কালেভদ্রে ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে দেখা মিলেছে বাঁহাতি স্পিনারদের। সাবেক তারকা অ্যাশলে জাইলসের পর মন্টি পানেসার, এরপর গেল দশ বছরে বাঁহাতি স্পিনার বলতে একজনই এসেছেন – জ্যাক লিচ।

বছর কয়েক ধরে টেস্টে ইংলিশদের অনেকটাই নিয়মিত মুখ তিনি। মন্টির পর ইংল্যান্ডের হয়ে গেল দশ বছরে বাঁহাতি স্পিন টার্মটা যেন তিনিই শুধু বাঁচিয়ে রেখেছেন। বল হাতে দ্যুতিও ছড়াচ্ছেন সুযোগ পেলেই।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাটিতেও বল হাতে দুরন্ত গতিতে ছুঁটছেন লিচ। লর্ডসে প্রথম টেস্টে দূর্ভাগ্যবশত মাথায় আঘাত পেয়ে ছিটকে যান কনকাশন সাবে। পুরো সিরিজে খেলতে পারবেন কি-না সে নিয়েও ছিল সংশয়। অবশ্য সব সংশয় আর শঙ্কা কাটিয়ে দ্বিতীয় টেস্টেই দলে ফিরেন তিনি। ম্যাচে তিন উইকেট নিলেও খুব বেশি সুবিধে করতে পারেননি এই স্পিনার।

তবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন হেডিংলি টেস্টে। প্রথম ইনিংসে লিচ ঘূর্ণিতে অলআউট হয় ব্ল্যাকক্যাপরা। ১০০ রানে শিকার করেছেন ফাইফর। পুরো ইনিংসেই দুর্দান্ত বোলিং করে নিউজিল্যান্ডকে দ্রুতই বেঁধে ফেলেন এই স্পিনার।

প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও মাত্র ৬৬ রানে শিকার করেন ক্যারিয়ার সেরা আরেকটি ফাইফর। লিচের দুর্দান্ত বোলিংয়ে স্বল্প রানের লক্ষ্যমাত্রা পায় ইংলিশরা। ১৯৭৪ সালের পর প্রথমবার ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্টে পর পর দুই ইনিংসে ফাইফরের রেকর্ড গড়েন লিচ। সবশেষ ১৯৭৪ সালে লর্ডসে ডেরেক আন্ডারউড পাকিস্তানের বিপক্ষে পর পর দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন।

এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদচারণা লিচের। ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট অভিষেক। এরপর প্রায় পাঁচ বছরে খেলেছেন ২৫ টেস্টে। অবশ্য নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছিলেন অল্পতেই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকের পরের সিরিজেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবার পাঁচ উইকেট শিকার করেন এই স্পিনার। পাল্লেকেলেতে ঘরের মাটিতে লঙ্কানদের ধরাশায়ী করেছিলেন লিচ।

এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গেল বছর গলে আবার ফাইফর শিকার করেন লিচ। ক্যারিয়ারে দুইবার পাঁচ উইকেটের দেখা পেলেও সেটি অবশ্য দেশের বাইরের মাটিতে। ঘরের মাটিতে ফাইফরের আক্ষেপটা তো ছিলই। বেশ কয়েকবার কাছে গিয়েও দেশের মাটিতে পাঁচ উইকেটের মাইলফলকে পা দিতে পারেননি তিনি।

এবার অবশ্য সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। তাও আবার অভিষেকে খেলা সেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে পর পর দুই ইনিংসেই ফাইফর! সেই সাথে ম্যাচে প্রথমবার দশ উইকেটের দেখা।

ইংল্যান্ডে সাধারণত ব্যাটিং কিংবা পেস সহায়ক উইকেটের দেখা মিলে। এশিয়ার বাইরে কন্ডিশনে নিয়মিত উইকেট নেওয়াটাও তাই স্পিনারদের জন্য কঠিন একটা চ্যালেঞ্জ। এই কাজটাই আবার সহজ হয়ে যায় এশিয়ার কন্ডিশনে। লিচ অবশ্য ঘরে এবং বাইরে দুই জায়গাতেই অনেকটা সমানতালে পারফরম করছেন। প্রায় ৩২ গড়ে দেশে ও দেশের বাইরে উইকেট শিকার করেছেন তিনি।

এশিয়ার কন্ডিশনে ইংল্যান্ডের জন্য টেস্টে তিনি নিয়মিত মুখ। তবে ঘরের মাটিতে ডম বেস, মঈন আলীদের কাছেও জায়গা হারিয়েছেন বেশ কয়েকবার। এখন অবশ্য ধীরে ধীরে টেস্ট দলে নিজের জায়গা পারফরম্যান্স দিয়েই পাঁকা করে ফেলেছেন।

ইংল্যান্ডের হয়ে অন্য ফরম্যাটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার সুযোগ হয়নি লিচে। আদিল রশিদ, মঈন আলীদের মত তারকারা থাকায় সহসাই সেই সুযোগ হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে টেস্ট ক্রিকেটকেই আপন করে আধিপত্য বিস্তার করে রঙিন পারফরম্যান্সে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন লিচ। জাইলস, মন্টির পর বাঁহাতি স্পিনে এখন ইংলিশদের আশা দেখাচ্ছেন এই স্পিনার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link