সুদীর্ঘ বাইশ বছর ধরে একজন মানুষ খেলে যাচ্ছেন ক্রিকেট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে শুরু করে প্রায় সম্ভাব্য সকল ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক দলের হয়ে মাঠ কাঁপানো বিশ্বক্রিকেটের এক তারকা রয়েছেন বিদায়ের দাঁড়প্রান্তে। বিদায় তিনি এখনও ঘোষণা করেননি। তাঁর মনের গহীন কোণে থাকা সুপ্ত এক বাসনা মিটাবেন বলেই হয়ত তিনি ইতি টেনে শেষ করেননি ক্রিকেট প্রাঙ্গণে তাঁর পথচলা। অপেক্ষায় রয়েছেন ঘরের মাটিতে শেষ একটি ম্যাচ খেলে চলে যাবেন অবসরে। মানুষটি ক্রিস গেইল – ক্রিস্টোফর হেনরি গেইল।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গেইলের পথ চলা শুরু বিংশ শতাব্দীর শেষ বছরে। ১৯৯৯ সালে ক্যারিবিয়ান দীপপুঞ্জের প্রতিনিধিত্ব করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের হয়ে অভিষেক ঘটে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচের মধ্যে দিয়ে। বাইশটা বছর তিনি কাটিয়ে দিলেন ক্রিকেটের বাইশ গজে। এ সময়ে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন ৩০১ টি, টি-টোয়েন্টি ৭৯ টি, টেস্ট ১০১ টি।
সদ্য সমাপ্ত হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই গুঞ্জন উঠেছিল গেইলের অবসরের। তবে তা বিলম্বিত হয় গেইলের নিজের ঘরের মাঠে ঘরের দর্শকদের সামনে বিদায় নেবার সুপ্ত বাসনার কারণে। তিনি চান জামাইকার সাবিনা পার্ক স্টেডিয়ামে দর্শকে ভরা এক গ্যালারিতে তিনি নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি খেলবেন। তাঁর এই ইচ্ছে পূরণে সাড়া দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ (সিডব্লিউআই)।
বোর্ডের প্রধান নির্বাহী জনি গ্রেভ আভাস দিয়েছেন যে আগামী জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষের টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হতে পারে গেইলের আশা পূরণের ম্যাচ। কিন্তু বোর্ড সভাপতি রিকি স্কেরিট একটু ভিন্ন সুর ধরে বললেন, ‘আমরা তাঁর(গেইলের) এই সুপ্ত বাসনা নিয়ে চিন্তা করছি এবং তাঁকে আমরা তাঁর মতো করেই বিদায় দিতে চাই। কিন্তু সবকিছুই এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আমরা এখনও চূড়ান্ত কোন সিধান্ত নেইনি ভেন্যু, সময় ও ফরম্যাট বিষয়ে।’
কিন্তু সিইও গ্রেইভ তাঁর দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘জানুয়ারীর দ্বিতীয় সপ্তাহে আমরা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে ও তারপর সাবিনা পার্কে একটি টি-টোয়েন্টি খেলতে চলেছি। আমি মনে করে সেটাই খুব সম্ভবত হতে পারে একটি সুবর্ণ সুযোগ ঘরের মাঠে গেইলকে বিদায় জানানোর, যদি সমর্থকদের স্টেডিয়ামে প্রবেশের অনুমতি মেলে।’ তবে বোর্ড সভাপতি রিকি স্কেরিট মনে করেন অধিকাংশ সংবাদ কর্মী থেকে শুরু করে সমর্থকরা গ্রেইভের কথার ভুল ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছে। স্কেরিটের মতে কোন কিছুই এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয়।
অভিজ্ঞতায় ভরপুর গেইলের নামের পাশে রয়েছে ১৯৫৫৩ রান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব ফরম্যাট মিলিয়ে প্রায় বিশ হাজার রানের কাছে পৌঁছে যাওয়া এই দানবীয় ব্যাটার সবসময় চেয়েছেন তাঁর ভক্ত-সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়েই কেবল মাঠ ছাড়বেন। সদ্য সমাপ্ত হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে যখন গুঞ্জন উঠেছিলে এই কিংবদন্তির বিদায়ের তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এখন অবসরের ঘোষণা দেইনি। যদি তাঁরা আমাকে জামাইকাতে আমার ঘরের মাঠের দর্শকদের সামনে একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ দেয়। তাহলে আমি আমার দর্শকদের বলবো – হেয় গাইজ থ্যাঙ ইয়্যু সো মাচ।’
এই কিংবদন্তির বিদায় বেলায় তাঁর ইচ্ছেটা অন্তত পূরণ হোক। আর আবুধাবি টি-টেন লিগে তাঁর ব্যাটিং ঝড় প্রমাণ করে ছন্দেই আছেন তিনি। সাধারণ দর্শক কিংবা সমর্থক হিসেবে প্রত্যাশা এতটুকুই।