নব উদ্দ্যমে পরাশক্তি ধরাশায়ী

বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় আপসেট! হয়ত, তবে শুরুর দিনেই এমন বড় এক ধাক্কার জন্য প্রস্তুত ছিল না ক্রিকেট বিশ্ব। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের  বিশ্বকাপের একবারের চ্যাম্পিয়ন দল শ্রীলঙ্কা। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁরা আবার ভারত-পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে হয়েছে এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন। সেই দলটাকেই নাকি ধরাশায়ী করে দিল সহযোগী দল নামিবিয়া। আর সেই অভিযানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন নামিবিয়ার অলরাউন্ডার জ্যান ফ্রাইলিঙ্ক।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসর। স্বাগতিক দেশ অস্ট্রেলিয়া। প্রথম রাউন্ডের প্রথম ম্যাচ, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। সে ম্যাচে নামিবিয়ার প্রতিপক্ষ অভিজ্ঞতায় ঢের এগিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কা। টসে জিতে শ্রীলঙ্কা বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। আর লংকান বোলাররা পরিকল্পনামাফিক শুরু থেকেই চেপে ধরতে শুরু করে নামিবিয়ার টপ অর্ডারকে। পাওয়ারপ্লেতেই তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে আইসিসির সহযোগী দেশটি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বড় দলগুলোর সাথে নিয়মিত খেলতে না পারার ফলাফলটা স্পষ্ট।

তবে কে জানত অভিজ্ঞতার কাছে জিতে যাবে অদম্য সাহসিকতা? সেই সাহসিকতার মূর্তি হয়েই সামনে এলেন দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া জ্যান ফ্রাইলিঙ্ক। পাশার দান পুরোপুরি উল্টে দেন ফ্রাইলিঙ্ক। তিনি একা হাতেই হারিয়ে দিলেন একবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে জন্মেছিলেন ফ্রাইলিঙ্ক। পড়াশুনা থেকে শৈশবের দুরন্তপনায় মিশে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাছাড়া ক্রিকেটের হাতেখড়িও সেই দেশটিতেই।

দক্ষিণ আফ্রিকার বয়সভিত্তিক ক্রিকেটেও ছিলেন তিনি নিয়মিত। এমনকি খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলেও। তবে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা শুরু করেন নামিবিয়ার জার্সি গায়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটকে ঘিরে নানা রকমের বিতর্ক রয়েছে। সেসব কারণেই হয়ত ২৮ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার খুঁজে নিয়েছেন নতুন ঠিকানা, নিজের স্বপ্ন জয়ের।

আর সে ঠিকানা ধরেই তিনি যেন ছুটছেন অদম্য গতিতে। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের প্রথম ম্যাচসেরার পুরষ্কারটা তাঁর হাতেই গেল। মূলত একজন বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবেই তিনি জায়গা করে নিয়েছিলেন নামিবিয়ার জাতীয় দলে। ২০১৯ এর এপ্রিল মাসে ওয়ানডে ফরম্যাট দিয়ে নামিবিয়ার সাথে তাঁর যাত্রা শুরু। পরের মাসেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। ওয়ানডে অবশ্য খেলেছেন কম। বোলিংয়ে বেশ সংযত আর উইকেট নিতে পারেন সময়মত, তাই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেই প্রাধান্যটা বেশি পেয়েছেন ফ্রাইলিঙ্ক।

এদিন অবশ্য একজন যোগ্য অলরাউন্ডার হিসেবেই তিনি দলকে সহয়তা করে গিয়েছেন ব্যাটে আর বলে। প্রথমত ব্যাট হাতে খেলেন ৪৪ রানের ঝড়ো এক ইনিংস। মাত্র ২৮ বল খরচ করেন তিনি। তাঁর দ্রুতগতির ইনিংসটাই নামিবিয়াকে লড়াই করার রসদ জোগানে এগিয়ে দেয় অনেকটা পথ। শেষ দিকে আবার জনাথন স্মিট ঝড় তোলেন স্বল্প সময়ের। এরপরই ১৬৩ রানে লড়াকু পুঁজি পায় নামিবিয়া। এরপরের কাজটা ছিল বোলারদের। সেখানেও অবশ্য ফ্রাইলিঙ্ক রেখেছেন নিজের অবদান।

লংকান অধিনায়ক দাসুন শানাকার উইকেট সহ তুলে নেন আরও একটি উইকেট। রান খরচের বেলায়ও ছিলেন বেশ কিপটে। চার ওভার হাত ঘুরিয়ে রান দিয়েছেন মাত্র ২৬। তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন দলের বাকিরাও। সবকিছুর মিশেলে লংকান ব্যাটাররা নিজেদের আর থিতু করতে পারেনি বাইশ গজে। এক ওভার বাকি থাকতেই ১০৮ রানে গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। ফলশ্রুতিতে ৫৫ রানের বিশাল জয় পায় নামিবিয়া।

জ্যান ফ্রাইলিঙ্ক আবারও প্রমাণ করলেন সহযোগী দেশগুলোর বড় ম্যাচের চাপ সামলানোর অভিজ্ঞতা হয়ত নেই, তবে ম্যাচ জয়ের মানসিকতার বিন্দুমাত্র অভাব নেই। তাঁরা চাইলেই যেকোন পরাশক্তির সাথে টক্করটা দিতে প্রস্তুত। সঠিক সময়ের অপেক্ষা শুধু। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের আগে ব্যাট হাতে খুব একটা উজ্জ্বল ছিলেন না। তবে দলের সবচেয়ে প্রয়োজনের মুহূর্তে জ্বলে উঠলেন ফ্রাইলিঙ্ক। নিজের ব্যাটার সত্ত্বার ঝলক দেখিয়ে দলকে শেষ পাঁচ ওভারে ৬৮ রান যুক্ত করতে সহয়তা করেন তিনি।

ফ্রাইলিঙ্কের চোখ ধাঁধানো ব্যাটিং আর কার্যকরী বোলিং শুভ সূচনা এনে দিয়েছে নামিবিয়া দলকে। এখন নিশ্চয়ই বড় টার্গেটই নির্ধারণ করতে চাইবে গোটা নামিবিয়া দল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link