‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে’ – তাঁকে দেখলেই প্রথমে এই লাইনটা মাথায় আসে। যদিও, জেসন হোল্ডারের ক্ষেত্রে ছড়াটার পরের অংশটাও সত্য – ‘সব গাছ ছাড়িয়ে উঁকি মারে আকাশে।’
উচ্চতা তাঁর ছয় ফিট সাত ইঞ্চি। এখনকার সময়ে সবচেয়ে লম্বা ক্রিকেটারদের একজন তিনি। অর্জন আর পারফরম্যান্সেও তিনি অন্য অনেকের চেয়ে এগিয়ে। সময়ের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার মনে করা হয় তাঁকে।
পুরো নাম জেসন ওমর হোল্ডার। বার্বাডোজে ১৯৯১ সালের পাঁচ নভেম্বর তাঁর জন্ম। শুধু দারুণ একজন অলরাউন্ডারই নন তিনি, নেতৃত্বগুণেও প্রশংসিত। মাত্র ২৩ বছর ৭২ দিন বয়সে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়কত্ব পান। ততদিনে খেলেছেন কেবল আটটি টেস্ট।
এত অল্প বয়সে প্রথম যখন ওয়ানডেতে ২০১৪ সালে অধিনায়কত্ব করতে নামেন হোল্ডার, গোটা বিশ্বে একটা চাপা বিস্ময় ছিল। বলাবলি হচ্ছিল, এই মৃদুভাষী তরুণ কি পারবে ক্যারিবিয়ান সিনিয়রদের সামলাতে? যদিও, বিস্মিত হননি ভিভ রিচার্ডস, ব্রায়ান লারা কিংবা টনি ক্রোজিয়াররা। তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন – এই ছোকড়া অন্য ধাতুতে গড়া!
২০১৫ সালে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিটা তিনি পান ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, আড়াই ঘণ্টার এক ইনিংসে – তাও আট নম্বরে নেমে। সেই ইনিংসের পর আর কখনোই হোল্ডারের মানসিক দৃঢ়তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি। তাঁর নেতৃত্বে দলের প্রথম টেস্ট হয় আসে ২০১৬ সালে, পাকিস্তানের বিপক্ষে শারজাহতে। সেখানে দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট পান হোল্ডার।
সে বছর দেশের মাটিতেও পাকিস্তানকে হারায় তাঁর দল। এবারও যথারীতি হাজির হোল্ডার, ছয় উইকেট নেন ৫৮ রানের ইনিংস খেলেন। বরাবরই অধিনায়ক হিসেবে দলের জয়ে সামনের থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন হোল্ডার।
তাঁর ব্যাপারে যেকোনো আলোচনাতে ২০১৯ সালের বিখ্যাত হেডিংলি টেস্টের প্রসঙ্গ আসতে বাধ্য। সেবার তিনি ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আট নম্বরে কিংবা তার পরে মেনে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করে। সেই সুবাদেই টেস্ট অলরাউন্ডারদের র্যাংকিংয়ে শীর্ষে ওঠেন তিনি।
যদিও, সীমিত ওভারে তাঁর নেতৃত্বটা আলোচিত হয়নি কখনও। তাঁর নেতৃত্বে ক্যারিবিয়ানরা ২০১৫ ও ২০১৯ – দু’টি বিশ্বকাপ খেলে। দু’টি আসরে ১৫ ম্যাচের মধ্যে মাত্র পাঁচটিতে জেতে তাঁরা। ফলে ২০১৯ বিশ্বকাপের পরই সীমিত ওভারের নেতৃত্ব হারান হোল্ডার।
জেসন হোল্ডারকে আইপিএলের প্রেক্ষাপটে ‘রূপান্তরের অনন্য নায়ক’ খেতাব দিয়ে দেওয়া যায়। ২০২০ সালের আইপিএলের কথাই ধরা যাক। ২০১৩ সালের আইপিএলে যে হোল্ডারকে দুই লাখ রুপিতে কিনেছিল চেন্নাই সুপার কিংস, সেই তিনি ২০১৬ সালের পর চার বছরের বিরতি দিয়ে খেলেন এবার এসে।
সেটাও স্রেফ ভাগ্যক্রমে।
নিলামে ছিলেন অবিক্রিত। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ দলে অস্ট্রেলিয়ান মিশেল মার্শের ইনজুরি না হলে হয়তো সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ডাকও আসতো না। ভারতীয় পেসার ভূবনেশ্বর কুমারের ইনজুরির পরও তাঁর দরজা খুললো না। তবে, কেন উইলিয়ামসনের চোটের পর আর তাঁকে আটকানো গেল না।
আর নেমেই তিনি হিট। প্রতি ম্যাচেই হয় রান পাচ্ছেন, না হয় উইকেট পাচ্ছেন। প্লে-অফের টিকেট শেষ বেলায় কোনোক্রমে যেভাবে সানরাইজার্স দল পেল তাতে হোল্ডারের অবদানটা বিরাট।
নিলামে তার ভিত্তি মূল্য রাখা হয়েছিল মোটে ৭৫ কোটি রুপি, অথচ তিনি টেস্টের সেরা অলরাউন্ডার। তারপরও তার প্রতি কেউ আগ্রহী হয়নি। আগুনটা বুকের মধ্যে হয়তো পুষেই রেখেছিলেন হোল্ডার। তিনি জবাব দিয়েছেন। জবাব দেওয়াটাতেই তো এই হোল্ডার অনন্য। অধিনায়কত্বের প্রশ্নে যেমন দিয়েছিলেন, দিলেন এবারও।